1. editor1@japanbanglapress.com : editor1 :
  2. japanbanglapress@japanbanglapress.com : japanbanglapress :
  3. mdzahidulislam1000@gmail.com : zahid :

ইটনা মিঠামইন অষ্টগ্রামের অল অয়েদার রোড-একটি আত্মঘাতি প্রকল্পের দানবীয় রূপ

  • আপডেটের সময় : শুক্রবার, ২১ জুন, ২০২৪

ইটনা মিঠামইন অষ্টগ্রামের অল অয়েদার রোড -একটি আত্মঘাতি প্রকল্পের দানবীয় রূপ

অতিবৃষ্টি ও বর্ষণে নাকাল সিলেটসহ সারাদেশের মানুষ। তবে বেহাল দশা সিলেট বিভাগের মানুষের। সাথে প্রাণিসম্পদ মারাত্মকভাবে ক্ষতির মুখে পড়েছে। জমিতে ফসল না থাকলেও অনেক শ্রমে উত্তোলিত গোলার ধান নষ্ট হচ্ছে বসতি জলমগ্ন হবার কারণে।
ঈদানন্দ কি সিলেটের মানুষ তা উপভোগ করতে পারেন নি। কি শহর, কি গ্রাম সবই ডুবে গেছে বন্যার কারণে। মানুষ ঈদের জামাতে যেতে পারেন নি।

খালবিল, নদীনালা , নর্দমা, প্রাকৃতিক জলাধার অপরিকল্পিতভাবে ভূমিখেকোদের হাতে চলে যাওয়ায় অতি লাভের কবলে পড়ে সেগুলি ভরাট হয়ে গেছে। সেখানে মাথা তুলেছে বাণিজ্যিক ভবন, সুপার মার্কেট। ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেনো পিছুই ছাড়ছে না। অল্পবৃষ্টিতেই জলমগ্ন হয়ে খাসদবীরের মতো উচু এলাকাতেও বুক সমান পানি হয়ে যাচ্ছে। পানি প্রবাহের জন্য পর্যাপ্ত সুব্যবস্থার অভাবে জন দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে। বছর জুড়েই আমরা দেখছি ড্রেনেজ সিষ্টেম উন্নয়নের মহাযুদ্ধ চলছে। কিন্তু এ যেনো জনগণের চোখে ধূলিপড়া দেবার শামিল। রাষ্ট্রীয় সম্পদের অহেতুক অপচয় আর লুটপাটের মহড়া ছাড়া আর কি বলা যেতে পারে? নিজেদের পকেটভারী করার চিন্তাতাড়িত হলে জনতার দুর্ভোগ কিভাবে লাঘব হবে? একদেশদর্শী চিন্তায় আচ্ছন্ন নেতার দ্বারা প্রকৃত উন্নয়ন অসম্ভব। এজন্য নেতাদেরকে হতে হয় বহুমুখী চিন্তার ধারক ও বাহক এবং দূরদর্শী।

নদীগুলির তলদেশ ভরাট হয়ে গেছে। স্থানীয়দের মতে, একশো বছর যাবৎ নদী খনন করা হচ্ছে না। ফলে ভাসান পানির সাথে আগত পলিমাটি জমাট হয়ে নদীপৃষ্ঠ উচু হয়ে প্লাবনের সৃষ্টি করছে। খোদ সুরমা নদী ঝালোপাড়া এলাকায় শুকিয়ে সিনা দেখিয়েছে আমাদের। আর গেরস্থালি ও ক্লিনিক্যাল বর্জ্য ফেলে জলধারাকে বিঘ্নিত করা হয়েছে। ফলে নদীর পানিও দূষিত হয়ে গেছে। নদী ও নদীর পানির উপর অত্যাচারের ফলে মানুষ তার দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।
পুরাতন সুরমাকে ভরাট করে উপশহর বানানোর কুফল ভোগ করে প্রায়শ্চিত্ত করছি আমরা। ফলে উপশহর এখন খুবই আলগুছি , খামোকা শহরের তকমা পেয়েছে। বাস্তাঘাট, বাসাবাড়ি ও দোকানপাটে পানি কোনো প্রকার শুক্কুরবার শনিবার ছাড়াই ঢুকে নাকাল করে দিচ্ছে।

