1. editor1@japanbanglapress.com : editor1 :
  2. japanbanglapress@japanbanglapress.com : japanbanglapress :
  3. mdzahidulislam1000@gmail.com : zahid :

জাপানে কেন চালের ঘাটতি দেখা দিয়েছে

  • আপডেটের সময় : সোমবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২৪

নিউজ ডেস্ক, জাপান: জাপানের সুপারমার্কেটগুলিতে চালের সরবরাহে ঘাটতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আগস্ট মাসের শেষ নাগাদ এনএইচকে’র একজন সদস্য টোকিওর একটি দোকানে যান, সাধারণত প্রায় ১০ রকমের চাল সেখানে কিনতে পাওয়া যায়। কিন্তু সেই দোকানেও কেবল একই রকম চালের ১৬টি ব্যাগ পড়েছিল, যার ফলে মাথা পিছু মাত্র একটি ব্যাগ কেনার সীমা বেঁধে দেয়া হয়।

জুলাই মাসের শেষ পর্যন্ত চালের মজুদ গত বছরের একই মাসের তুলনায় ৩২ শতাংশ কম। কেবল চরম আবহাওয়াই নয়, অন্যান্য কিছু অপ্রত্যাশিত কারণ দেশের প্রধান খাদ্যশস্যের সরবরাহ ও চাহিদা উভয়কেই প্রভাবিত করেছে।

চালের ঘাটতি দেখা দেয়ার অন্যতম একটি কারণ হলো ক্রমবর্ধমান সংখ্যক বিদেশি পর্যটকদের জাপান ভ্রমণে আসা। এদের মধ্যে অনেকেই কেবল মাত্র সুশি নয়, তার সাথে ভাত দিয়ে তৈরি অন্যান্য খাবার, যেমন: ওনিগিরি রাইস বল এবং দোনবুরি রাইস বোল খেতেও আগ্রহী। এই খাবারগুলোর জনপ্রিয়তাও ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

টোকিওর কেন্দ্রেভাগে অবস্থিত একটি ওনিগিরির দোকানে ইদানিং আগত ক্রেতাদের অর্ধেকের বেশি হলো বিদেশি পর্যটক। সেখানকার কর্মীরা বিভিন্ন ধরনের ওনিগিরি তৈরি করে সঙ্গে সঙ্গেই লোকজনকে বিক্রি করছেন। দোকানটির ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা কিমোতো এইজি বলেন, “আগত পর্যটকদের কারণে চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য আমরা অত্যন্ত কৃতজ্ঞ।”

ভূমিকম্প সতর্কতা

সুপারমার্কেটের খালি তাকগুলির পিছনে আরেকটি কারণ হলো ভূমিকম্প। আগস্ট মাসের শুরুতে মিইয়াযাকি জেলায় আঘাত হানা একটি ভূমিকম্প সরকারকে এক সপ্তাহের জন্য একটি মহাভূমিকম্পের পরামর্শ জারি করতে প্ররোচিত করেছিল। সেই সতর্কতা, যা ছিল মূলত জাপানের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে নানকাই খাদে একটি বিশাল ভূমিকম্পের উচ্চতর সম্ভাবনা সম্পর্কে এক বার্তা, তা অন্যান্য প্রয়োজনীয় পণ্যের সাথে চালের চাহিদাও ব্যাপকভাবে বাড়িয়ে দেয়।

এছাড়াও এই গ্রীষ্মে শক্তিশালী তাইফুনের কারণে ভোক্তাদের অনেকেই বেশি করে চাল কিনে ঘরে মজুত রাখার সিদ্ধান্ত নেন।

একদিকে চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে, আবার অন্যদিকে চাহিদার সাথে সামঞ্জস্য রেখে সরবরাহ বৃদ্ধি পায়নি। প্রধান চাল উৎপাদনকারী এলাকাগুলোর কয়েকটি স্থানে গ্রীষ্মের প্রচণ্ড তাপ এবং কিছু জায়গায় পর্যাপ্ত পরিমাণ রোদের অভাবে ফসলের ক্ষতি হয়, যার ফলে গত বছর ফলন কমে গেছে।

