নিউজ ডেস্ক, ঢাকা: চট্টগ্রামে শিগগিরই চালু হতে যাচ্ছে ‘এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে’। নগরীর লালখান বাজার থেকে প্রায় ১৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এই উড়াল সড়ক বা ‘এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে’ নির্মাণ করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। এরই মধ্যে এর মূল কাঠামোর নির্মাণকাজ শেষ। কয়েকটি র্যাম্প নির্মাণের কাজও শুরু হয়েছে। বিদ্যুতায়নের কাজ শেষ হলে মাসখানেকের মধ্যে এটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে।
সিডিএ সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ ২০২২ সালের সংশোধিত প্রস্তাবে চট্টগ্রাম বন্দরে চলাচলকারী যানবাহনের জন্য রাস্তা উন্মুক্ত রাখতে প্রকল্পের অ্যালাইনমেন্টে পরিবর্তন করা হয়। এছাড়া বন্দরের গাড়ি সহজে চলাচলের জন্য যথাযথ ‘ফাউন্ডেশন, সাব স্ট্র্যাকচার ও সুপার স্ট্র্যাকচার’ তৈরি করে নতুন নকশায় অ্যালাইনমেন্ট করার প্রস্তাব করা হয়। ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ উড়াল সড়কটি বিমানবন্দর এলাকা থেকে শুরু হয়ে ইপিজেড-বন্দর-বারেক বিল্ডিং চৌমুহনী হয়ে দেওয়ানহাট রেলসেতুর পশ্চিম পাশ দিয়ে পাহাড়ঘেঁষে টাইগার পাস মোড়ের পর মূল সড়কের ওপর দিয়ে লালখান বাজার মোড় পেরিয়ে ওয়াসার মোড়ে আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারে গিয়ে মিলবে। নগরীর লালখান বাজার থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত প্রায় ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে র্যাম্প থাকবে ১৪টি। এর মধ্যে জিইসি মোড়ে একটি, টাইগার পাসে দুটি, আগ্রাবাদে চারটি, ফকিরহাটে একটি, নিমতলায় দুটি, সিইপিজেডে দুটি এবং কেইপিজেড এলাকায় দুটি র্যাম্প থাকবে। আগ্রাবাদ এলাকার চারটি র্যাম্পের মধ্যে জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘর সড়কে একটি, ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার সড়কে একটি এবং আগ্রাবাদ এক্সেস সড়কে হবে দুটি র্যাম্প। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নগরীর প্রান্তটি নিচের মূল সড়কের ওপর দিয়ে লালখান বাজার মোড় পেরিয়ে ওয়াসার মোড়ে আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারে গিয়ে মিলবে। পাশাপাশি একটি র্যাম্প ওয়াসার মোড়ের জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদসংলগ্ন অংশ থেকে শুরু হয়ে বাওয়া স্কুলের সামনে দিয়ে জিইসি মোড়ের কাছে গিয়ে নামবে।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রয়াত মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর নামে নামকরণ করা নগরীর লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এখন দৃশ্যমান। এটির নির্মাণ ব্যয় ৪২৯৮ কোটি ৯৫ লাখ ১১ হাজার টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে ৪৩৬৯ কোটি ৭ লাখ ১০ হাজার ৮১৯ টাকায় দাঁড়িয়েছে।
সরেজমিনে এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে গিয়ে দেখা গেছে, উড়াল সেতুর চার লেনের দুটি সড়কের একপাশ পুরোপুরি প্রস্তুত। আরেক পাশের কাজ কিছুটা বাকি আছে। বসানো হচ্ছে বৈদ্যুতিক পোল। তাতে লাগানো হবে বাতি। সিসিটিভি ক্যামেরা এবং স্পিড ক্যামেরা লাগানোর কাজ এখনো শেষ হয়নি। তবে এর মধ্যেও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে সামান্য কিছু যানবাহন বিশেষ অনুমতিতে চলাচল করছে।
সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, আগে বহদ্দারহাট থেকে দুই-তিন ঘণ্টা লাগত পতেঙ্গায় যেতে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কারণে এখন মাত্র ২০ মিনিটে যাওয়া যাবে। শিগগিরই যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। বর্তমানে এটিতে পোল লাগানো হচ্ছে। চট্টগ্রাম নগরীতে যানজট নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। এটি চট্টগ্রামের যোগাযোগব্যবস্থার বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে।