এখন ডিএনডির আদলে সিলেট শহর রক্ষা বাধ নির্মাণ জরুরী হয়ে পড়েছে।

এপর্যন্ত যতো রাস্তা করা হয়েছে সবই হাওরের বুক চিরে। ফলে পানি প্রবাহের সুযোগ স্তিমিত হয়ে গেছে, পলিমাটি বাধাগ্রস্ত হয়ে হাওরপৃষ্ঠ উচু করছে। ফলে নিম্নাঞ্চল আরো ক্ষতির মুখে পড়েছে। সাবমার্সিবল বা আবুরা রাস্তা হাওরাঞ্চলের যত্রতত্র নির্মাণ করে মানুষকে ডুবিয়ে মারার প্রথম ধাপ রচিত হয়েছিলো। এরই দানবীয় রূপ ইটনা মিঠামইন অষ্টগ্রামের অল অয়েদার রোড। ঢাকা সিলেট বাইপাস ঘুঙ্গিয়াজুড়ি হাওর এবং দিনারপুর পাহাড় কেটে করা হয়েছে। হাকালুকি হাওরের বুক চিরে অনেকগুলি রাস্তা করা হয়েছে। হাইলাওরের বুক চিরেও রাস্তা করা হয়েছে। বানিয়াচং থেকে নবীগঞ্জের রাস্তা করা হয়েছে হাওরের বুক চিরে। বানিয়াচং থেকে আজমিরীগঞ্জ পর্যন্ত রাস্তাটিও হাওরের বুক চিরে করা হয়েছে। যেগুলিতে ভাসান পানি প্রবাহের পর্যাপ্ত সুব্যবস্থার নিমিত্তে ব্রিজ, কালভার্ট করা হয় নি। ফলে পানির তোড়ে ফসলি জমি ও বাড়িঘর তলিয়ে গেছে।

যেখানে সেখানে উন্নয়নের নামে প্রজারঞ্জনের জন্যে রাস্তা করা হয়েছে যেগুলি পরিবেশ ও প্রতিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাড়িয়েছে। মানুষ ও প্রাণিসম্পদ মারাত্মকভাবে ক্ষয় ও ক্ষতির মুখে পড়েছে।
আমি আগেও বলেছি নদীর উপর প্রতিঘাতী পদক্ষেপের জন্য আজমিরীগঞ্জ বাজারে কুশিয়ারা নদী এক কিলোমিটার দূরে সরে গেছে এবং অপ্রত্যাশিত ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়েছে। আমিরগঞ্জ বাজার যেকারণে হুমকিতে পড়েছে।
হাওরাঞ্চলের বাসিন্দাদের মতো সুরমা নদীর আজমিরীগঞ্জ এলাকার ফয়জুল্লাহপুরের বাধ এবং শ্রীহাইল এলাকায় গোদি নদীর উপর বাধ নির্মাণের ফলে সুরমা থেকে আগত শাখানদী গোদি মরে গেছে, পলিমাটি জমাট হয়ে নদী ভরাট হয়ে ক্ষুদ্র গোপাটের মর্যাদাও হারিয়েছে। তারা বলছেন, বাধটি দেয়ার ফলে এলাকার কৃষির জন্য মঙ্গল হয়েছে। এটিকে তারা ফসলরক্ষা বাধ হিসেবেই বিবেচনা করছেন। তারা ঘুরেফিরে কিশোরগঞ্জের ইটনা মিঠামইন অষ্টগ্রামের অল অয়েদার রোডকে চলমান জলপ্রবাহ সংকট ও বন্যার জন্য দায়ী করছেন। তারা জানাচ্ছেন, পানির ঘুর্ণণ আধিক্য এলাকা বিবেচনাক্রমে চার থেকে পাচ কিলোমিটার স্থানজুড়ে উড়ালসড়ক নির্মাণ করে এ সমস্যার আপাতত সমাধান সম্ভব। মাটি এবং পাকা সড়ককে ধ্বংস করতে পারলে জনদুর্ভোগ লাঘব হবে বলে অভিমত দিয়েছেন।

যে সড়কটি জনমানসের উপকারে আসবে বলে সাতশো কোটি টাকার শ্রাদ্ধ করা হয়েছে সেটিই এখন বিভিন্ন গবেষণা ও বাস্তব সমীক্ষার অভাবে গোদের উপর বিষফোঁড়া হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তাই এই আত্মঘাতী প্রকল্পের দানবীয় রূপ আর জনগণ দেখতে চান না।

পরিশিষ্ট :- আমাদের দেশের কর্মকর্তারা খিচুড়ি রান্না শিখতে বিদেশ যান, পুকুর খনন শিখতে বিদেশ যান কিন্তু তারা শিখতে মনোযোগ দেন না। তারা রাষ্ট্রীয় অর্থের নয়ছয় করতে যান, প্রমোদভ্রমণ করতে যান ফলে তাদের এই ভ্রমণ রাষ্ট্রের কোনো উপকারে আসে না। এবার আমি তাদের তথা পানি উন্নয়ন বোর্ড ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে বিদেশ ভ্রমণের সুযোগ করে দেবার সুপারিশ করছি। তাদেরকে নেদারল্যান্ডস পাঠানো হোক। সমুদ্রের নিচের একটি দেশ কিভাবে জল ও জলের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে একটি দেশকে সুখী ও সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন তার উপর বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন করে এসে বাংলাদেশের বন্যা উপদ্রুত অঞ্চলকে রক্ষা করে জাতিকে উপকৃত করবেন। আশাকরি সরকার ও সরকারের নীতিনির্ধারকদের বিষয়টি নজর কাড়বে। প্রয়োজনে নেদারল্যান্ডস থেকে বিশেষজ্ঞ নিযুক্ত করা যেতে পারে।

#সাইফুর রহমান কায়েস #

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটেগরিতে আরো খবর
Japan Bangla Press © 2025. All Rights Reserved.
Built with care by Pixel Suggest