1. editor1@japanbanglapress.com : editor1 :
  2. japanbanglapress@japanbanglapress.com : japanbanglapress :
  3. mdzahidulislam1000@gmail.com : zahid :
সাম্প্রতিক :
ইতিহাসের সেরা নির্বাচনের পরিকল্পনা করছি: প্রধান উপদেষ্টা মানিকগঞ্জে সমন্বয়কদের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ ক্লিনিক থেকেই দেশবাসীর কথা জানতে চাইলেন খালেদা জিয়া ট্রাম্পের অভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইওয়াইয়া ‘ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্টে’ যুক্ত নয় মার্কিন সরকার : দূতাবাস টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ে হাতুড়ি দিয়ে হামলা ‘বাংলাদেশ বিরোধী প্রচারণায়’ অসহায়ত্ব, প্রবাসীদের সহায়তা চাইলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা প্রথমবারের মতো দেশে ব্যাট রিওভাইরাস শনাক্ত, ছড়ায় যেভাবে মায়ের জন্য বাসায় তৈরি খাবার নিয়ে ক্লিনিকে তারেক রহমান আ.লীগের নিবন্ধন থাকবে কিনা ‘সময় বলে দেবে’: সিইসি

কিছু শিক্ষার্থী চাইল বলেই এইচএসসি পরীক্ষা বাতিল?

  • আপডেটের সময় : বুধবার, ২১ আগস্ট, ২০২৪

নিউজ ডেস্ক, ঢাকা: মঙ্গলবার (২০ অগাস্ট) বিকেলে ছোট বোনের ফোন পেয়েই মনে হলো বিষয়টা এইচএসসি পরীক্ষা-সম্পর্কিত। বলল, ‘দাদা তুনতুন কথা বলবে।’ তুনতুন মানে ভাগ্নি। রাজধানীর একটি কলেজ থেকে এবারের এইচএসসি পরীক্ষার্থী। সাতটি পরীক্ষা শেষ হয়েছে। বাকি আরও ছয়টি। কিন্তু সেগুলো আর হবে না বলে সরকার যে সিদ্ধান্ত দিয়েছে, সেই খবরটি সঠিক কি না তা জানতে এই ফোন করেছে। বললাম, সঠিক। তুনতুনের মন খারাপ। জিজ্ঞেস করলাম, মন খারাপ কেন? পরীক্ষা নাই মানে তো ভালো। পড়ালেখার চাপ নাই। ফূর্তি কর। সে বললো, সবাই তো ‘অটোপাশ’ বলবে!

পরীক্ষা না হওয়ায় একজন কিশোরীর যে আনন্দিত হওয়ার কথা ছিল, এক্ষেত্রে হয়েছে উল্টো। কেননা পরীক্ষা না নিয়ে এসএসসির ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে বাকি পরীক্ষাগুলোর নম্বর দিয়ে পাশ করিয়ে দেওয়াটা তার কাছে সম্মানজনক মনে হচ্ছে না। পরীক্ষা না হলে ফলাফল কিভাবে দেওয়া হবে, তা এখনও বলা হয়নি, তুনতুন ধরে নিয়েছে, এসএসসির ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে বাকি পরীক্ষাগুলোর নম্বর দেওয়া হবে, সাধারণত এমনটাই হয়েছে নিকট অতীতে, যখন করোনা মহামারীতে আক্রান্ত ছিল পৃথিবী। প্রশ্ন হলো, যারা পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত নিলেন, তারা তুনতুনের মতো এরকম অসংখ্য কিশোর-কিশোরীর এই আত্মসম্মানবোধের বিষয়টি কি বিবেচনায় নিয়েছেন?

ওকে জিজ্ঞেস করলাম, পরীক্ষা হবে না বলে ওর একার মন খারাপ কিনা? সে বলল, ‘মনে হয় না। কারণ বন্ধুদের সবাই পরীক্ষা নিয়ে আলোচনা করছিলাম বেশ কয়েক দিন ধরেই। পরীক্ষা নিয়েই আমরা এক্সাইটেড ছিলাম। সুতরাং পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্তে কারো আনন্দিত হওয়ার কথা নয়।’

প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু হয় গত ৩০ জুন। এর মধ্যেই ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সাতটি পরীক্ষাসহ বিভিন্ন বোর্ডের বেশ কয়েকটি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়। কিন্তু সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কয়েক দফায় পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। সবশেষ আগামী ১১ সেপ্টেম্বর থেকে স্থগিত পরীক্ষাগুলো নেওয়ার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে প্রস্তাব দিয়েছিল শিক্ষা বোর্ড। সেটি অনুমোদনও করা হয়।

