নিউজ ডেস্ক, ঢাকা: আমরা যারা ১৯৯০ সালের আশেপাশে সাংবাদিকতা শুরু করেছিলাম, তারা অধিকাংশ হয় শাহাদাৎ চৌধুরী, নাঈমুল ইসলাম খান, মিনার মাহমুদ বা মোজাম্মেল বাবু’র হাত ধরে সাংবাদিকতা শুরু করেছিলাম। আমার সাংবাদিকতা একেবারে শুরু শফিকুল ইসলাম ইউনূস ভাইয়ের সাপ্তাহিক ঢাকা’র মাধ্যমে।
কিন্তু এরপরপরই নাঈম ভাইয়ের সাপ্তাহিক খবরের কাগজ ও আজকের কাগজে। বাস্তবিক অর্থে তখন কিশোর বয়স। ঢাকা সিটি কলেজে পড়ি। সিটি কলেজের পাশে হাঁটার দূরত্বে সাপ্তাহিক খবরের কাগজ ও প্রকাশিত হচ্ছে হচ্ছে আজকের কাগজের অফিস। সকালে মনিং শিফটে কলেজ শেষ করে হেঁটে চলে যেতাম খবরের কাগজ ও আজকের কাগজ অফিসে।
ছোট ভাইয়ের মত স্নেহ পেয়েছি নাঈম ভাইয়ের। দেশে তখন নাঈম ভাইয়ের সাপ্তাহিক খবরের কাগজ, মিনার মাহমুদের সাপ্তাহিক বিচিন্তা, মোজাম্মেল বাবুর সাপ্তাহিক পূর্বাভাস ও শাহাদাৎ চৌধুরীর সাপ্তাহিক বিচিত্রা সবচেয়ে আলোচিত পত্রিকা। এরশাদের শাসনামলে নাঈম ভাই, মোজাম্মেল বাবু ও মিনার মাহমুদের পত্রিকার একাধিক সংখ্যা নিষিদ্ধ হয়।
মূলতঃ ঢাকার সকল উঠতি তরুণ সাংবাদিকদের আনাগোণা পত্রিকাগুলোকে কেন্দ্র করে। একটি পত্রিকায় একজনের একটি লেখা প্রকাশিত হওয়া মানে সারা সপ্তাহ ঘোরের মধ্যে কাটিয়ে পরের সপ্তাহে নাম ছাপানোর আকূল প্রতীক্ষা। সেসময়ে পত্রিকাগুলোতে কাজ করা তরুণরা আজ সংবাদপত্র জগতে প্রতিষ্ঠিত সাংবাদিক।
প্রতিটি পত্রিকা সকল তরুণগোষ্ঠী পড়ত। আর তাই প্রত্যেক তরুণের সাথে প্রত্যেক তরুণের সরাসরি যোগাযোগ ও বন্ধুত্ব ছিল। আজ শাহাদাৎ চৌধুরী ও মিনার মাহমুদ পরপারে। মোজাম্মেল বাবু ও নাঈম ভাই দু’জনে প্রতিষ্ঠিত মিডিয়া ব্যক্তিত্ব। মূলতঃ তরুণ সম্পাদক ও এই লেখক সাংবাদিক গোষ্ঠীর হাত ধরে পত্রিকা জগতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পূনর্জাগরণ ঘটেছিল। প্রতিটি পত্রিকা ও তরুণ সাংবাদিক গোষ্ঠী মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, গোলাম আজম ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে ছিলো আপোসহীন। মনে হয় সকল বিষয় এই সেদিনের ঘটনা কিন্তু পেছন ফিরে তাকিয়ে হিসেব করলে দেখি ত্রিশ থেকে চল্লিশ বছর পার হয়ে গিয়েছে।
সে সময়ের তরুণ সাংবাদিক সম্পাদকেরা প্রত্যেকে প্রত্যেকের আত্মার আত্মীয়। যে যেখানে থাকুক, যে অবস্থাতে থাকুক প্রত্যেকের জন্য প্রত্যেকের অভিন্ন অনুভূতি। সাংবাদিকতার বিষয়ে প্রত্যেকে প্রত্যেকের নাড়ি নক্ষত্র চেনেন। এদের একজনের সাথে আরেকজনের গল্প করা মানে মায়ের কাছে মামাবাড়ির গপ্পো করা। নাঈম ভাই, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব হওয়া মানে প্রত্যেকের নিজের মধ্যে সেটিকে ধারণ করার একই অনুভূতি। এখনো সে সময়ের সাংবাদিকতা শুরুর প্রত্যেকে কোথাও দেখা হলে কোন বাঁধাধরা গণ্ডির মধ্যে থাকেন না। মনের অজান্তে এক আত্মা এক অলোচনায় উপনীত হন। নাঈম ভাইয়ের প্রেস সচিবের নতুন কর্মক্ষেত্র সর্বাত্মক সফল হোক, এ প্রত্যাশা রাখি।
Leave a Reply