তিনি আরো বলেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে চলাচল করলে যানবাহনে নির্ধারিত হারে টোল দিতে হবে। এখানে টোল নেওয়ার জন্য ১৪টি টোল বুথ থাকবে। প্রাথমিকভাবে পতেঙ্গা প্রান্তে চারটি টোল বুথ থাকবে। র্যাম্প নির্মাণের পর বাকি টোল বুথ বসানো হবে। টেন্ডারের মাধ্যমে এ টোল আদায়ের জন্য ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হবে। তবে এখনো টেন্ডার আহ্বান করা হয়নি। শুরুর দিকে এই এক্সপ্রেসওয়েতে ২৪টি র্যাম্প থাকার কথা থাকলেও এখন হবে ১৫টি। বর্তমানে দুটি র্যাম্প নির্মাণকাজ শেষ পর্যায়ে।
সিডিএ সূত্র জানিয়েছে, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে চলাচল করলে কার ১০০ টাকা, জিপ ১০০ টাকা, মাইক্রোবাস ১০০ টাকা, মিনিবাস ২০০ টাকা, বাস ৩০০ টাকা, ট্রাক (চার চাকা) ২০০ টাকা করে টোল দিতে হবে। তবে এই উড়াল সড়কে চলবে না মোটরসাইকেল, ট্রাক (৬ চাকা) এবং কাভার্ডভ্যান।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প কর্মকর্তা (প্রজেক্ট ডিরেক্টর) প্রকৌশলী মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান বলেন, লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা সী-বিচ পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এখন দৃশ্যমান। এটিতে ওঠানামার জন্য ১৫টি র্যাম্প থাকছে। এর মধ্যে ১৩টি র্যাম্প নির্মাণাধীন রয়েছে। এরই মধ্যে মন্ত্রণালয় থেকে যানবাহনের টোলের হার অনুমোদন দিয়েছে।
তিনি আরো বলেন, এ সড়কে সর্বোচ্চ গতিসীমা রাখা হয়েছে ৬০ কিলোমিটার। এখানে নিরাপত্তার জন্য বসানো হবে সিসিটিভি ক্যামেরা এবং যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণে থাকবে স্পিড ক্যামেরা। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ এই ক্যামেরা নিয়ন্ত্রণ করবে। নির্ধারিত গতির চেয়ে যারা কম বা বেশি চালাবে, সেসব যানবাহনকে অটোমেটিক স্পিড ক্যামেরার মাধ্যমে জরিমানার আওতায় আনা হবে।
চট্টগ্রামে বিমানবন্দরে কোনো প্রকার যানজট ছাড়াই পৌঁছানোর লক্ষ্য নিয়ে সরকার বন্দরনগরী চট্টগ্রামের জন্য এ বৃহৎ প্রকল্প হাতে নেয়। চট্টগ্রামবাসীর জন্য এ প্রকল্প অতি গুরুত্বপূর্ণ, কেননা বিমানবন্দর থেকে শহরে পৌঁছতে ইপিজেড, কাস্টমস, দেওয়ানহাট প্রভৃতি এলাকায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা জ্যামের কারণে বিলম্ব হয়ে যায়। এই ফ্লাইওভার প্রকল্পের কাজ শেষ হলে মাত্র ১৫-২০ মিনিটেই কোনো যানজট ছাড়া শহরের অভ্যন্তরে পৌঁছানো যাবে। মূলত চট্টগ্রামবাসীর এ সমস্যাকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনায় এনে প্রধানমন্ত্রী প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন দেন। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) এ প্রকল্পের বাস্তবায়নকারী সংস্থা। এর প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় ৩,২৫০ কোটি ৮৩ লাখ ৯৪ হাজার টাকা। পরবর্তীতে প্রকল্প ব্যয় বৃদ্ধি পায়। প্রথম সংশোধিত ব্যয় ধরা হয় ৪,২৯৮ কোটি ৯৫ লাখ ১১ হাজার টাকা। চট্টগ্রাম শহরের লালখান বাজার থেকে শাহ আমানত বিমানবন্দর পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং সাড়ে ১৬ মিটার প্রস্থবিশিষ্ট ৪ লেন প্রশস্ত ফ্লাইওভার। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নামের এ প্রকল্প ২০১৭ সালের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি একনেক সভায় অনুমোদন পায়। প্রকল্পের মেয়াদ ২০১৭-এর জুলাই থেকে ২০২০ সালের জুনে বাস্তবায়ন হওয়ার কথা থাকলেও এটির নকশায় পরিবর্তন আনায় ব্যয় বৃদ্ধি করার প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পটির নির্মাণকাজে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে মেসার্স ম্যাক্স-র্যানকেন জয়েন্ট ভেনচ্যুর।
Leave a Reply