বিশ্বের প্রায় সকল দেশে রাষ্ট্রীয় ঐক্যের স্লোগান আছে ! রাষ্ট্র প্রধান, সরকার প্রধান বা রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের আনুষ্ঠানিক বক্তব্যের শেষে সেটি উচ্চারিত হয় !
বাংলাদেশে সরকারিভাবে তেমনটি না থাকায় ২০১৬ সালে এক আবেদনের প্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত ২০২০ সালে ‘জয় বাংলা’কে জাতীয় স্লোগান হিসেবে রায় প্রদান করেন !
২০২২ সালে তৎকালীন সরকারের মন্ত্রী পরিষদের সভায় তা অনুমোদিত হয় এবং গেজেট আকারে প্রকাশিত হয় !
‘জয় বাংলা’ এখন কোনো দলীয় স্লোগান নয়– জাতীয় স্লোগান ! প্রত্যেক নাগরিকের অধিকার আছে, ‘জয় বাংলা’ ধ্বনি দেওয়ার ! এজন্য তাঁকে কোনোভাবেই ভর্ৎসনা, হয়রানি বা শারীরিক লাঞ্ছনা করা যাবে না ! যদি না সে চুরি, ডাকাতি, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি, হত্যা, লুন্ঠন ধর্ষণের সময় এই স্লোগান উচ্চারিত করে !
‘জয় বাংলা’ শব্দ যুগলটি বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম ১৯২২ সালে সর্বপ্রথম ব্যবহার করেন ! ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসকের বিরুদ্ধে কবিতা লেখার অপরাধে তাঁকে বন্দি করা হয় ! কারাগারের ভিতরে তিনি ‘পূর্ণ অভিনন্দন’ নামে একটি গান রচনা করেন ! সে গানের এক স্থানে কবি ‘জয় বাংলা’ শব্দ যুগল ব্যবহার করেন ! “জয় বাংলার পূর্ণচন্দ্র, জয় জয় আদি-অন্তরীণ !”
এর ঠিক ৪৭ বছর পর, ১৯৬৯ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে ছাত্রলীগের নিউক্লিয়াস সভায় কয়েকটি ইতিবাচক সিদ্ধান্তে উল্লসিত হয়ে আফতাব উদ্দিন আহমেদ এবং চিশতী হেলালুর রহমান নামে দুজন ছাত্র ‘জয় বাংলা’ ধ্বনি দিয়ে ওঠেন ! উপস্থিত সদস্যরা প্রথমে হতচকিত হলেও পরক্ষণে তারাও এই ধ্বনির সাথে কণ্ঠ মিলায় !
১৯৬৯ সালের ৭ জুন পল্টন ময়দানে ছাত্রনেতা সিরাজুল আলম খান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উপস্থিতিতে প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে ‘জয় বাংলা’ ধ্বনি দেন ! স্লোগানটি শুনে বঙ্গবন্ধু খুশি হন ! পরবর্তীতে তিনিও প্রতিটি ভাষণ শেষে এই স্লোগানটি দিতেন !
সত্তরের নির্বাচনের আগে এই স্লোগানটি সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে এবং ছাত্র-জনতার মুখে মুখে ধ্বনিত হতে থাকে !
পাকিস্তানি স্বৈরশাসক এবং ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলো ‘জয় বাংলা’ ধ্বনি নিয়ে নোংরা রাজনৈতিক অপপ্রচার শহুরু করে ! কিন্তু তারা ব্যর্থ হয় ! বাঙালি জাতি তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করে !
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই স্লোগানের নিজস্ব একটা শক্তি আছে ! যা বাঙালিকে জাগ্রত করতে, ঐক্যবদ্ধ করতে, সংগ্রামী হতে, সাহস জোগাতে, অনুপ্রাণিত করতে, অন্যায়-অত্যাচার-অবিচারের প্রতিবাদ করতে, অধিকার আদায়ে সচেতন হতে, পরাধীনতার শৃঙ্খলমুক্ত হতে, মৃত্যুকে তুচ্ছ জ্ঞান করতে, মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে বিজয় ছিনিয়ে আনতে উদ্বুদ্ধ করে !
এই স্লোগান এখন বাংলাদেশ ছাড়িয়ে ভারতের কলকাতা, ত্রিপুরা, আসাম, ঝাড়খণ্ডেও ছড়িয়ে পড়ছে !
জয় বাংলা
Leave a Reply