এমনই এক ঘটনা প্রত্যক্ষ করলো দক্ষিণ তাজিকিস্তানের শাহরিতাসের সাধারণ মানুষ। সম্প্রতি বলশেভিক বিপ্লবের প্রাণপুরুষ লেনিনের ভাস্কর্য শহরের প্রাণকেন্দ্রে স্থাপন করেছেন, নিরীশ্বরবাদী কমিউনিষ্টরা নয়, ঈশ্বরবিশ্বাসী দক্ষিণ তাজিকিস্থানের ইমামেরা সাপ্তাহিক দান হিসাবে মসজিদে সংগৃহীত অর্থ জমিয়েই তারা এই ভাস্কর্য স্থাপন করেছেন৷ রেডিও ওজোদি তাজিক ভাষায় প্রচারিত সংবাদে এমনটাই জানিয়েছে।
১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর তাজিকিস্তানের শাসকবর্গ একে একে সোভিয়েত আমলে স্থাপিত কমিউনিষ্ট নেতাদের নানা ভাস্কর্য সরিয়ে তার জায়গায় সোভিয়েত–পূর্ব জমানার প্রতিক্রিয়াশীল নেতাদের ভাস্কর্য স্থাপন করতে থাকে৷ শহরের কেন্দ্রস্থলে লেনিনের এই ভাস্কর্যটি দক্ষিণ তাজিকিস্তানের সর্ববৃহৎ ভাস্কর্যই শুধু নয়, একে ঘিরে জনগণের আবেগও যথেষ্ট৷ তাই ২০১৬ সালে বর্তমান শাসকেরা ভাস্কর্যটি সরিয়ে দিলেও সেই জায়গায় অন্য কোনও ভাস্কর্য স্থাপন করতে সাহস পায়নি৷
শাহরিতাস মসজিদের ইমাম রেডিও ওজোদিকে জানিয়েছেন, তারা নিজেরাই লেনিনের ভাস্কর্য বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷ দু’বছর ধরে তারা অর্থ সংগ্রহ করেছেন এবং আশেপাশের মসজিদগুলিও এই কাজে সহযোগিতা করেছে৷
তাজিকিস্তান মধ্য এশিয়ার দরিদ্র রাষ্ট্রগুলির অন্যতম৷ সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর দেশটির অর্থনৈতিক অবস্থা ধীরে ধীরে খারাপ হতে থাকে৷ ২০০১–এর ২১ আগস্ট রেডক্রস দেশটিকে দুর্ভিক্ষ আক্রান্ত বলে ঘোষণা করে৷ বর্তমানে দেশটিতে ব্যাপক দুর্নীতি, অব্যবস্থা ইত্যাদি ছেয়ে রয়েছে৷ সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা অত্যন্ত অবহেলিত৷ এই রকম একটা সময়ে তারা কেনো অর্থ সংগ্রহ করে লেনিনের ভাস্কর্য স্থাপন করলেন, সাংবাদিকদের এই প্রশ্নের উত্তর সরাসরি না মিললেও দেশের সোস্যাল মিডিয়াকে উদ্ধৃত করে রেডিও ওজোদি জানাচ্ছে, কিছু বিরুদ্ধ মত থাকলেও অনেকেই বিষয়টির সমর্থনে এগিয়ে এসেছেন৷ সোভিয়েত আমলের তুলনায় বর্তমানে সর্বক্ষেত্রে নিম্নগামী জীবনযাত্রার মানকে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু করেছেন দেশের মানুষ৷ মুহোজির নামে এক যুবক মন্তব্য করেছেন, এটা একদম ঠিক কাজ করেছেন ইমামরা৷ লেনিন না থাকলে শুধু তাজিকিস্তানই নয়, সমগ্র মধ্য এশিয়া আজও আফগানিস্তানের মতো শিক্ষাবঞ্চিত এবং সবদিক থেকে অনুন্নত এলাকা হয়ে থাকতো। ওজোদি নিউজে মতামত দানকারীদের মধ্যে একজনের মন্তব্য উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি বলেছেন, “এটাই আমাদের ইতিহাস যাকে স্বীকার করে নেওয়া উচিত এবং আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের এই ইতিহাস জানা দরকার।” এ প্রসঙ্গে একটি তথ্য উল্লেখ করা যায়৷ পুঁজিবাদী ব্যবস্থার পৃষ্ঠপোষকরা একটি অপপ্রচার ব্যাপক আকারে ছড়ায় যে, কমিউনিষ্টরা মানুষের ধর্মাচরণে বাধা দেয়৷ অথচ বাস্তব সত্য ঠিক তার উল্টো৷ ১৯১৭ সালে সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়ন গঠিত হওয়ার পর মহান লেনিন ‘টু অল দি ওয়ার্কিং মুসলিমস অফ রাশিয়া’ শিরোনামে একটি ঘোষণাপত্র প্রকাশ করেছিলেন৷ সেখানে বলা হয়েছিলো, নিজেদের বিশ্বাস অনুযায়ী, নিজেদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য অনুযায়ী ইসলাম ধর্মাবলম্বী মানুষ নিজেদের জীবন গড়ে তুলতে পারবেন৷ সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা এতে বাধা সৃষ্টি করবে না৷ এটা তাদের অধিকার৷
Leave a Reply