নিউজ ডেস্ক, জাপান: আমি অনেক বছর গ্রামে যাই না, বাবার কবরটুকু না থাকলে ইহজীবনেও যেতে চাইতাম না। কিছুদিন আগেই বাড়ির পৈতৃক সম্পত্তি বিক্রি করে গ্রামের সাথে শেষ অর্থনৈতিক সম্পর্কটুকুও চুকিয়ে এসেছি। বিক্রিবাট্টার আগে মুরুব্বি ও কপটগ্রামপ্রেমী অনেকের তীব্র প্রতিবাদ ও সমালোচনার মুখে পড়তে হলেও আমি খুব একটা গা করিনি। গ্রামের সরলতা আর অকৃত্রিমতার গালগপ্পো বইতে পড়া যায়, চোখে দেখা যায় না।
গ্রামে গেলেই তরুণরা আপনাকে শোনাবে কোটি টাকার গল্প, মধ্যপ্রাচ্য থেকে কে কত লাখ টাকা এনেছে তার মধুমাখা সংলাপ। টাকার গল্প বলার সময় তাদের জড়ানো জিভ আর মুখের বদল দেখেই বুঝেছি টাকার গন্ধ তাদের কিভাবে মাতাল করে ফেলেছে। সেখানে আর পুকুর নেই, ওরা গোসল করে ট্যাপের পানিতে। ওরা ডাংগুলি, ফুটবল চেনে না, ওরা চেনে তাস, টিভি, ফেসবুক, বলিউড এমনকি টিকটক। কার বাড়ীতে কে কি করলো, কয় বোতল ফেন্সি খেলো, কার মেয়ে কার সাথে পাট ক্ষেতে গেল এই নিয়েই তাদের সকাল-দুপুর-বিকেল কাটে।
শহর থেকে গ্রামে স্বাস্থ্য যায়নি, ব্যাধি পুরোদমে গিয়েছে। ভালো রাজনীতি যায়নি, কিন্তু জামাআতে ইসলাম গিয়েছে। ভালো সাহিত্য যায়নি, কিন্তু কাসেম বিন আবু বকর গেছে। ভালো গান যায়নি, কিন্তু ‘তোমার কোন কোন জায়গায় বেতা গো বান্ধবী ললিতা’ গেছে। ভালো শিক্ষক যায়নি, ধর্মান্ধ বদমাইশরা গিয়েছে। আমার গ্রামে তার সেরা সন্তানেরা ফিরে যায়নি, কিন্তু দুবাইয়ে কামলা খাটাদের টয়োটার টায়ারের দাগ গেছে। গ্রামে এখন ডাবের চেয়ে মোজো কোলা প্রিয়, গরুর দুধের চেয়ে স্টারশিপ কনডেন্সড মিল্ক জনপ্রিয়, পাতার বিড়ির চেয়ে ইয়াবা সম্মানিত।
এই গ্রাম আমি চিনি না, এই পরশ্রীকাতর জীবনযাপন আমার শিকড় নয়- আমি একে অস্বীকার করি। এর চেয়ে শহরের কৃত্রিমতায়, কোনো হাসপাতালের চার দেয়ালে শেষ নিঃশ্বাস ফেলাও আমার জন্য অধিক স্বস্তিদায়ক।
Leave a Reply