1. editor1@japanbanglapress.com : editor1 :
  2. japanbanglapress@japanbanglapress.com : japanbanglapress :
  3. mdzahidulislam1000@gmail.com : zahid :
সাম্প্রতিক :
২৩-২৫ জানুয়ারি ঢাকায় বসছে জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মেলন সাশ্রয়ী মূল্যে খোলাবাজারে পণ্য বিক্রি বন্ধের সিদ্ধান্তে সরকার সংবিধান সংস্কার  অপচেষ্টার বিরুদ্ধে  যুক্তরাষ্ট্র অভিবাসী বিশিষ্টজনের নিন্দা ও প্রতিবাদ  শেষমুহূর্তে বাইডেনের ঘোষণা করা ক্ষমা বাতিল করবেন ট্রাম্প শপথ পরবর্তী ভাষণে যা বললেন ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শপথগ্রহণ কোটা : মেডিক্যালে ৪১ পেয়েই চান্স, ৭০ পেয়েও কাঁদছেন অনেকেই এআই দিয়ে তৈরি নকল ছবি শনাক্ত করবে গুগল সোমবার রাতে সুইজারল্যান্ড যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা আ. লীগকে নিষিদ্ধের পরিকল্পনা নেই সরকারের: প্রেস সচিব

তৃণমূলে কঠিন হয়ে গেছে স্থানীয় সরকারের সেবা

  • আপডেটের সময় : বৃহস্পতিবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২৪

নিউজ ডেস্ক, ঢাকা: সরকার পতনের পর থেকে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমির হোসেন রেজা কার্যালয়ে অনুপস্থিত। আত্মগোপন থেকে ফিরলেও তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাতে কৃষ্ণনগর গ্রামের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ইসলাম উদ্দিনের ভোগান্তির শেষ নেই।

তার জন্ম নিবন্ধন লাগবে, কিন্তু চেয়ারম্যান না থাকায় কদিন পরপর খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে।

ইসলাম উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার মত আরও অনেক মানুষের সমস্যা হচ্ছে।”

একই জেলার ছাতক উপজেলার সিংচাপইড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান যুবলীগ নেতা সাহেল উদ্দিন সরকার পতনের পর থেকে আর পরিষদে আসেন না। প্যানেল চেয়ারম্যান আব্দুল অদুদও নিয়মিত আসেন না।

ইউনিয়নের জিয়াপুর গ্রামের বাসিন্দা আমিনা খাতুন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তার এক আত্মীয়ের পাসপোর্টের জন্য জন্মনিবন্ধন সংশোধন করা লাগে। কিন্তু চেয়ারম্যান না থাকায় করাতে পারছেন না। অনেকদিন ধরেই ঘুরছেন।

ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের সদস্য মাসুক মিয়া বলেন, “চেয়ারম্যান পলাতক, প্যানেল চেয়ারম্যানও আসেন না, আমাদেরকেও আসতে দেওয়া হয় না। তাই আমরা নাগরিকদের কাজ করতে পারছি না। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে ডিসির কাছে লিখিত আবেদন করব।”

অন্তর্বর্তী সরকার করপোরেশন, জেলা ও উপজেলা পরিষদ এবং পৌরসভা ভেঙে দিয়ে প্রশাসক নিয়োগ দিলেও বলবৎ রয়েছে ইউনিয়ন পরিষদগুলো।

তবে ৪ হাজার ৫৭১টি ইউনিয়ন পরিষদে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত জনপ্রতিনিধিদের প্রায় সবাই আত্মগোপনে অথবা নানা মামলায় কারাগারে। তারা ইউনিয়ন পরিষদে না যাওয়ায় নাগরিকরা কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না।

জন্মনিবন্ধন, নাগরিক সনদসহ অন্যান্য জরুরি সেবা পেতে গিয়ে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে ইসলাম উদ্দিন আর আমিনা খাতুনদের। সামাজিক নিরাপত্তার ভাতা পেতে নাম নিবন্ধনের বিষয়টিও থমকে আছে।

