1. editor1@japanbanglapress.com : editor1 :
  2. japanbanglapress@japanbanglapress.com : japanbanglapress :
  3. mdzahidulislam1000@gmail.com : zahid :

মাঝপথে নাটকের প্রদর্শনী বন্ধ ‘নিরাপত্তা’ বিবেচনায়: জামিল আহমেদ

  • আপডেটের সময় : রবিবার, ৩ নভেম্বর, ২০২৪

নিউজ ডেস্ক, ঢাকা: দর্শকের ‘নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে’ শিল্পকলা একাডেমিতে নাটকের প্রদর্শনী মাঝপথে বন্ধের সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে বলে জানিয়েছেন মহাপরিচালক সৈয়দ জামিল আহমেদ।

তিনি বলেছেন, পরিস্থিতি দেখে তার শঙ্কা হয়েছিল শিল্পকলা একাডেমিও ‘আক্রান্ত হতে পারে’।

আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাহারায় নয়, জনগণের আন্তরিক চেষ্টায় একটি ‘জনবান্ধব শিল্পকলা একাডেমি’ গড়ে তোলার প্রত্যাশাও রেখেছেন এই অধ্যাপক।

শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় শনিবার সন্ধ্যায় একদল ব্যক্তির বিক্ষোভের ‘মুখে দেশ’ আয়োজিত ‘নিত্যপুরাণ’ নাটকের প্রদর্শনী মাঝপথে বন্ধ করে দেন আয়োজকরা।

এ ঘটনা এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার মুখে পড়ে শিল্পকলা একাডেমি।

রোববার সকালে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এসে নাটক বন্ধের কারণ, ওই সময়ের পরিস্থিতি এবং করণীয় নিয়ে কথা বলেন শিল্পকলার মহাপরিচালক অধ্যাপক জামিল আহমেদ।

তিনি বলেন, “সাম্প্রতিক সময়ে দেশের ২২ জায়গায় শিল্পকলা একাডেমিতে হামলা হয়েছে। সেসব মাথায় ছিল। আর এখানে ভেতরে দর্শক ছিল। উত্তেজিত কেউ গিয়ে যদি দর্শকদেরও আক্রমণ করে বসে। দর্শকের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে আমরা প্রদর্শনী বন্ধ করি। আমি ভেতরে গিয়ে দর্শকের কাছে ক্ষমা চেয়েছি।“

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন বলেছেন, বিকাল থেকে নাটকের টিকেট বিক্রি শুরু হয়। এরপর সন্ধ্যা ৬টার দিকে একদল লোক শিল্পকলার গেইটের সামনে দেশ নাটকের সদস্য এহসানুল আজিজ বাবুকে ‘আওয়ামী লীগের দোসর’ আখ্যা দিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন।

পরে একাডেমির মহাপরিচালক জামিল আহমেদ গিয়ে বিক্ষোভকারীদের শান্ত করলে যথারীতি নাটকের প্রদর্শনী শুরু হয়। কিন্তু পরে বিক্ষোভকারীরা ফের সংগঠিত হয়ে নাট্যশালার গেইটের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন।

এক পর্যায়ে তারা গেইট ভেঙে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করলে মহাপরিচালক ‘দেশ নাটকের’ সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে প্রদর্শনী বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেন।

নিত্যপুরাণ নাটকের নির্দেশক ও নাট্যকার মাসুম রেজা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা থিয়েটারটা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু থিয়েটারকে রাজনীতির মধ্যে ফেলে আমাদেরকে নাটক বন্ধ করতে বাধ্য করা হল। আমরা বন্ধ করে চলে এসেছি।

“জামিল ভাই তো খুবই চেষ্টা করেছেন যেন নাটকটা শেষ করা যায়। কিন্তু আমাদেরকে বন্ধ করতে হল, এটা খুবই দুঃখজনক।”

মহাপরিচালক জামিল আহমেদ বলেন, “গতকাল আমি একটা খণ্ডযুদ্ধ করেছি। অনেক চেষ্টা করেছি নাটকের প্রদর্শনী যেন হয়। কিন্তু আমি হেরে গেছি। একটা খণ্ডযুদ্ধে হেরে গেছি। কিন্তু মূল যুদ্ধটা এখনো হারিনি।”

ঘটনার শুরু

গত ১৭ অক্টোবর নাট্যদল ‘দেশ নাটকের’ এহসানুল আজিজ বাবু তার ফেইসবুকে দেওয়া পোস্টে লেখেন, “আসুন আমরা সবাই এই দেশকে বাঁচাই, জয় বাংলা বলে এই বাংলাদেশবিরোধী, স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকারদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াই।”

পোস্টের সঙ্গে একটি ছবিও শেয়ার করেন তিনি, যেখানে অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও উপদেষ্টাদের ছবি ‘এডিট করে জিন্নাহ টুপি পরানো হয়েছে’ এবং তাদেরকে ‘রাজাকার’ আখ্যায়িত করা হয়েছে।

ওই পোস্ট ঘিরেই কিছু মানুষ জাতীয় নাট্যশালার সামনে আসেন বলে জামিল আহমেদের ভাষ্য।

তিনি বলেন, “যে পোস্টটি করা হয়েছিল, সেটি অত্যন্ত নিম্নরুচির। এটি বাবুকেও আমি বলেছি। আমি তাকে বলেছি, এভাবে নিম্নরুচির পোস্ট ফেইসবুকে না লিখে যুক্তি দিয়ে নাটক করুন। নাটকের মধ্য দিয়ে সরকারের সমালোচনা করুন।”

