বেক জার্মান প্রেসিডেন্ট ক্রিশ্চিয়ান ওলফের চোখে শেখ মুজিব এমনই এক মহান নেতা যিনি লড়াই করেছিলেন তাঁর স্বজাতির অধিকার আর মর্যাদার জন্য। আর আমরা এমনই অভাগা জাতি সেই নেতাকে অমর্যাদা করতে দুইবার ভাবি না। যেকোনও ছুতায় তাঁকে অবমাননা করার মধ্যে আমরা এক ধরনের পৈশাচিক আনন্দ পাই।
কিউবার বিপ্লবী নেতা ফিদেল ক্যাস্ট্রো বলেছিলেন, আমি হিমালয় দেখিনি, শেখ মুজিবকে দেখেছি। ব্যক্তিত্ব ও সাহসিকতায় এই মানুষটি হিমালয়।
সেই হিমালয়সম মানুষটিকে আমরা হত্যা করেছি।
ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়িয়ে যিনি অকুতোভয় চিত্তে আর দ্ব্যর্থহীন কন্ঠে বলতে পারেন, “আমি বাঙালী, বাঙলা আমার ভাষা”
আমরা সেই কন্ঠস্বর চিরতরে শেষ করে দিয়েছি। ভাবা যায়!
৭৫ এর ১৫ আগষ্ট। সুপরিকল্পিতভাবে ৭১ এর বিজয়কে মুছে ফেলতে ঘটানো হয় এই নারকীয় হত্যাকান্ড। শুধু হত্যা করে থেমে থাকেনি জাতির কুলাঙ্গারেরা। কুখ্যাত ইনডেমনিটি আইন করে হত্যার বিচার বন্ধ করে রাখা হয় দীর্ঘ্য দিন। অকৃতজ্ঞতা আর কৃতঘ্নতার পাপে একে একে মুছে যায় স্বাধীনতার সব অর্জন—ধর্মনিরপেক্ষতা, অসাম্প্রদায়িকতা, বাঙালী জাতীয়তাবাদ। মৌলবাদের ধারাল থাবায় ক্ষত-বিক্ষত হয় প্রিয় স্বদেশ —বাংলাদেশ। এ এক ট্রাজেডি—স্বাধীন দেশে মুক্তিযোদ্ধারা অপাঙক্তেয় আর পরাজিতের মাথায় মুকুট। জাতির পতাকা খামছে ধরে ৭১ এর শকুন।
আমাদের জাতিগত এই পাপের ভার আজও বয়ে বেড়াচ্ছি। আজও দেখি সুযোগ পেলেই হায়েনারা আঘাত হানে স্বাধীনতার মূর্ত প্রতীক মুজিবের ভাস্কর্যে, স্মৃতিবিজড়িত ৩২ নম্বর বাড়িতে। এভাবে কী মুজিব মুছে ফেলা যায়? মুজিব মানে স্বাধীনতা, মুজিব মানে বাংলাদেশ। হাতুরি দিয়ে, ক্রেন দিয়ে মুজিব মূর্তি ভেঙ্গে মুজিব মুছা যাবে না। মুজিব মুছতে বাংলাদেশকে মুছতে হবে বিশ্বমানচিত্র থেকে।
“মনে রাখবা”— সবুজের বুকে লাল সূর্যের যে পরিচয় তৈরি হয়েছে সেটাই মুজিব। মুজিব মুছতে হলে ঘুচাতে হবে পরিচয়। কী এ পরিচয়? সৈয়দ শামসুল হকের ভাষায়— পরিচয়ে আমি বাঙালী।
মুজিব সেই বাঙালীর হাজার বছরের ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ সন্তান। যত মুছতে চাইবে তত বেশি ফিরে ফিরে আসবে মুজিব। যত নিশ্চিহ্নের অপচেষ্টা তত বেশি শক্তি নিয়ে প্রতিরোধ। তাই বলে প্রতিবিপ্লবের জুজুর ভয়ে সাধারণকে উদ্বিগ্ন করার দরকার নেই। শোক পালনে বাধা দেবার জন্যই প্রতিবিপ্লবের মিথ্যা ভয় ছড়ানো হচ্ছে। এটি কাপুরুষতা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা বিপ্লবী, তারা কাপুরুষের মত জাতিকে শোক করা থেকে বিরত রাখবে—এটা ঠিক মানায় না।
(পুনশ্চঃ শিক্ষিত মার্জিত শান্তিতে নবেল বিজয়ী বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিত্ব প্রফেসর ডঃ মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কতৃক ১৫ আগষ্টের জাতীয় শোক দিবসের ছুটি বাতিল করার সিদ্ধান্তকে নিন্দা জানাচ্ছি।)
Leave a Reply