স্পোর্টস ডেস্ক: ক্রিকেটের দুই ফরম্যাট থেকে অবসর প্রসঙ্গে বাংলাদেশ দলের অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান মনে করেন তিনি সঠিক সময়ে তিনি সঠিক সিদ্ধান্তটাই নিয়েছেন। তিনি বলেছেন, তিনি খুশি। তার কোনো অনুশোচনা নেই।
বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ দল যখন ভারতের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে মাঠে নামার পরিকল্পনা করছে, তখন অনেকটা হঠাৎ করেই এলো সাকিবের থেমে যাওয়ার ঘোষণা।
টি-টোয়েন্টিতে আর দেখা যাবে না তাকে, টেস্ট থেকে বিদায় নিবেন আর ক’দিন পরে; ঘরের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজ দিয়ে।
ভারতের বিপক্ষে কানপুর টেস্টে মাঠে নামার আগে এই সিদ্ধান্ত জানালেন সাকিব। বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে নিজেই এই ঘোষণা দেন ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা এই অলরাউন্ডার।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সময়ই অবশ্য গুঞ্জন উঠেছিল, এই আসরেই শেষ টি-টোয়েন্টি খেলতে যাচ্ছেন সাকিব। তবে তখন কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি। তবে প্রায় তিন মাস পর বিষয়টি নিশ্চিত করলেন সাকিব।
ফলে বিশ্বকাপের সুপার এইটে আফগানিস্তানের বিপক্ষে খেলা ম্যাচটাই হয়ে থাকলো সাকিবের শেষ আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। ফলে ভারতের বিপক্ষে আসন্ন টি-টোয়েন্টি সিরিজেও দেখা যাবে না সাবেক নাম্বার ওয়ান এই অলরাউন্ডারকে।
নিজের থেমে যাওয়া প্রসঙ্গে সাকিব বলেন, ‘আমার মনে হয় টি-টোয়েন্টিতে আমি আমার শেষ ম্যাচ খেলে ফেলেছি, মিরপুর টেস্টে (দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে) খেলতে পারলে সেটি হবে আমার শেষ টেস্ট। আমি অন্তুত দুটি সংস্করণে আমার শেষ দেখছি।’
তবে কোনো মান-অভিমান নয়, সাকিব মনে করেন সঠিক সময়ে তিনি সঠিক সিদ্ধান্তটাই নিয়েছেন। তিনি স্পষ্টই বলেছেন, ‘আমি খুশি। কোনো অনুশোচনা নেই। জীবনে কখনো অনুশোচনা ছিল না। যত দিন উপভোগ করেছি, আমি ক্রিকেট খেলেছি।’
‘আমার মনে হয়েছে, এটা বাংলাদেশ ক্রিকেট ও আমার জন্য সঠিক সময়, যে কারণে এই সিদ্ধান্তগুলো নেয়া। কোচ, অধিনায়ক, নির্বাচক, বোর্ড—সবার সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া,’ যোগ করেন সাকিব।
বিদায় বেলায় সমর্থকদের উদ্দেশে সাকিব বলেন, ‘তারা আসলে সবসময় সাপোর্ট করেছে, তাদের জন্য মনে হয় সবসময় খেলতে থাকি। কিন্তু সবকিছুরই একটা শেষ আছে। তাদের সমর্থনের জন্য আমি তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই। তাদের শর্তহীন ভালোবাসা বা যে ভালবাসা, যে সাপোর্ট তারা আমাকে দিয়েছে আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।’
অবশ্য টি-টোয়েন্টিতে শেষটা সুখকর হয়নি তার। বল হাতে ছিলেন সেই ম্যাচে উইকেট শূন্য, ব্যাট হাতেও মারেন গোল্ডেন ডাক। সেই সাথে সেমিফাইনালে উঠার লড়াইয়ে রশিদ খানদের কাছে হেরে যায় বাংলাদেশও।
অবশ্য শেষটা মনের মতো না হলেও ক্যারিয়ার জুড়ে সাকিব ছিলেন রঙধনুর মতো রঙিন। ২০০৬ সালের নভেম্বরে খুলনায় জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি অভিষেক হয় সাকিবের। বৃহস্পতিবার ইতি টানার আগে তিনি খেলেছেন ১২৯ ম্যাচ।
যেখানে ব্যাট হাতে ২ হাজার ৫৫১ রান করেছেন। কোনো সেঞ্চুরি না থাকা সাকিবের ৫০ ছোঁয়া ইনিংস আছে ১৩টি। বল হাতে ইতিহাসের তৃতীয় সর্বোচ্চ ১৪৯ উইকেট মালিক সাকিব। দীর্ঘদিন ছিলেন আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টির সর্বোচ্চ উইকেট শিকারীও।
অন্যদিকে বিদায় ঘোষণা করা আরেক ফরম্যাট টেস্টে ২০০৭ সালের মে মাসে চট্টগ্রামে ভারতের বিপক্ষে অভিষেক হয় সাকিবের। দেড় দশকের ক্যারিয়ারে ৭০ টেস্ট খেলেছেন তিনি। যেখানে ৩৮.৩৩ গড়ে ৪ হাজার ৬০০ রান করেছেন তিনি। আছে ৫ সেঞ্চুরি ও ৩১ হাফ সেঞ্চুরি।
বল হাতে সাকিব শিকার করেছেন দেশের হয়ে সর্বোচ্চ ২৪২ উইকেট। ইনিংসে ১৯বার ৫ উইকেট এবং ম্যাচে ১০ উইকেট নিয়েছেন দুবার। দুই ফরম্যাটেই অলরাউন্ডা র্যাঙ্কিংয়ে যুগের পর যুগ শ্রেষ্ঠত্বের সিংহাসন ধরে রেখেছেন সাকিব।
অধিনায়ক হিসেবেও সাকিব আল হাসান ছিলেন অন্যতম সেরা। ভিন্ন ভিন্ন মেয়াদে মোট ৩৯টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। যেখানে বাংলাদেশের জয় ২৬ ম্যাচে। টেস্টে ১৯ ম্যাচ নেতৃত্ব দিয়ে সাকিব জিতেছেন ৪ ম্যাচে।
টি-টোয়েন্টি আর টেস্টের সাথে ওয়ানডে ক্রিকেটেও নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলেছেন সাকিব। জানিয়েছেন, চ্যাম্পিয়নস ট্রফি শেষে ওয়ানডে ফরম্যাটে বিদায়ের মধ্য দিয়ে নিজের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকেই সরে দাঁড়াবেন সাকিব।
Leave a Reply