নিউজ ডেস্ক, ঢাকা: বগুড়ার আদালতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ ৩৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করতে এসে ইউটিউবার আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলম হামলার শিকার হয়েছেন। আদালত থেকে নামার সঙ্গে সঙ্গে একদল উচ্ছৃঙ্খল যুবক তাকে টেনেহিঁচড়ে বের করে লাঞ্ছনা ও মারপিট করেন। রবিবার বেলা ১২টার দিকে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত চত্বরে এ হামলার ঘটনা ঘটে।
হিরো আলম জানান, সাবেক স্বৈরাচারীদের বিরুদ্ধে মামলা করতে এসে তারেক রহমানকে কটূক্তি করার অভিযোগে বিএনপির লোকজনের হামলার শিকার হলেন। তিনি ভিডিও ফুটেজ দেখে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করবেন।
বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে উপ-পরিচালক ডা. আবদুল ওয়াদুদ জানান, আহত হিরো আলম সার্জারি বিভাগে ভর্তি হয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হিরো আলম বগুড়ার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ভবনের পঞ্চমতলায় চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করার পর নিচে নেমে আসেন। বেলা ১২টার দিকে ২০-২৫ জনের একদল দুর্বৃত্ত আদালত চত্বরে তার ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের বিরুদ্ধে কটূক্তির অভিযোগ তুলে তাকে প্রকাশ্যে মারপিট ও কানধরে ওঠবস করানো হয়। এ সময় সঙ্গে থাকা লোকজন তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা মনে করেছিলাম, ২০২৪ সালে দেশ স্বাধীন হয়েছে। স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারকে সরিয়েছি, এখন স্বাধীনভাবে চলাফেরা করবো; কিন্তু দেশ স্বাধীন হয়নি। বিএনপির লোকজন আজকে যে হামলা করলো তাতে কি মনে করেন দেশ স্বাধীন হয়েছে?’
হামলাকারীদের উদ্দেশে হিরো আলম বলেন, ‘বিএনপির লোকজনকে বলি আমাকে মেরে ফেলবেন মারেন, কোনও অসুবিধা নেই। আমি হিরো আলম মৃত্যুকে ভয় পাই না; পারলে মেরে ফেলেন। একজন হিরো আলম মরলে শত হিরো আলমের জন্ম হবে। বিনা অপরাধে আমাকে হত্যার চেষ্টা করেছে। সবার চেহারা দেখেছি; সবার বিরুদ্ধে মামলা করবো। বিএনপির লোকজন ক্ষমতায় না আসতেই তাদের পাওয়ার বেড়ে গেছে।’
তিনি দাবি করেন, ‘বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভীর বিরুদ্ধে জীবনে একটা মামলা করেছিলেন। আর ডিবি হারুন তাকে ও তার পরিবারকে ট্র্যাপে ফেলে সেই মামলা করতে বাধ্য করেছিলেন। যা আমি আগেই বলেছি। বিএনপির লোকজন কীভাবে আমার ওপর হামলা চালিয়ে মারধর করলো সেটি আপনারা ভিডিওতে দেখবেন। বিএনপি ক্ষমতায় না আসতেই আমাদের ওপর পাওয়ার দেখালো, তারা ক্ষমতায় এলে দিনের বেলায় মানুষকে জবাই করবে।
বিএনপির লোকজন এখনই ভাববেন না আপনারা প্রধানমন্ত্রী হয়ে গেছেন। মারধরের বিচার একদিন বাংলার মাটিতে হবে। যারা মারধর করেছেন, তাদের একজনও বাঁচতে পারবে না। আমি হিরো আলম মারা যাবো কিন্তু মাথানত করবো না।’
হিরো আলম আরও বলেন, ‘প্রিয় দেশবাসী আপনারা ভিডিও ফুটেজ দেখেছেন, বিএনপির লোকজন আজকে আমার ওপর হামলা করেছে। একটা স্বৈরাচারকে দেশ থেকে তাড়িয়েছি; আরেকটা স্বৈরাচার আসছে। এটি তার প্রমাণ। তারা বলছে, আমি নাকি তারেক রহমানের নামে কিছু বলেছি। আপনারা ফুটেজ দেখিয়ে তারপর মারধর করেন।
‘আজ আমি স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করতে এসেছি। আমি আওয়ামী লীগের লোক হলে বিএনপির লোকজনের কথা বলতাম। ওবায়দুল কাদেরের বিরুদ্ধে মামলা করতে আসতাম না। ওবায়দুল কাদের, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল, আমার প্রতিদ্বন্দ্বী জাসদ নেতা রেজাউল করিম তানসেন, আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার হোসেন রানাসহ মোট ৩৯ জনের নামে মামলা করেছি। আমি কী বিএনপির লোকের বিরুদ্ধে মামলা করতে এসেছি? আপনাদের ওপর যারা হামলা করেছে, তাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে এসেছি; অথচ আজ আপনারা আমাকে মারধর করলেন। তাতে কী বোঝা যাচ্ছে? আপনার দেশ ক্ষমতায় নেই, তারপরও এমন দাপট দেখাচ্ছেন? দেশ ক্ষমতায় আসলে আপনারা আরও কী করবেন?’
হিরো আলম তার ওপর হামলার ঘটনায় সারা বিশ্বের মানুষের কাছে বিচার দাবি করেছেন।
Leave a Reply