একটি ঘুরে দাড়ানোর গল্প সগৌরবে আমরা বলতে চাই। অবশেষে ঘোড়া এবং কলসি মার্কা বিপুল ভোটে জয়যুক্ত। অভিনন্দন , অভিনন্দন এবং অভিনন্দন। এ বিজয় সারা চুনারুঘাট এলাকার বঞ্চিত, নিপীড়িত জনগণের। ইতিহাস এভাবেই পুনর্লিখন এবং পুনর্নির্মাণ করতে হয়। জনগণ সৈয়দ লিয়াকত হাসান এবং চা কইন্যা খাইরুন আক্তারের প্রতি আবারো তাদের আস্থার উজ্জ্বল স্বাক্ষর রেখেছেন। মানুষ এবার তাদের সুসন্তানদের ঠিকই চিনেছেন। তারা জেনে গেছেন সময়ের প্রয়োজনে কখন ঘুরে দাড়াতে হয়।
কালো টাকা এবং পেশিশক্তির বিরুদ্ধে এই বিজয় একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে। জনগণ একসময় যে নির্বাচন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলো সেই নির্বাচনকেই তারা হৃতগৌরব ফিরিয়ে দিয়ে রীতিমতো একটি উৎসবে পরিণত করেছেন। সরকারের সদিচ্ছা থাকলে যে একটি নির্বাচনকে প্রাণৈশ্বর্যে ভরিয়ে তোলা অসাধ্যের কিছুই নয় আসন্ন উপজেলা নির্বাচন তার প্রমাণ।
দলীয় প্রভাবের উর্ধ্বে উঠে মানুষ যখন তাদের মতামত প্রকাশের সযোগ পায় তখন সুশাসন প্রতিষ্ঠার পথে দেশ এগিয়ে যায়। দেশের অগ্রগতিকে অপ্রতিরোধ্য করতে চাইলে সুশাসন জরুরী। আর সুশাসনের জন্য চলমান উপজেলা নির্বাচন একটি রোল মডেল হতে পারে। কেনোনা, দলীয় প্রভাবমুক্ত নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের অবাধ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা গেছে। অহেতুক প্রাণসংহরণ, সামাজিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির মতো পরিস্থিতি এড়ানো গেছে। বলা যেতে পারে কমিয়ে আনা গেছে।
আমরা মনে করি শুধু উপজেলাই নয়, ইউনিয়ন পরিষদ এবং জাতীয় নির্বাচনেও এই মডেল প্রয়োগে সুফল পাওয়া যেতে পারে। বিগত মহান জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় সমর্থন এবং প্রভাব বলয় শিথিল করায় অনেক তরুণ, ক্যারিশমাটিক নেতৃত্ব সৃষ্টি হয়েছে। জাতি অনেক ত্যাগী, সৎ, বিনয়ী, নিবেদিতপ্রাণ নেতাকে মহান জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করতে দেখতে পেয়েছেন। আসলে জনপ্রতিনিধিদের চারিত্র্য এমনই হওয়া উচিৎ। সমাজ থেকে ভালো মানুষের আধিপত্য একসময় নাই হয়ে যাওয়ায় রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন ঘটেছে।
কিন্তু ফের মানুষের জাগরণ ঘটায় ভালো মানুষের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার শুভক্ষণের সূচনা ঘটছে। শেষের কবিতা থেকে ধার করে বলছি, ভালো মানুষের আধিপত্য যখন না থাকবে তখনই দুর্বলের আধিপত্য শুরু হয়। দুর্বলের শাসন চলমান থাকায় আমরা অনেক রাজনৈতিক দুর্বত্তদের শাসন বাধ্য হয়ে মেনে নিয়েছি। জনগণের নিস্ক্রিয়তার সুযোগে এরা দুর্বৃত্তায়ন ঘটিয়ে রাজনীতিকে স্বীয় স্বার্থসিদ্ধির স্থান করে নিয়েছিলো, লাভ ও লোভ চরিতার্থ করার করার হাতিয়ার হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছিলো।
রাজনৈতিক দলের কার্ড পাওয়া মানেই যেনো একেকজন একেকটা কিংবা একাধিক এটিএম মেশিনের মালিক বনে যাওয়া, আলাদীনের চেরাগের মালিক হওয়া, দেশের সম্পদ বিদেশে পাচারের লাইসেন্স পাওয়া, দেশটাকে কেনাবেচায় টেন্ডারনেসকে উস্কে দেবার মওকা পাওয়া, জনসাধারণের অধিকারকে গলাটিপে হত্যা করা, জনগণের সম্পদ লুটেপুটে খেয়ে ফেলা। আমাদের দেশকে সিঙ্গাপুর নয়, সুইজারল্যান্ড বানানো সম্ভব। যদি সুশাসন প্রতিষ্ঠার পথে দেশ এগিয়ে যায়, ম্যুরাল হ্যাজার্ডকে দমন করা যায়। দেশের সম্পদ ও অর্থ পাচার রোধ করতে পারলে সোনার বাংলাদেশ আমরা গড়বোই গড়বো।
দেশের মোট জনগোষ্ঠীর ষাট শতাংশ তারুণ্যের জন্য একশন প্লান বা কর্মপরিকল্পনা যদি প্রণয়ন করা যায়, অর্থনীতির মূলস্রোতে ফেরানো যায়, উপযুক্ত কারিগরি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে যদি তাদেরকে কর্মমুখী এবং কর্মমুখর করা যায় তাহলে দেশ নিশ্চয় এগিয়ে যাবে। আমরা বেশ ক’বছর ধরে লক্ষ্য করছি মানুষের আত্মমর্যাদা বেড়েছে, নারীশিক্ষার হার বেড়েছে। সমাজ এবং রাষ্ট্রের সকল ক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ বেড়েছে। যেটি একটি ইতিবাচক পরিবর্তন বলেই মনে হচ্ছে। ক্ষুধা, দারিদ্র্য বিমোচনে জিও, এনজিওর পার্টনারশিপের কারণে ক্ষুধা ও দারিদ্র্য কমেছে। সুশাসনের সুফল মানুষের দ্বারপ্রান্তে পৌছে দিতে হলে সকল প্রতিষ্ঠানের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। একটি দেশে সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত নির্বাচন হতে পারে তার পরিপূরক।
Leave a Reply