সরকারের সিদ্ধান্ত, চেয়ারম্যানদের অনুপস্থিতিতে দায়িত্ব পালন করবেন প্যানেল চেয়ারম্যান। কিন্তু ইউনিয়নে প্যানেল চেয়ারম্যানও আত্মগোপনে।

মেয়ের জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করতে গিয়ে চরম ভোগান্তির শিকার হওয়ার কথা বললেন গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মাওনা ইউনিয়নের বাসিন্দা আবু তাহের। বিগত সরকারের ক্ষমতার শেষের দিকে জন্ম নিবন্ধনে হওয়া একটি ভুল সংশোধন করতে তিনি ইউনিয়ন পরিষদে গিয়েছেন মোট ছয় বার, আর উপজেলা পরিষদে গিয়েছেন দুইবার। চার মাস ঘুরে সংশোধিত কপি হাতে পেয়েছেন সপ্তাহ দেড়েক আগে।

মাওনা ইউনিয়নের চকপাড়া গ্রামের বাসিন্দা তাহের বলেন, “আসলে দেড় মাসের মত পরিষদ বন্ধই ছিল। একাধিকবার ইউনিয়ন পরিষদে ও উপজেলা পরিষদে গিয়েও কাজ করানো যায়নি।”

মাওনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম খোকন পলাতক। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে কাজ করছেন প্যানেল চেয়ারম্যান মো. মতিউর রহমান।

মতিউর রহমান বলেন, “গেজেট হওয়ার পর সম্ভবত নভেম্বর মাসের ১০ তারিখের দিকে হবে আমি দায়িত্ব পাই। এরপর থেকে প্রতিদিনই মানুষ নাগরিক সেবা পাচ্ছে। তবে ২১ ও ২২ তারিখ পরিষদের ওয়েবসাইট হ্যাকড ছিল। তখন অনলাইন কাজগুলো বন্ধ ছিল। এখন আবার সব ধরনের সেবা সচল আছে।”

তিনি বলেন, “সরকার পতনের পর দেশের সবকিছুর আমূল পরিবর্তনের কারণে নাগরিক সেবা দেওয়া সম্ভব হয়নি। ইউনিয়ন চেয়ারম্যান পলাতক আছেন আমরাও পরিষদে আসি নাই। তাই তখন সেবা প্রদানেরও সুযোগ ছিল না।”

কী কী কাজ হয় ইউনিয়ন পরিষদে

ইউপি চেয়ারম্যানরা বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতা বিতরণের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকেন।

ওয়ারিশ সনদ, চারিত্রিক সনদ, জন্মনিবন্ধন, মৃত্যুনিবন্ধনের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো ইউনিয়ন পরিষদ থেকে হয়ে থাকে। গ্রামে বিভিন্ন সালিশ, নতুন রাস্তা নির্মাণ, পুরোনো রাস্তা সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ ইউনিয়ন পরিষদ থেকে হয়ে থাকে।

জন্মমৃত্যুর সনদ ও নাম পরিবর্তনের মত কাজ বর্তমানে অনলাইনকেন্দ্রিক হলেও যাচাই-বাছাই করেন ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যরা।

চেয়ারম্যান আর প্যানেল চেয়ারম্যান না থাকলে একজন করে কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছে সরকার। তারা জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধকের দায়িত্ব পালন করবে।

তিনি যখন সার্টিফেকেট দেবেন, তখন সেটা যাচাই করে নিতে হয়। সে কাজ করছেন ইউপি সদস্যরা।

ভুক্তভোগীরা বলছেন, চেয়ারম্যানদেরকে সহজে পাওয়া যেত, তারা দ্রুত জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন দিয়ে দিতে পারতেন। কিন্তু এখন সেটা সহজ হচ্ছে না।

তবে নীলফামারীর ৬০টি ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে বলে দাবি করেছেন স্থানীয় সরকার বিভাগের জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. সাইদুর রহমান।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যেসব চেয়ারম্যান অনুপস্থিত, সেগুলোতে প্যানেল চেয়ারম্যানের মাধ্যমে সেবা নিশ্চিত করা হচ্ছে।”

