ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়েছিল বিদেশিদের উদ্যোগে। প্রথম উপাচার্য ছিলেন একজন ব্রিটিশ। বিদেশি শিক্ষকও ছিলেন বলে ধারণা করি।
ভারতবর্ষে আধুনিক শিক্ষা প্রচলন করেছিল ব্রিটিশরা। এবং তা শুরু হয়েছিল তৎকালীন রাজধানী কলিকাতায়। কলিকাতা, মাদ্রাজ, ঢাকাসহ বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজের সংখ্যা কম ছিল না। যেখানে বিদেশি শিক্ষকরা অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন।
এক কলিকাতাতেই ফোর্ট উইলিয়ামসহ অনেক কলেজ স্থাপিত হয়েছিল যা শতবছরে আজও উজ্জ্বল ইতিহাস বহন করছে। বলা যায়, বাংলায় আধুনিক বা পাশ্চাত্যশিক্ষার বিপ্লব ঘটিয়েছেন খ্রিস্টানরা। যদিও অনেক বাদ-বিবাদ, তর্ক-বিবাদ, আলোচনা ও সমালোচনা রয়েছে এই বিষয়ে। কিন্তু এটাও ঠিক উপমহাদেশ আজও বিদেশি শিক্ষার ওপরই নির্ভরশীল।
এশিয়ায় আরেকটি দেশ জাপান গ্রামীণ সভ্যতা থেকে আধুনিক শিক্ষাদীক্ষায় পাশ্চাত্যশক্তির সমকক্ষ হয়ে উঠেছিল মেইজি যুগে (১৮৬৮-১৯১২)। তারও মূলে ছিল বিদেশি খ্রিস্টান শিক্ষাবিদদের অসামান্য অবদান।
জাপানে আধুনিক শিক্ষার বিপ্লব ঘটিয়েছেন বিদেশি এবং দেশিয় কতিপয় খ্রিস্টান সুশিক্ষিত শিক্ষাবিদ ও মনীষী। আধুনিক শিক্ষার ফলে জাপান উনিশ-বিশ শতকে অভূতপূর্ব শিল্পবিপ্লব ঘটিয়েছিল। জ্ঞান-বিজ্ঞান-প্রযুক্তি-কারিগরির ভিত্তি স্থাপিত হয়েছিল সরকারি ও বেসরকারিভাবে। সেই ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে আজকের জাপান দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মাটির সঙ্গে মিশে যাওয়ার পরেও। কিন্তু উঠে দাঁড়িয়েছে অতিদ্রুত মূলত শক্ত ভিত্তি বা শক্তিশালী ফাউন্ডেশন থাকার ফলেই। শুধু তাই নয়, আজকের দুই কোরিয়া, চিন এবং তাইওয়ানের সার্বিক উন্নতির ভিত্ গড়ে দিয়েছিল জাপানই। এইসব ইতিহাস নিয়ে বেশ লিখেছি আমি।
আজকে বাংলাদেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের ফলে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে জাপান নামক দেশটির দিকে দৃষ্টি দেয়ার। জাপানকে অনুসরণ করা কতখানি জরুরি যারা জানার তারা জানেন। জাপানের শিক্ষাপদ্ধতি জাতি গঠনে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে বলে আমার একান্ত বিশ্বাস।
বাংলাদেশে এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের জন্য উপযুক্ত শিক্ষক সঙ্কট সুতীব্র। এক্ষেত্রে সরকার বিদেশি শিক্ষাবিদদেরকে আমন্ত্রিত করে পাবলিক উচ্চপ্রতিষ্ঠানে উপাচার্যসহ বিভিন্ন বিভাগের প্রধান হিসেবে নিয়োগ দিতে পারে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য। যেটা জাপান করেছিল মেইজি যুগে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সূচনায়।
Leave a Reply