মঙ্গলবার অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা ১১ সেপ্টেম্বর থেকে আরো ২ সপ্তাহ পেছানোর সিদ্ধান্ত হয়। অর্থাৎ স্থগিত পরীক্ষাগুলো সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এদিন দুপুরেই সচিবালয়ে গিয়ে স্থগিত এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষাগুলো বাতিল এবং অটোপাশের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করে কিছু শিক্ষার্থী। তাদের দাবি, এরইমধ্যে যে কয়টি বিষয়ের পরীক্ষা হয়েছে, তার ভিত্তিতে এবং স্থগিত বিষয়ের পরীক্ষা এসএসসির সংশ্লিষ্ট বিষয়ের সঙ্গে ম্যাপিং করে ফল প্রকাশ করা হোক। এ দাবিতে আগের দিন অর্থাৎ সোমবার তারা ঢাকা শিক্ষা বোর্ডও ঘেরাও করে।

সচিবালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় যে ভবনে অবস্থিত, সেই ভবনের নিচে অসংখ্য শিক্ষার্থী জমায়েত হয়ে বিক্ষোভ করে। তারা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ দপ্তরের সামনে অবস্থান নেয়। সচিবালয়ের সব প্রবেশপথ আটকে দেওয়া হয়। একপর্যায়ে তাদের দাবি মেনে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে স্থগিত পরীক্ষাগুলো বাতিলের ঘোষণা দেয় সরকার।

রাতে তুনতুন আবার ফোন করে বলল যে, আমার হোয়াটসঅ্যাপে সে কয়েকটি স্ক্রিনশট পাঠিয়েছে। তাদের বন্ধুদের ফেইসবুক গ্রুপে পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়ে তাদের কী প্রতিক্রিয়া হয়েছে, সেটি বোঝানোর জন্য। পরীক্ষার্থীদের পরিচয় গোপন রেখে কয়েকটি মন্তব্য হুবহু তুলে দিচ্ছি:

১. অটোপাশ যে কি একটা অভিশাপ, যারা অটোপাশ করছে শুধু তারাই জানে। আর অটোপাশের জন্য গলা ফাটায়ে আন্দোলন যারা করতেছে তারাই একদিন গলা ফাটায়ে চিল্লাবে যে এই ভুল কেন করলাম!!

২. গণহারে জিপিএ ৫ এর কারণে অনেক জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষায় বসতে পারবে না। যারা এসএসসিতে খারাপ রেজাল্ট করছে তাদের অবস্থা হবে শোচনীয়। এদের ভবিষ্যৎ কি হবে আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। জব মার্কেটে অটোপাশের সার্টিফিকেট দেখলে অটো নেগেটিভ ইম্প্যাক্ট পড়বে। যারা পরীক্ষা দিয়ে আসছে অবশ্যই তারা বেশি গুরুত্ব পাবে। যারা দেশের বাইরে উচ্চশিক্ষার জন্য যেতে চাইবে তাদের এই সার্টিফিকেট কিভাবে বিদেশের ইনস্টিটিউট মূল্যায়ন করবে? সবকিছুই অনিশ্চয়তার দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়াবে!!

৩. পাশও করবে না। তাই তারা আজকে আওয়াজ তুলেছে অটোপাশ দাও! নাইলে এক্ষুণি লং মার্চ টু গণভবন। আপনি কি জানেন, তাদের অধিকাংশের জীবনের সার্থকতা এইচএসসি পরীক্ষা পাশ করার মধ্যেই নিহিত? তাই অটোপাশ পেলেই তাদের আল্টিমেট উইন। ৯০% অটোপাশ চাওয়া পোলাপানের চিৎকারে আড়ালে পড়ে গিয়েছে ১০% পোলাপানে ক্ষীণ কণ্ঠ। যারা দুই বছর যাবত পড়াশোনা করে আসছে এইচএসসি টার্গেট করে। তাদের অনেকের কপাল হয়তোবা মন্দ। এসএসসিতে কিছু সাবজেক্টে ভালো মার্কস আসে নাই কিংবা A+ মিস গেছে। সাজেক্ট ম্যাপিংয়ের ঠেলায় হয়তোবা তারা তাদের পরম আরাধ্য বুয়েটের এক্সাম দিতে হলেও বসতে পারবে না।

৪. এসএসসিতে ৪.৮৫ পাইছিলাম। এত দিন ধরে কষ্ট পড়াশোনা করছি আর এখন অটোপাশ দিয়ে দিছে। আমার মেডিকেল পড়ার ইচ্ছা ছিল। আজ সব শেষ করে দিছে।

৫. মানুষের দাবি নিজ স্বার্থকে ঘিরে গড়ে ওঠে। অন্যের ভালো সে কমই বুঝতে চায়। সব পরিশ্রম বৃথা গেলো। এই সিদ্ধান্ত ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি।

এই লেখাগুলো পড়ে মনে হলো, শিক্ষার্থীদের চিন্তা কত পরিষ্কার। কী দারুণ যুক্তি! অথচ আমাদের নীতিনির্ধারকদের মগজে এই চিন্তা ও যুক্তিগুলো কাজ করল না?

প্রশ্ন হলো, কতজন পরীক্ষার্থী পরীক্ষা বাতিল চাইল? তারা মোট পরীক্ষার্থীর কত শতাংশের প্রতিনিধিত্ব করে? যারা সচিবালয় ঘেরাও করল, তাদের সবাই কি পরীক্ষার্থী?

