নিউজ ডেস্ক, ঢাকা: গীতিকবি ও সাংবাদিক, সংগঠক, সিলেট লেখক ফোরামের সভাপতি, আমাদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু নাজমুল ইসলাম মকবুল ভাইয়ের মৃত্যুর খবরে আমরা বিমর্ষ হয়ে পড়েছি। ভাষাহীন হয়ে পড়েছি। বুক ভারী হয়ে গেছে বন্ধুর বিয়োগ ব্যথায়। আমার নির্বান্ধব হয়ে যাওয়ার দিনগুলিতে যে মানুষটি কাধে হাতে রেখেছিলো তার নাম নাজমুল ইসলাম মকবুল। বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আমাকে তিনি দেখতে চাইতেন।অতিথি করে নিয়ে গেছেন বহুবার। তার বিশ্বনাথের বাড়িতেও গিয়েছিলাম ইফতারের দাওয়াতে। খাওয়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। উনার আত্মীয় স্বজন, মুক্তিযোদ্ধা পিতার সামনে খুবই ঘনিষ্ঠ মানুষ হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। বীর প্রতীকের সন্তান সোহেল ভাইয়ের সাথে উনার বাড়িতেই পরিচয় হয়েছে। উনার সাথে যোগসূত্র স্থাপন করিয়ে দিয়েছিলেন ফ্রান্স বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের সভাপতি দিলওয়ার হোসেন সেলিম ভাই। উনাকে নিয়ে একটি লেখার সূত্র ধরে তার সাথে বন্ধুত্ব স্থাপিত হয়েছিলো। যেটি এখনো অটুট রয়েছে।
তিনি অর্শ বা পাইলসের চিকিৎসা করিয়ে ভালো হয়েছিলেন। ক্যান্সারের জীবাণু ধরা পড়ায় রেডিওথেরাপি নিতে হয়েছে। নর্থ ইস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার সাথে বেশ কয়েকবার দেখা হয়েছে। বেশ স্বতঃস্ফূর্ত দেখেছি তাকে। মনের জোর ছিলো অনেক। প্রাণপ্রাচুর্যে ভরা একজন মানুষ ছিলেন। পরোপকারী , বন্ধুবৎসল এই মানুষটি এলাকার অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন এবং উৎকর্ষ সাধনে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রেখেছেন, তহবিল সংগ্রহ করে দিয়েছেন। নিজের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে এমন নিবেদিতপ্রাণ ব্যক্তি সকল রাজনৈতিক মতাদর্শের উর্ধ্বে উঠে সকলের ভালোবাসা কুড়াতেই মগ্ন ছিলেন। তিনি একজন পরোপকারী , জাত সংগঠক হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত এবং দেশে বিদেশে সকলের শ্রদ্ধা, ভালোবাসার মানুষ ছিলেন। এরকম মানুষেরা বিরলপ্রজ। এদের আবির্ভাবের জন্য শতবর্ষ , কোটি আলোকবর্ষ প্রতীক্ষা করতে হয়।
একজন জাত সংগঠকের সংজ্ঞা কি হতে পারে সেটি আমার বন্ধু নাজমুল ইসলাম মকবুলের ঘনিষ্ঠজন না হলে বুঝাই যাবে না। সংগঠকেরা চারিত্র্য কেমন হওয়া উচিৎ সেটি বন্ধু নাজমুল ইসলাম মকবুলকে উপলব্ধি করলেই বুঝা যায়। এমন সোনার মানুষ আর কই পাবো আমি? আদুরে আলপিনের মতো খুটিয়ে খুটিয়ে আমার ভালোমন্দের খোজ আর কেউ নিবে না। নেবার মানুষটি যে আর বেচে নেই সেটি ভাবতেই পারছিনে। আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে।
আমি ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বরের ২৭ তারিখে মারাত্মকভাবে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে ওসমানী ভর্তি হয়েছিলাম গভীর রাতে। পরদিন সকালে আমার মাথায় যার হাতের পরশে ঘুম ভেঙ্গেছিলো জ্ঞান ফিরেছিলো তিনি এর কেউ নন। অবধারিতভাবে নাজমুল ভাই।
আমাদের বন্ধুত্ব ২০১৮ সাল থেকে। এরপর থেকে মনের আড়াল হই নি। হই নি চোখের আড়াল। কিন্তু ক্যান্সারের কারণে তাকে হারাতে হয়েছে। এমন অকালে হারাতে হবে প্রিয় বন্ধুকে কখনো চিন্তায় আসে নি। বড্ড অসময়ে চলে গেলে বন্ধু। আজকে আমার বেদনার দিন। শোকের দিন।
একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান আমার বন্ধুর অবদান আমরা ভুলতে পারবো না।
বন্ধু তোমার পথের সাথীকে চিনে নিও, ভুলো না তারে খুজে নিতে…
বন্ধু আমি ফোনের অপেক্ষায় সকাল সন্ধ্যা পার করে দেবো। ভালো থেকো বন্ধু। আল্লাহ তোমাকে জান্নাতুল ফেরদৌসের সর্বোচ্চ স্থানে রাখুন। আমিন।
Leave a Reply