ঘটনার বর্ণনা করে জামিল আহমেদ বলেন, “সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চে শিল্পকলার আয়োজনে যাত্রা উৎসব চলছে। আমি এবং নাট্যকলা বিভাগের পরিচালক ফয়েজ জহির সেখানে ছিলাম। নাট্যশালার সামনে বিক্ষোভ হচ্ছে শুনে আমি যাই। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলি। তারা বলে, এহসানুল আজিজ বাবু স্বৈরাচারের দোসর। তার নাট্যদলের প্রদর্শনী করতে দেবে না।

“আমি তাদের বুঝিয়েছি, দেশ নাটকের জনা বিশেক সদস্যও জুলাই গণঅভ্যুথানে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছে। তাদের মধ্যে গুলিবিদ্ধও আছে।“

জামিল আহমেদ বলেন, “প্রথমে তারা মেনে নেয়, আমরা নাটকের প্রদর্শনী শুরু করতে বলি। কিন্তু পরে আবার বিক্ষোভ শুরু করে। তখন তারা উত্তেজিত হয়ে পড়ে। তাদের একজন নিজেকে রিকশাচালক পরিচয় দিয়ে জানায় যে জুলাই আন্দোলনে তিনি গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।”

শিল্পকলা একাডেমি ‘আক্রান্ত হওয়ার’ শঙ্কা তৈরি হয়েছিল মন্তব্য করে জামিল আহমেদ বলেন, “আমি এটাও বলেছি, আমার বুকের উপর দিয়ে যান। তখন আমাকে পাশ কাটিয়ে দেয়াল টপকে কয়েকজন ঢুকে পড়ে। যখন গেইট ভেঙে ফেলে, তখন আমরা দেশ নাটকের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে প্রদর্শনী বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতা নেওয়া হয়নি কেন?

এ ঘটনার সময় আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী সহযোগিতা কেন নেওয়া হল না প্রশ্নে জামিল আহমেদ বলেন, “মাত্র কিছুদিন আগেই গুলি চলেছে। আমরা আর দমনপীড়ন চাইনি। সেখানে বিক্ষোভ করতে যারা এসেছিলেন, তাদের মাঝেও দুজন ছিলেন জুলাই আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ, এর মধ্যে একজন রিকশাচালকও ছিলেন।

“আমি তাদের বুঝিয়েছি, শিল্পকলার কণ্ঠ যেন কেউ রোধ না করে। শেখ হাসিনার মত স্বৈরাচার আমরা হতে চাই না। আমি নাটক করে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছি। দুবার তাদের বোঝাতেও পেরেছিলাম। কিন্তু পরে আর পারিনি।”

একাডেমির ভেতরে সেনাবাহিনীর সদস্যরা অবস্থান করলেও তাদের সহযোগিতা কেন নেওয়া হয়নি জানতে চাইলে পাল্টা প্রশ্নে তুলে জামিল আহমেদ বলেন, “বল প্রয়োগ করে থামাবেন? নাকি কথা দিয়ে থামাবেন?

“এখানে যারা এসেছেন তারা গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তাদের কষ্টের কথা বলেছেন। তাদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীকে দাঁড় করিয়ে দেওয়াটা কি ঠিক ছিল? আমি মনে করেছি, এটা সেনাবাহিনীর জায়গা নয়।”

শেষের দিকে সেনাবাহিনীর একজন কর্মকর্তা সেখানে এসেছিলেন এবং সেনাবাহিনীর দুটি গাড়িও এসেছিল বলে জানান জামিল আহমেদ।

মহাপরিচালক বলেন, সেনাবাহিনীকে জনতার মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিতে তিনি চাননি।

শিল্পকলাকে বাঁচাতে হবে ‘জনগণকেই’

শিল্পকলাকে জনবান্ধব প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ার স্বপ্নের কথাও বলেন জামিল আহমেদ। তিনি বলেন, “গত এক মাসে এখানে এমন অনেক নাটকের দল নাটক করেছে, যাদের নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। আমি এবং আমার সহকর্মীরা বলেছি, তাদের নাটক করতে দিতে হবে। দর্শক তাদের নাটক দেখে বিবেচনা করবে, তাদের নাটক দর্শক দেখবে কী না।

“তারা কিন্তু নাটক করেছে। কোনো সমস্যা হয়নি। দেশ নাটকের ‘নিত্যপুরাণ’ নাটক নিয়েও আপত্তি ছিল না। উত্তেজিত জনতার আপত্তি কেবল একজন ব্যক্তিকে নিয়ে। পরে তারা দেশ নাটকের প্রদর্শনীও বন্ধের দাবি তোলে।”

‘জনগণকেই শিল্পকলার দায়িত্ব নিতে হবে’ মন্তব্য করে জামিল আহমেদ বলেন, “সেনাবাহিনীর পাহারায় নয়। জনগণই যেন শিল্পকলাকে রক্ষা করে। আমরা এমন জনবান্ধব শিল্পকলা চাই।

“আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই বলে আসছি, “শিল্প-সংস্কৃতিকে রাষ্ট্রের কেন্দ্রে বিবেচনা করতে হবে। সংস্কৃতি খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে।”

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটেগরিতে আরো খবর
Japan Bangla Press © 2023. All Rights Reserved.
Built with care by Pixel Suggest