যদি তারা এইচএসসি পরীক্ষার্থী হয়ে থাকে তাহলে তাদের বয়স ২০ বছরের কম। মানে টিনেজ। তারা কী করে সচিবালয়ের মতো একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার ভেতরে পুলিশের নিরাপত্তা ভেদ করে ঢুকে গেল— যেখানে স্বাভাবিক নিয়মে সাংবাদিকরাও অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড ছাড়া ঢুকতে পারেন না। আর সাধারণ মানুষকে ঢুকতে হলেও পাশ নিতে হয় এবং যেখানে প্রতিটি গেটে কড়া পুলিশি পাহারা থাকে। তার মানে সচিবালয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এতই দুর্বল যে কিছু টিনেজ চাইলে আর ঢুকে পড়ল? তারা সংখ্যায় কত ছিল?

কিছু শিক্ষার্থীর দাবির মুখে স্বয়ং শিক্ষা উপদেষ্টার সভাপতিত্বে গৃহীত সিদ্ধান্ত বাতিল হয়ে যাবে? সরকার শিক্ষার্থীদের সম্মান করল নাকি ভয় পেল? তারা কি ভাবছে যে, পরীক্ষা বাতিল না করলে সারা দেশে এভাবে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে যাবে এবং তারপর আরেকটা আন্দোলন শুরু হবে? সেটার সম্ভাবনা ক্ষীণ। কেননা সঠিক অনুসন্ধান করলে দেখা যাবে, অধিকাংশ পরীক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকরা পরীক্ষা নেওয়ার পক্ষে।

পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়ার কিছু যৌক্তিক কারণ রয়েছে। যেমন সাম্প্রতিক গণঅভ্যুত্থানের সময় শুধু বিশ্ববিদ্যালয় নয়, বরং স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসারও অনেক শিক্ষার্থী সহিংসতার শিকার হয়েছে। অনেকে চিকিৎসাধীন। এই বাস্তবতা বিবেচনায় রেখেই পরীক্ষা নেয়া যেত।

যারা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, তাদের পরীক্ষা পরবর্তীতে বিশেষ ব্যবস্থায় নেয়া যেত। যারা একেবারেই পরীক্ষা দেওয়ার মতো অবস্থায় নেই, তাদেরকে বিশেষ বিবেচনায় এসএসসির ফলাফল এবং যে পরীক্ষাগুলো হয়েছে সেগুলোয় প্রাপ্ত নম্বরের আলোকে মূল্যায়ন করা যেত। এগুলো ব্যতিক্রম হিসেবে বিবেচিত হতো। কিন্তু পরীক্ষার্থীদের অধিকাংশই শারীরিকভাবে সুস্থ।

অনেকের সহপাঠী ও বন্ধু আহত নিহত হওয়ায় তাদের মধ্যে একধরনের ট্রমা কাজ করছে এটা ঠিক। কিন্তু ট্রমা আছে বলে তো আর জীবন থেমে থাকে না। মানুষ তার বাবা-মায়ের মতো সবচেয়ে আপনজন হারিয়েও দিব্যি বেঁচে থাকে। কিছুদিন কষ্ট হয়। সেই শোক সামলে নিতে হয়। সুতরাং সরকার যে সেপ্টেম্বরের শেষদিকে অবশিষ্ট পরীক্ষাগুলো নেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিল, সেটিই যৌক্তিক। এখান থেকে সরে আসার কোনো মানে হয় না।

কিছু শিক্ষার্থী ও পরীক্ষার্থী সচিবালয়ে ঢুকে বিক্ষোভ করল আর সঙ্গে সঙ্গে পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত দিয়ে দেয়া হলো। সরকার যদি এই সিদ্ধান্তে অটল থাকে, তাহলে এটি শিক্ষা প্রশাসন তো বটেই, অন্তর্বর্তী সরকারের জন্যও একটি বড় দুর্বলতা হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।

সুতরাং যে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের মতো একজন খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদ, যিনি অর্থনীতির বাইরেও একজন সজ্জন, সংস্কৃতিবান ও সৎ মানুষ হিসেবে পরিচিত— তার মন্ত্রণালয় এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্তটি পুনর্বিবেচনা করবে বলে আশা করি। না হলে এটি ২০২৪ সালের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের জীবন ও ক্যারিয়ারে একটি দাগ হয়ে থাকবে। তারা আজীবন একধরনের আত্মগ্লানিতে ভুগবে। তাদের মনে হবে ইশ, পরীক্ষাগুলো দিতে পারলে আরও বেশি নম্বর পেতাম! বেশি নম্বর পেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে আরেকটু এগিয়ে থাকতাম। তার চেয়ে বড় কথা, প্রায় অর্ধেক পরীক্ষা দিলেও সারা জীবন তাদের শুনতে হবে ‘অটোপাশ’। এটি তাদের বিরাট মানসিক যন্ত্রণার কারণ হবে। অন্তর্বর্তী সরকার কেন সেই দায় নেবে?

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটেগরিতে আরো খবর
Japan Bangla Press © 2025. All Rights Reserved.
Built with care by Pixel Suggest