বলেছিলাম, আপনি হেঁটে গেলেই পাশাপাশি হাঁটে বাংলাদেশ! সেই বাংলাদেশ আজ স্থবির দাঁড়িয়ে আছে, কিছু শকুন ঠিক একাত্তরের মতোই, নখর বসাচ্ছে, ধর্ষিতার মৃতদেহে! বৃক্ষে বৃক্ষে পোস্টার সেঁটে , বলা হচ্ছে আগামী ষোলো তারিখ, এই বাড়ির তরুণীদের তুলে নেয়া হবে! গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে মাজার! যে শাফাত বাউল, এই মাজারে বসে গান গাইতেন-তাঁর সাথে মন্দিরা বাজাতেন যে দীনেশ ঠাকুর, তাঁদের বিবস্ত্র করে তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে, গ্রাম থেকে। যে ভবতোষ ফেরিওয়ালা,বাজারে বাজারে বিক্রি করতেন লাল-সবুজ পতাকা, তাঁকে কানে ধরিয়ে উঠবস করিয়েছে সেই নিয়াজিসন্তানেরা! আর বলছে, বদলে দাও পতাকা বদলে দাও জাতীয় সংগীত! আপনি তাকিয়ে থাকলে, আপনার চোখে চোখ রাখতো যে বাংলার নদী, ওরাও বড় অভিমানী আজ! রাগে আর ক্ষোভে ভাসিয়ে নিতে চাইছে দুইকূল! দ্রোহে, বৃক্ষগুলো উপড়ে পড়ছে মহাসড়কে। পথ ভেঙে গিয়ে তৈরি করছে, স্বয়ংক্রিয় ভিন্ন ব্যারিকেড! তোফাজ্জলের মৃত্যুর খবর আপনি হয়তো শুনেছেন! তাঁকে খুন করার আগে, একপ্লেট ভাত ওরা খেতে দিয়েছিল! তিনি বলেছিলেন, ‘আপনাদের খাবার খুব ভালো’…কিন্তু হতভাগা তোফাজ্জল, জানতেন না- এটাই ছিল তাঁর জীবনের শেষ আহার! এক পা হারা, যে আব্দুল্লাহ মাসুদ,তাঁর নবজাত কন্যার জন্যে দুধ আনতে বেরিয়েছিলেন, তাঁকে প্রকাশ্যেই খুন করেছে ওরা! একই ভাবে খুনের শিকার হয়েছেন মোল্লা শামীম, তাঁর অপরাধ, তিনি জয় বাংলা স্লোগান দিতেন। ইসহাক পান্নাকে সীমান্তেই খুন করেছে, আততায়ী বাহিনী। আপনার প্রিয় বিড়ালটি কোথায় আছে, কেউ জানে না। আপনার প্রিয় খরগোস ছানাটি কে নিয়ে গেছে, কেউ জানে না। লুটপাটের রাজত্বে,উল্লাস করছে মাফিয়া বাহিনী। বত্রিশ নম্বরের ছাই হাতে নিয়ে বৃদ্ধ মুক্তিযোদ্ধা আজমান আলী শুধুই বলেছেন, তবে কি দেখে গেলাম এই দ্বিতীয় হায়েনাকাল! গত সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের যে মঞ্চে দাঁড়িয়ে আপনি বিশ্বশান্তির পতাকা উড়িয়েছিলেন, সেই মঞ্চে এবার একজন দখলদারকে দেখেছে বিশ্ববাসী। তিনি বেশ সগর্বেই বলেছেন, ‘ এভ্রিথিং ওয়াজ ওয়েল প্ল্যানড’ যদিও তিনি জানাননি, ৭.৬২ রহস্য, কোথায় বসে কারা কারা এই প্ল্যান করেছিল! কে ছিল সেই ‘মাস্টারমাইন্ডের’ নেপথ্য জনক! সাঈদ কিংবা মুগ্ধ’র ছবি দিয়ে ফলক বানিয়ে বিশ্বনেতাদের হাতে তুলে দিচ্ছেন যে দাদনব্যবসায়ী, তিনি তার সুদের চক্রবৃদ্ধি করতে চাইছেন, বাড়াতে চাইছেন রাজনৈতিক পুঁজি- তা জেনে গিয়েছেন বাংলার মানুষ। জেনেছেন, বিশ্ববাসীও। তারা অবাক হয়ে দেখছেন, নিজেরাই খুনের নদী বইয়ে, কীভাবে গণঅভ্যুত্থানের নামেদখলদার হওয়া যায়! কিছু কিছু অসমাপ্ত কাজ, শেষ করার জন্যেই বেঁচে থাকতে হয়। কিছু আগুন বুকে নিয়েই শাসন করতে হয় আকাশ’কে। আর বলতে হয়, আমি তো তোমার পাশেই আছি প্রিয় জন্মভূমি ! আমি জানি, কোনো নির্বাসনইদীর্ঘ নয়। কোনো দীর্ঘশ্বাসই হাওয়ার গতির সমান্তরাল হয় না। তবু সময়ই নির্ধারণ করে, জীবনের কৌশল, মহাকাল, মানুষের হাতেই জমা রাখে সূর্যসম্প্রদায়! বাংলাদেশ আবার জেগে উঠবে। আবার বঙ্গবন্ধুর শাণিত আঙুলের মতো, ইশারা পেয়ে, খুলে যাবে সকল মহাসড়ক, আপনার জন্মদিন, হয়ে উঠবে বিশ্বের আপামর মুক্তিকামী মানুষের জন্মদিন- যারা একদিন ঠিক একাত্তরের মতোই, গর্জে উঠে বলেছিল,’কেউ আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবা না ‘।
Leave a Reply