বৈশ্বিক সমস্যা

জাপানের সীমানার বাইরের কারণগুলি সমস্যাটিকে আরও জটিল করে তুলেছে। ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণ এবং দুর্বল ইয়েন আমদানি করা গমের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে, যার ফলে রুটি এবং নুডলস আরও ব্যয়বহুল হয়ে উঠেছে। একারণে দেশের ভিতর চাষ করা শস্যকেই ভোক্তাদের জন্য আরও সাশ্রয়ী এবং আকর্ষণীয় বিকল্প হিসাবে দেখা হচ্ছে।

জাপান গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বিশেষজ্ঞ মিওয়া ইয়াসুফুমি বলেন, এই সমস্ত কিছু একসাথে বছরের এমন এক সময়ে ঘটছিল, যখন চালের সরবরাহ সাধারণত সবচেয়ে কম থাকে।

মিওয়া বলেন, “এটা বছরের এমন এক সময় যখন গত বছরের চাল সরিয়ে নিয়ে এই বছরের নতুন চাল দিয়ে পরিবর্তন করে নেয়া হয়। এসময় সুপারমার্কেটগুলোতে খুব বেশি মজুত থাকে না কারণ তারা নতুন চাল আসার জন্য অপেক্ষা করে আছে। এসবকিছুর মধ্যেই কিছু লোক তাইফুন এবং ভূমিকম্পের বিষয়টি চিন্তা করে বেশি করে চাল কিনে ঘরে মজুত রাখছেন।”

নতুন প্রযুক্তি পরীক্ষা করা

জাপানের শীর্ষ ধান উৎপাদনকারী অঞ্চলগুলির মধ্যে অন্যতম হলো নিইগাতা জেলা। সেখানকার একজন কৃষক আওকি তাকুইয়া বলেন যে চলতি মাসে জাপানে ফসল কাটার মৌসুম শুরু হচ্ছে, যার ফলে পরিস্থিতি উন্নত হওয়ার দিকে এগোচ্ছে। ধান গাছগুলোকে বড় কোনোও প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখে পড়তে না হওয়ায় তারা ভালভাবে বেড়ে উঠছে।

গত বছর নিইগাতা জেলায় তাপমাত্রা রেকর্ড পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে ফসলের গুণমানকে তা প্রভাবিত করেছিল, যার ফলে অনেক শস্য সাদা এবং ঘোলাটে দেখতে লাগছিল।

আওকি “শিননোসুকে” নামের নিইগাতা জেলা উদ্ভাবিত এক ধরনের তাপ-প্রতিরোধী জাতের ধান চাষ করে জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। একইসাথে তিনি নতুন একটি ব্যবস্থার প্রচলন করেছেন যার মাধ্যমে তিনি গাছগুলোর উপর নজর রাখতে উপগ্রহ চিত্র ব্যবহার করে থাকেন। সার দেয়ার প্রয়োজন আছে কি না, এমন সব এলাকা শনাক্ত করতেও এই ব্যবস্থা তাকে সাহায্য করে থাকে।

তিনি বলেন, নতুন এই ব্যবস্থা এবং অন্যান্য উদ্ভাবনী পন্থা তাকে ভোক্তাদের জন্য নিয়মিত চালের সরবরাহ অব্যাহত রাখতে সাহায্য করে।

আওকির দেয়া আশ্বাস ভোক্তাদের মনে উদ্বেগ কমানোর জন্য যথেষ্ট না হলে, জাপানের কৃষিমন্ত্রী সাকামোতো তেৎসুশি’র কথা নিশ্চিতভাবে অবশিষ্ট সব সন্দেহ দূর করতে পারবে। সাম্প্রতিক এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন যে, এই বছরের ধান কাটার কাজ ভালোভাবে চলছে এবং শীঘ্রই মজুত পুনরুদ্ধার করা হবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত তিনি জনগণের প্রতি শান্ত থাকার এবং নিজেদের যেটুকু প্রয়োজন তার মধ্যে কেনাকাটা সীমাবদ্ধ রাখার পরামর্শ দেন।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটেগরিতে আরো খবর
Japan Bangla Press © 2023. All Rights Reserved.
Built with care by Pixel Suggest