নিউজ ডেস্ক, ঢাকা: অবৈধ অভিবাসীদের ধরতে মালয়েশিয়ায় সাঁড়াশি অভিযান চালাচ্ছে দেশটির ইমিগ্রেশন বিভাগ। রাজধানী কুয়ালালামপুরসহ অন্যান্য প্রদেশে প্রতিদিন চলছে ধরপাকড়। অভিযানে শত শত অবৈধ অভিবাসীকে গ্রেফতার বা আটক করা হচ্ছে।
দেশটির ইমিগ্রেশন বিভাগ জানায়, মালয়েশিয়ায় কোনোভাবেই অবৈধ অভিবাসীদের থাকতে দেয়া হবে না। চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে এসব অভিবাসীদের নিজ নিজ দেশে ফেরত যেতে হবে। অন্যথায় কঠোর ব্যবস্থা নেবে সরকার।
ইমিগ্রেশন সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালে অবৈধভাবে থাকা বিদেশি অভিবাসীদের বৈধ করতে রিক্যালিব্রেশন ২.০ প্রকল্প হাতে নেয় দেশটি। এই প্রকল্পের মাধ্যমে নিবন্ধন করে অবৈধ অভিবাসীদের বৈধ হওয়ার সুযোগ দেয়া হয়। এরপর দফায় দফায় ওই প্রকল্পের মেয়াদও বাড়ানো হয়। সর্বশেষ চলতি বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত যারা বৈধ হতে পারেনি তারা গ্রেফতার আতঙ্কে রয়েছেন।
দেশটির বৈধকরণ কর্মসূচির রিক্যালিব্রেশন তালিকায় বাংলাদেশ বরাবরই শীর্ষে থাকে। গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর কর্মসূচির শেষ ধাপে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের ৪ লাখেরও বেশি শ্রমিক নিবন্ধন করে বলে জানিয়েছে মালয়েশিয়ার সরকার। তবে নানা জটিলতায় অনেক অবৈধ বাংলাদেশি এই প্রকল্পের সুযোগ নিতে পারেনি।
এরপর শ্রমিকদের বৈধ হওয়ার সুযোগ দিতে কূটনৈতিক তৎপরতা চলে। শেষমেষ দেশটির সরকার বৈধকরণের একটি বিশেষ প্রোগ্রাম শুরু করে। সেই প্রোগ্রামে ১৫০০ রিঙ্গিত দিয়ে কোম্পানির মাধ্যমে ৩১ মার্চের মধ্যে নিবন্ধিত হওয়ার সুযোগ পান।
এর পাশাপাশি চলতি বছরের ১ মার্চ থেকে শুরু হয় অভিবাসী প্রত্যাবাসন কর্মসূচি (পিআরএম)। এ কর্মসূচির মাধ্যমে অবৈধ অভিবাসীদের দেশে চলে যাওয়ার আহ্বান জানায় দেশটির সরকার। ১ মার্চ থেকে শুরু হওয়া এই প্রত্যাবাসন কর্মসূচির মাধ্যমে স্বেচ্ছায় ৫০০ রিঙ্গিত জরিমানা দিয়ে চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত নিজ দেশে ফিরতে পারবেন অভিবাসীরা।
বেঁধে দেয়া এই সময়ের মধ্যেও অবৈধ অভিবাসীদের ধরতে সাঁড়াশি অভিযান চলছে। বৈধ পারমিট ছাড়া কাজ করা বা ভ্রমণ ভিসা নেই এমন বিদেশিদের ধরতে দেশটির হটস্পটগুলোতে অভিযান চালানো হচ্ছে। এতে প্রতিদিনই বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, ভারত, পাকিস্তান ও ভিয়েতনামের নাগরিকরা আটক হচ্ছেন।
এর ফলে দেশটিতে অবৈধভাবে অবস্থান করা বাংলাদেশিদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। নানা জটিলতায় প্রায় ১ লাখেরও বেশি বাংলাদেশি দেশে ফিরতে পারে। রেমিট্যান্সে এর প্রভাব পড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ইমিগ্রেশন বিভাগ জানায়, প্রত্যাবাসন কর্মসূচির অধীনে চলতি বছরের ৯ জুন পর্যন্ত ৭০ হাজার ৩৭৯ জন অবৈধ অভিবাসী নিজ দেশে ফিরতে নিবন্ধন করেছেন। এদের মধ্যে ৬১ হাজার ৫৪ জন নিজ দেশে ফিরেছেন। তবে এর মধ্যে কতজন বাংলাদেশি রয়েছেন তা জানা যায়নি।
অন্যদিকে, অনলাইন অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে প্রতিদিনই ইমিগ্রেশন অফিসে ভিড় করছেন হাজারো অবৈধ অভিবাসী। এই কর্মসূচির আওতায় বিভিন্ন দেশের কাগজপত্রহীন ৩ থেকে ৪ লাখ অবৈধ অভিবাসী শাস্তি ছাড়াই নিজ দেশে ফিরতে পারবে বলে জানায় কর্তৃপক্ষ।
নিজ দেশে ফিরতে হলে এসব অভিবাসীদের ইমিগ্রেশন বিভাগের অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে হবে। এর জন্য ওয়ানওয়ে এয়ার টিকিট ও পাসপোর্ট নিয়ে যেতে হবে। পাসপোর্ট না থাকলে নিজ নিজ হাইকমিশন থেকে তাদের ট্রাভেল পারমিট সংগ্রহ করতে হবে। এরপরে ইমিগ্রেশন বিভাগে ৫০০ রিঙ্গিত জরিমানা দিয়ে স্পেশাল পাস সংগ্রহ করতে হবে। এর ১৪ দিনের মধ্যে দেশে ফিরতে পারবে অবৈধ অভিবাসীরা। দেশে ফেরা প্রবাসীদের তালিকায় বাংলাদেশিদের সংখ্যা বেশ লম্বা হবে বলে মনে করছেন অনেকে।
সম্প্রতি কুয়ালালামপুরের বাংলাদেশ হাইকমিশন এ বিষয়ে একটি নোটিশ জারি করেছে। তাতে বলা হয়, টিকিট প্রাপ্তি, ইমিগ্রেশনের অনলাইনে এপয়েন্টমেন্ট গ্রহণে দীর্ঘ লাইনের কারণে শেষ সময়ে অন্যান্য জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। ফলে দেশে যেতে ইচ্ছুক বাংলাদেশিদের শেষ সময়ের জন্য অপেক্ষা না করার অনুরোধ জানানো হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ কর্মসূচির আওতায় যারা দেশে ফিরছেন তাদের বেশিরভাগই কর্মহীন বা প্রয়োজনীয় কাগজপত্রবিহীন। এদের মধ্যে অনেকেই সম্প্রতি কলিং ভিসায় দেশটিতে এসে প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ না পেয়ে প্রতারণার শিকার হয়েছেন।
Leave a Reply