নিউজ ডেস্ক, ঢাকা: সাম্প্রতিক সময়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সহিংসতায় নিহতদের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রশ্ন রেখেছেন যে সাধারণ মানুষ কী দোষ করলো যে এভাবে খুন করতে হবে?
এ সময় তিনি দেশবাসীর সহযোগিতা কামনা করে পুনর্ব্যক্ত করেন যে দেশব্যাপী সাম্প্রতিক সহিংসতার সময় হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদের খুঁজে বের করে তাদের উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করতে তার সরকারের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
প্রধানমন্ত্রী রোববার (২৮ জুলাই) তার সরকারি বাসভবন গণভবনে শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী সংঘাত-সহিংসতায় নিহত ৩৪ জনের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে আর্থিক সহায়তা প্রদানকালে একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার প্রচেষ্টা থাকবে যারা এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত তাদের খুঁজে বের করা, তাদের অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে – এটি আমার প্রচেষ্টা হবে, আমি তা করব।’
অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে নিহতদের স্বজনদের কাছে সহযোগিতা চেয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনাদেরও সাহায্য চাই। যদি আপনারা কিছু জানেন আমাদের জানাবেন।’
সাম্প্রতিক সহিংসতায় খুনের সাথে জড়িতদের খুঁজে বের করে শাস্তি দেয়া হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘তাদের বিচার করতে হবে, তা না হলে মানুষের নিরাপত্তা দেয়া যাবে না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি জানি না কিভাবে আপনাদের সান্ত্বনা দেব। কিন্তু আমি আপনাদের কষ্টটা অনুভব করতে পারছি। কারণ স্বজন হারাবার বেদনা কখনো ভোলার নয়। আল্লাহ আপনাদের সবর করার শক্তি দিন। আর দোয়া করেন যেন এর একটা বিহিত করা যেতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘আমি বাবা-মা, ভাই হারানো সেই এতিম। কাজেই আপনাদের কষ্টটা আমি বুঝি। আমি আছি আপনাদের জন্য, আপনাদের পাশে, যতক্ষণ বেঁচে আছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘আর আল্লাহকে ডাকেন যেন এই সমস্ত খুনি-জালেম এদের হাত থেকে আমাদের দেশটা রেহাই পায়।’
রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী নিহত আবু সাঈদের পরিবারের সদস্যসহ ৩৪টি পরিবারের সদস্য প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে তার সাথে দেখা করতে এসেছিলেন।
নিহতদের পরিবারের সদস্যরা শেখ হাসিনার কাছে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীও আবেগ সংবরণ করতে পারেননি। নিহতদের পরিবারের সদস্যদের কথা শুনে প্রধানমন্ত্রী অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন।
অশ্রুসিক্ত প্রধানমন্ত্রী তাদের সান্ত্বনা দিয়ে বলেন, ‘আমাকে দেখেন, আমি অনেক কষ্ট নিয়ে বেঁচে আছি।’
তাদের পাশে আছেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তাদের মতো স্বজন হারানোর বেদনা তিনিও বহন করছেন।
তিনি আরো বলেন, ‘আমি আপনাদের ব্যথা বুঝতে পারছি। এটা আমার দুর্ভাগ্য যে, আমাকে আপনাদের অশ্রু দেখতে হচ্ছে।’
স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত সেখানে উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের (পিএমও) সচিব মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মানুষ কী দোষ করলো যে এভাবে মানুষ খুন করতে হবে! মানুষ খুন করে সরকার পতন এটা কবে হয়, কখন হয়? সাধারণ মানুষ কী দোষ করেছে?’
তিনি বলেন, ‘এভাবে বারবার বাংলাদেশটাকে নিয়ে খেলা করা আর হতে দেয়া যায় না। কাজেই আমি আপনাদেরই সাহায্য চাই।’
তিনি বলেন, ‘মানুষ মেরে লাশ ঝুলিয়ে রাখার মতো এই বর্বরতা, জানোয়ারের মতো ব্যবহার, এটা কি কেউ করতে পারে। একজন মুসলমান আরেকজন মুসলমানের লাশ ঝুলিয়ে রাখবে পা বেঁধে! যারা এগুলোর সাথে জড়িত অবশ্যই তাদের বিচার হবে।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন প্রত্যেকটা জিনিস জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দিয়েছে। যেখানে মানুষ সেবা পাবে সেই জায়গাগুলো। সেই কোভিড হাসপাতাল থেকে শুরু করে যে যে জায়গায় আমরা মানুষের জন্য কাজ করবো সেইসব জায়গা, প্রত্যেকটা জায়গা একে একে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। আর এভাবে মানুষকে মারা হয়েছে।’
কোটা সংস্কার ছাত্র আন্দোলনকারীদের দাবি মানা এবং ধৈর্য্য ধরে তাদের বোঝানো হয়েছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ধৈর্য্য ধরে সব সময় তাদের বোঝানো, তাদের সাথে কথা বলা, সব চেষ্টা করেছি। কিন্তু আজকে চারদিকে এই হাহাকার। এটা তো সহ্য করা কষ্টকর।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা আন্দোলন করেছে, তাদের সব দাবিই তো মেনে নিয়েছি। তাতেও নাকি দাবি শেষ হয় না।’
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বজন হারানোর স্মৃতিচারণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিনিয়ত বাপ-মা-ভাই-বোনদের হারানোর ব্যথা নিয়ে আমাদের চলতে হয়। এমনকি লাশটাও তো দেখতে পারিনি, কাফন-দাফনটাও করতে পারিনি। দেশেও ফিরতে পারিনি, ছয় বছর আসতে দেয়নি আমাকে।’
তিনি বলেন, ‘যখন (দেশে) এসেছি, সারা বাংলাদেশ ঘুরছি। চেয়েছি যেমন আমার বাবা বলতেন, এদেশের দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাবো। সেই চেষ্টাটাই আমি করে যাচ্ছিলাম। কিন্তু বারবার এই ধরনের ঘটনা ঘটাবে, এই সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটাবে এটাতো কাম্য না।’
নিহতদের স্বজনরা গণভবনে আসায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘সবাই এসেছেন কষ্ট করে, দুঃসময়ে। আজকে যদি ভালো সময় হতো কত হাসিখুশি করে সবাই যেতে পারতেন। আর এখন আমারও আপনাদের চোখের পানি দেখতে হচ্ছে। এটিই সবচেয়ে কষ্ট।’
Leave a Reply