নিউজ ডেস্ক, ঢাকা: কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর অনেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঢাকায় আবারও প্রকাশ্যে তাদের অপরাধ কর্মকাণ্ড শুরু করেছে। কয়েকজন আত্মগোপনকারী সন্ত্রাসীও ধীরে ধীরে জনসমক্ষে ফিরে এসেছে। পুরোনো অপরাধ সাম্রাজ্য পুনঃস্থাপনের চেষ্টায় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় মহড়া দিচ্ছে তারা। ব্যবসায়ীদের কাছে চাঁদা দাবি এবং হুমকি দেওয়ার অভিযোগও পাওয়া যাচ্ছে। গত মাসে ঢাকায় ঘটে যাওয়া এক জোড়া খুনের ঘটনায়ও এক শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম উঠে এসেছে।
গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মগবাজারের বিশাল সেন্টারে দলবল নিয়ে মহড়া দেন শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন। একটি দোকান দখলকে কেন্দ্র করে সেখানে যান তিনি এবং বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথাও বলেন। এই ঘটনায় সেখানে আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি হয়।
অপরদিকে মোহাম্মদপুরে শীর্ষ সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালের তৎপরতাও লক্ষ্য করা গেছে। জামিনে মুক্তি পাওয়ার পরপরই দুই যুবককে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় তার বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর থানায় মামলা হয়েছে। পুলিশ বলছে, রাজনৈতিক পরিস্থিতি বদলের পর ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সন্ত্রাসীদের মধ্যে সংঘাত বেড়ে গেছে। পিচ্চি হেলাল এখনো গ্রেপ্তার না হলেও কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) মো. ইসরাইল হাওলাদার বলেন, মোহাম্মদপুরের খুনের ঘটনায় পিচ্চি হেলাল গ্রেপ্তার না হলেও দু-তিনজন গ্রেপ্তার হয়েছেন। অন্য শীর্ষ সন্ত্রাসীদের ওপরও পুলিশের নজরদারি রয়েছে। শীর্ষ সন্ত্রাসী হোক বা যে-ই হোক, অপরাধ করে কেউ পার পাবে না।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তত ছয়জন আলোচিত শীর্ষ সন্ত্রাসী জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। তাদের মধ্যে আছেন ‘কিলার আব্বাস’ নামে পরিচিত মিরপুরের আব্বাস আলী, সুইডেন আসলাম নামে পরিচিত শেখ মোহাম্মদ আসলাম, পিচ্চি হেলাল, ইমন ও টিটন। তারা সবাই ঢাকার অপরাধ জগতের গুরুত্বপূর্ণ নাম। এদের মধ্যে অনেকেই দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।তবে সবচেয়ে আলোচিত নাম হলো সুব্রত বাইন, যার বিরুদ্ধে এখনো ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারি রয়েছে। একসময় ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর তাকে সেখানে থাকার খবর শোনা যেত। কিন্তু সরকারের পতনের পর জানা যায়, তিনি দেশে ফিরে এসেছেন এবং একটি গোপন স্থানে অবস্থান করছেন।
ঢাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসীদের পুনঃতৎপরতায় ডিস-ইন্টারনেট ব্যবসা, পরিবহন, দরপত্র নিয়ন্ত্রণ, ফুটপাত, বাজার, এবং জমি দখলসহ নানা খাতে চাঁদাবাজি নতুন করে বৃদ্ধি পেয়েছে। পুলিশ বলছে, সন্ত্রাসীরা আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত এবং তাদের হাতে আগের সরকারের পতনের সময় লুট হওয়া অস্ত্রও পৌঁছেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক তৌহিদুল হক বলেছেন, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সুযোগ নিয়ে শীর্ষ সন্ত্রাসীরা আবারও সংগঠিত হচ্ছে এবং এলাকাভিত্তিক আধিপত্য বিস্তার করতে চাইছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এই বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।
তৌহিদুল হকের মতে, শীর্ষ সন্ত্রাসীদের অনেকে পরিস্থিতি বুঝে এখন রাজনৈতিকভাবে পরিচিতি পাওয়ার চেষ্টা করেন। এ কারণে রাজনৈতিক দল ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তাঁদের বিষয়ে কঠোর অবস্থানে থাকতে হবে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার নাইম আহমেদ বলেছেন, শীর্ষ সন্ত্রাসীদের মধ্যে যারা কারাগারের বাইরে অবস্থান করছেন, তাদের ওপর সার্বক্ষণিক গোয়েন্দা নজরদারি রাখা দরকার। এ কাজ ঠিকভাবে করতে না পারলে সামনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাবে।
Leave a Reply