1. editor1@japanbanglapress.com : editor1 :
  2. japanbanglapress@japanbanglapress.com : japanbanglapress :
  3. mdzahidulislam1000@gmail.com : zahid :

রাষ্ট্রের ধর্ম নাকি মানুষের ধর্ম:- সামনে না পিছনে হাটা-সাইফুর রহমান কায়েস

  • আপডেটের সময় : বুধবার, ২৮ আগস্ট, ২০২৪

রাষ্ট্রের কোনো ধর্ম থাকে না, কে কোনো ধর্ম পালন করবে সে দায়িত্ব নির্ধারণ করা রাষ্ট্রের কাজ নয়। যেখানে নিজস্ব ধর্ম পালনের সাংবিধানিক স্বাধীনতা রয়েছে সেখানে বিতর্কের সুযোগ নাই।

রাষ্ট্র একটি স্বাধীন নৈতিক এবং সার্বভৌম সত্ত্বা। রাষ্ট্রের কাজ হচ্ছে আইন প্রণয়ন, আইনের শাসন নিশ্চিত করা। ইউরোপ কিন্তু রাষ্ট্র থেকে ধর্মকে আলাদা করতে পেরেছে। আর আমরা রাষ্ট্রের কেন্দ্রে ধর্মকে আকড়ে ধরে বিভেদের চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছি এশিয়ানরা।
ধর্ম প্রত্যেকের নিজস্ব বিষয়। এর উপর রাষ্ট্রীয় মালিকানা আরোপ করতে গিয়েই আমরা অতীতে দাঙ্গা সংঘটিত করেছি। আর কতো?

ইউরোপের পথ ধরে আফ্রিকার অনেক দেশই রাষ্ট্র থেকে ধর্মকে পৃথক করতে শুরু করেছে। ঘানা তার উজ্জ্বল স্বাক্ষর

আমাদের সমস্যা হচ্ছে আমরা নিজেদের নির্দ্বিধায় মানুষ বলে ভাবতে পারি না। তাই আমি খালি হিন্দু দেখি, মুসলমান দেখি কিন্তু মানুষ দেখি না।
আমি পশ্চিম আফ্রিকার নাইজেরিয়া ও ঘানাতে মাইক্রোফিন্যান্স কন্সাল্টেন্ট হিসেবে কাজ করার সুবাদে দেখেছি তাদের সন্তানেরা প্রাপ্ত বয়স্ক হবার আগ পর্যন্ত কোনো ধর্মেরই দীক্ষা গ্রহণের প্রবণতা কম। তাদের বেশীরভাগই আঠারো বছর পূর্ণ হবার পরে ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিচার বিশ্লেষণ করে তারা ধর্মীয় জীবনযাপন করার সুযোগ সাংবিধানিকভাবে লাভ করে থাকে। অথচ তাদের দেশেও শরীয়া আইন কঠোরভাবে অনুসৃত হচ্ছে। সকতুর সুলতানকে তারা সবাই শ্রদ্ধা করে, ঘানার গ্র‍্যাণ্ড ইমাম শোয়াইবুকেও সবাই সম্মান করে। আবার খ্রিস্টান ধর্মগুরু ক্রিস আকিনওলাকেও সবাই সম্মান করে। ধর্মীয় আচার আর ব্রত পালন সেখানে কোনো বাধা হয়ে দাড়ায় নি। খ্রিস্টান মুসলমান একই পরিবারে সমভাবে, সম-সম-অধিকারের এবং মর্যাদার ভিত্তিতে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করে। ইন্টার ম্যারেজ এখানে আইনসিদ্ধ এবং সামাজিকভাবে স্বীকৃত। ধর্মে জবরদস্তি না থাকার বিষয়টি তাদের মধ্যে আমি দেখেছি। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থাকে নিজ নিজ ধর্ম পালনের যে সৌন্দর্য আমি দেখেছি সেটিতে আমি মুগ্ধ। একেই বোধহয় সেকুলারিজম বলে। আমরা কি আমাদের নিকটজনকে সে স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে পেরেছি? কেউ পৈতৃক আরোপিত ধর্ম ত্যাগ করে সনাতন বা ইসলাম বা অন্য ধর্মে বা পেগানে রূপান্তরিত হলে তাকে প্রাণভয়ে দেশ ত্যাগ করতে হয়। তাহলে আমরা কিসের ভিত্তিতে দাবী করবো দেশের সংবিধান সেক্যুলার হবে? হিন্দু যেমন মেনে নেয় না ইসলাম গ্রহণ করলে আবার ঠিক মুসলমান কেউ অন্য ধর্মে দীক্ষিত হোক তাও চায় না। আমাদের সমাজের পরিকাঠামো একে ট্যাবু বলে ট্যাগ লাগিয়ে দিয়েছে। জীবনের প্রয়োজনে ধর্ম, ধর্মের প্রয়োজনে জীবন নয় কিংবা প্রত্যাশাও করি না। যতোদিন আমরা ধর্মের প্রয়োজনে জীবনযাপন করতে থাকবো ততোদিন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হতেই থাকবো।
আমি মনে করি যারা রাষ্ট্রের সাংগঠনিক কাঠামোর মধ্যে ধর্মকে জুড়ে দিতে চান তারা অন্যের সাংবিধানিক স্বাধীনতা ও অধিকারকে পদানত করতেই মরিয়া হচ্ছেন। আমাদেরকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে আমরা কি সামনের দিকে হাটবো নাকি রি দুর্বৃত্তায়িত সমাজের প্রতিরন্ধ্রে বিষবৃক্ষ রোপণ করবো?
আফ্রিকানদের একই পরিবারে নানা মতের নানা ধর্মের মানুষের সৌহার্দপূর্ণ বসবাস মানবিকতার পরিচয় বহন করে। সামাজিক ঐক্যের দিকে থেকে, রাষ্ট্রীয় ঐক্যের দিক থেকে তারা সবাই এক ও অভিন্ন। তারা পেরেছে কিন্তু আমরা কেনো পারি নি। উত্তরের পেছনে রাজনীতির নোংরা খেলা কাজ করে। মানুষকে সহজেই দাবিয়ে রাখা যায় ধর্মের দোহাই দিয়ে। ভোটের রাজনীতির মাঠ গরম করে মদনদ কব্জা করার মতো সোয়াব হাসিল করা যায়। রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়া যায়। তাই তো কারো খাদ্যাভ্যাসকে অন্যের খাদ্যে অনভ্যাসের দ্বন্ধ বাধিয়ে কতো মানুষের প্রাণসংহার করা হয়েছে সে হিসাব কি মনে আছে? এসব খেলা বন্ধ করার সময় এখনই।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটেগরিতে আরো খবর
Japan Bangla Press © 2025. All Rights Reserved.
Built with care by Pixel Suggest