নিউজ ডেস্ক, ঢাকা: ফ্ল্যাট নিয়ে বিরোধের জের ধরে বাসায় ঢুকে দীপ্ত টিভির সম্প্রচার বিভাগের কর্মকর্তা তানজিল জাহান ইসলাম তামিমকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে রাজধানীর হাতিরঝিলের মহানগর প্রজেক্ট এ ঘটনা ঘটেছে। যে ফ্ল্যাটে অতর্কিতভাবে ১০–১২ জন এই হামলা চালিয়েছে ওই ভবনের নিচতলায় পরিবারের সঙ্গে বসবাস করতেন তামিম। তার মৃত্যুতে কান্নায় ভেঙে পড়েন পরিবারের সদস্য এবং সহকর্মীরা। এই হত্যাকাণ্ডের জন্য তারা ডেভলপার মালিক ও তার ভাড়াটে বাহিনীকে দায়ী করেছেন।
তামিমের বাবা প্রকৌশলী সুলতান আহমেদ সমকালকে জানান– মহানগর প্রজেক্টের ডি ব্লকের ৪ নম্বর সড়কের ৭৯,৮০,৮১ প্লটের তিনজন অংশীদার। এর একজন হলেন সুলতান। প্লিজেন্ট প্রোপার্টিজ নামে একটি ডেভলপার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সেখানে বাড়ি তৈরির চুক্তি হয়। ১০তলা ভবন তৈরি হলেও চুক্তি মোতাবেক তার পাওয়া ৫টি ফ্ল্যাটের তিনটি বুঝিয়ে দিতে দীর্ঘ দিন ধরে গড়িমসি করছিল ডেভলপার প্রতিষ্ঠান। এ নিয়ে তিনি হাতিরঝিল থানায় জিডিও করেছিলেন। বৃহস্পতিবার ভবনের ৭–এ ফ্ল্যাটে তামিম কিছু করছিল। এসময় ১০–১২ জন অতর্কিতভাবে তামিমের ওপর হামলা চালায়। তার গলাটিপে ধরে। বুকে কিলঘুষি মারতে থাকে। এরপর তাকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যায়।
হাতিরঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম বলেন, মহানগর প্রজেক্টের ওই বাড়িটির ল্যান্ড ডোনার হচ্ছেন নিহত তামিমের বাবাসহ মোট তিনজন। তাঁদের সঙ্গে ডেভেলপার কোম্পানির দ্বন্দ্বের জেরে আজকে বাসার ভেতরে প্রবেশ করে বহিরাগতসহ ডেভেলপারদের লোকজন। সেখানে তর্কাতর্কির একপর্যায়ে তামিমের বুকে কিল ঘুষি ও মারধরের পরে গলা টিপে ধরে বলে জানা গেছে। ঘটনার পরপরই সেখান থেকে এক ইঞ্জিনিয়ারসহ তিনজনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে।
সাইফুল ইসলাম বলেন, বিস্তারিত ঘটনা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়েছে।
নিহত যুবক বেসরকারি গণমাধ্যম দীপ্ত টেলিভিশনের সম্প্রচার কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। গতকাল বৃহস্পতিবার রামপুরার মহানগর প্রজেক্টের চার নম্বর রোডের ডি-ব্লকের বাড়ির আট তলার একটি ফ্ল্যাটে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পরপরই লোকজন তামিমকে উদ্ধার করে মনোয়ারা হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানকার চিকিৎসকরা তাকে পরীক্ষার পর মৃত ঘোষণা করেন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে আসা নিহত তামিমের মামা মাসুদ করিম জানান, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) থেকে ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন তামিম। এরপর যোগ দেন দীপ্ত টিভির সম্প্রচার বিভাগে। মহানগর প্রজেক্টের বাড়িটির ৭ তলায় দুটি ফ্ল্যাট নিয়ে থাকেন তিনি ও তার পরিবার। প্লিজেন্ট প্রোপ্রার্টিজ লিমিটেড ডেভেলপার কোম্পানি তাদের মোট পাঁচটি ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তামিমরা যে ফ্ল্যাটে থাকতেন সেটি বুঝিয়ে দিচ্ছিল না। বিষয়টি নিয়ে বছর খানেক আগে একটি মামলাও করা হয়।
মাসুদ করিম বলেন, বুধবার ডেভেলপার কোম্পানির সঙ্গে তামিমদের একটি সমঝোতা হয়। আট তলায় দুটি ফ্ল্যাট তাদের দেওয়ার কথা জানানো হয়। সে অনুযায়ী বৃহস্পতিবার সকালে আট তলার ফ্ল্যাটে লেবার দিয়ে কিছু কাজ করাচ্ছিলেন তামিম। তখন হঠাৎ ডেভেলপার কোম্পানির ব্যবস্থাপক আব্দুল লতিফ মির্জা, তার সন্ত্রাসী বাহিনী ফ্ল্যাটে অতর্কিত হামলা চালায়। তামিমকে মারধর করতে থাকে তারা। চিৎকার শুনে তামিমের বড়ভাই ছুটে আসলে তাকেও মারধর করে চলে যায় তারা। তখন জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে কল করে পুলিশের সহায়তা চান ভুক্তভোগীরা। পুলিশ আসার আগেই তামিমকে উদ্ধার করে মনোয়ারা হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।
Leave a Reply