হযরত সেকান্দার শাহ্ ইয়ামেনি (র) দুই শত বছর পূর্বে বাংলাদেশে ইসলাম প্রচার করার উদ্দেশ্যে আসেন৷
তার মৃত্যুর পর তাকে গুলিস্তান এলাকার নিমগাছতলি স্থানে সমাহিত করা হয়। তখন মাজারটি নিমগাছতলীর মাজার হিসেবেই পরিচিতি পায়৷ এর কয়েক দশেক পর হযরত গোলাপ শাহ্ (র) নামে এক সূফী এখানে আসেন এবং সারা জীবন সেকান্দার শাহ্ বাবার খেদমতে কাটিয়ে দেন। মৃত্যুর পর তাকে সেকান্দার শাহ্ এর ডান পাশে সমাহিত করা হলে এই মাজারের নাম হয়ে যায় গোলাপ শাহর মাজার। গোলাপ শাহও ইসলাম প্রচারেই এসেছিলেন৷
ঢাকার প্রায় দুইশত বছরের ইতিহাসের সাথে মাজারটি জড়িত রয়েছে৷ অসংখ্য ভক্ত আশেকান মাজারে আসে মানত করতে৷ তারা দান করে৷ লোহার শিকের জালির ভিতর দিয়ে ভিতরে টাকা ফেলা হয়৷ প্রতিদিন গড়ে ৮/১০ হাজার টাকা জমা পড়ে৷ প্রতি ৫০ দিন পর টাকা গননা করে ব্যাংক হিসাবে রাখা হয়৷ কমবেশি ৪ লক্ষ টাকা পাওয়া যায়৷
হঠাৎই উগ্র মৌলবাদীরা মাজারটি ভাঙার জন্য উস্কানি দিচ্ছে৷ এর আগেও মৌলবাদীরা এটি ভাঙার চেষ্টা করেছে৷ ইসলামে সুফিবাদের প্রভাবও প্রায় ১৪শ বছরের৷ অসংখ্য সুফিসাধক ইসলাম প্রচারে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছেন৷ এর অসংখ্য তরিকা রয়েছে৷ ভারত বর্ষে ওহাবী মতাদর্শ আসে কট্টরতা নিয়ে এবং মূলত এরপরই মানুষ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ ছেড়ে দেয়৷ যে সুফিদের হাত ধরে এখানকার মানুষ মুসলিম হয়েছেন আজ কট্টরতায় সেই সুফিদেরই মাজারসহ সমূলে উচ্ছেদ করতে চায় জঙ্গিবাদীরা৷ জঙ্গিরা মুসলিমদের মারাত্মক বিপদে ফেলে দিয়েছে৷ এরা মানুষ হত্যা করে বিশ্বের কাছে মুসলিমদের খুনি বানিয়েছেন, নির্দয়-বর্বর বানিয়েছেন৷ উগ্রপন্থীদের উত্থানে বিশ্বজুড়ে মুসলিমরা ঘৃণার পাত্রে পরিণত হয়েছেন৷ এসব হত্যা, খুন, আক্রোশ মুসলিমদের অনবরত ক্ষতি করে চলছে৷
মাজার নিয়ে আমার কোন অনুরাগ বা বিরাগ নাই৷ সুফিদের অধিকার রয়েছে তাদের বিশ্বাস নিয়ে থাকার৷ শরিয়তিরা যেমন তাদের বিরুদ্ধে কিছু বললে অনুভূতিতে আঘাত পান ঠিক তেমনি সুফিদের উচ্ছেদ করলে তারাও আঘাত পান৷ সবারই অধিকার রয়েছে তার ভাবনা প্রকাশ করার৷ তাহলে কেউ যদি মাজারে গিয়ে শান্তি পায় আপনার অসুবিধা কি? আপনি যদি মনে চরেন আপনিই ঠিক পথে আছেন, থাকেন অসুবিধা নেই৷ অন্যরাও যখন ভাবে আপনি ভুল পথে আছেন তাহলে কেন তার কল্লা কাটতে চান? খুবই অন্যায় কাজ৷ স্রষ্টাকে যদি সত্যিই মানেন তবে এটাও মানেন যে, স্রষ্টাই তাদের বাঁচিয়ে রেখেছেন এবং রিজিকের ব্যবস্থা করেছেন৷ তাহলে স্রষ্টার ইচ্ছার বাইরে গিয়ে কেন তাদের হত্যা করবেন? যার যার ধর্ম যদি তার তার হয় তবে সুফিদের বিরক্ত করতে কি পারেন? বৈষ্ণব, শৈব, নাথ, সুফি, সুন্নী, শিয়া, আহাম্মদি, ইয়াজেদি… থাকুক যার যার বিশ্বাস নিয়ে৷ কেউ দোজখে যেতে চাইলে আপনার অসুবিধাটা কি? আপনার বেহেস্তে যেতে তো তারা কেউ বাধা দিচ্ছেন না৷
Leave a Reply