ডিমলা উপজেলার পূর্বছাতনাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ খান অবশ্য নিয়মিত কার্যালয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেন,“জনগণের ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছি। তাদের কাছে আমার জবাবদিহিতা আছে। আমি সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত পরিষদে উপস্থিত থাকি।”

ইউপি চেয়ারম্যানদের অপসারণ হলে আন্দোলনের ডাক

সিটি করপোরেশন, পৌরসভার মত ইউনিয়ন পরিষদের প্রধানদেরও অপসারণের দাবি আছে।

তবে বাংলাদেশ ইউনিয়ন পরিষদ অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যসচিব ও রংপুর কাউনিয়া উপজেলার কুর্শা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ এই দাবির বিরোধিতা করছেন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “চেয়ারম্যানদের যদি অপসারণ করা হয়, তাহলে আমরা আন্দোলনে যাব, সারা দেশে সাত দিনের ভেতর সবকিছু ব্লক করে দেব।”

৬৫ শতাংশ চেয়ারম্যানই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জিতেছেন দাবি করে তিনি বলেন, “আমাদের দাবি একটাই, যেন অপসারণ করা না হয়।”

গত ১৬ অক্টোবর ঢাকায় সংবাদ সম্মেলনে ইউনিয়ন পরিষদ অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমজাদ হোসাইন আশরাফী বলেন, “বিভিন্ন মাধ্যমে শুনছি চেয়ারম্যানদের অপসারণ করা হতে পারে। এতে আমরা বিচলিত।

“আমাদের মোট ১ হাজার ২৩ জন চেয়ারম্যানের মধ্যে বেশিরভাগ স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান। আর নৌকার অল্প কিছু থাকলেও দেশের অন্য সকল দলের চেয়ারম্যানও রয়েছে। তাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের বাদ দেওয়া অন্যায় হবে। এমন ঘটনা বাংলাদেশের ইতিহাসের আর কখনও ঘটেনি।”

পৌরসভা কেমন চলছে

পৌর মেয়রদের অপসারণ করার পর ইউএনওকে সভাপতি করে সাত সদস্যের একটি কর্মসম্পাদনা কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই সদস্যদের ওয়ার্ডের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

ওয়ার্ডের কাউন্সিলর যারা ছিলেন তাদের ট্রেড লাইসেন্স থেকে শুরু করে অনেক ধরনের সনদপত্র দিতে হত, এগুলোতে মেয়রের আগে নিজ নিজ ওয়ার্ডের কাউন্সিলররা প্রথমে একটা প্রত্যয়নপত্র দিতেন।

এই প্রত্যয়ন দেওয়ার দায়িত্ব এসেছে এবার সরকারি কর্মকর্তাদের উপর, যা তাদের জন্য খুবই কঠিন। কারণ কাউন্সিলরদের নিজ ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের চেনাজানা ছিল। কিন্তু কর্মকর্তারা এমনকি এলাকারও না সবাই।ওয়ারিশসহ অন্যান্য সার্টিফিকেট যাচাই করা তাদের জন্য বেশ কঠিন।

এক্ষেত্রে বিভিন্ন এলাকায় স্থানীয়ভাবে গণ্যমান্যদের প্রত্যয়ন নেওয়া হচ্ছে। সমাজসেবা, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক, সরকারি হাইস্কুলের শিক্ষকদের একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এরপর সবাইকে জানিয়ে দেওয়া হবে এদের কাছ থেকে প্রত্যয়ন নিয়ে আসতে।

তবে নীলফামারী পৌরসভায় প্রশাসকের দায়িত্ব পাওয়া স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মো. সাইদুর রহমান দাবি করেছেন, এখন নাগরিক সেবা আরও সহজ হয়েছে।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “নাগরিক সেবা আগের তুলনায় অনেক সহজ করা হয়েছে। এজন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যথা সময়ে নিজ নিজ দপ্তরে উপস্থিত রাখা হচ্ছে।”

ভোগান্তিতে রয়েছে সিটি করপোরেশনের বাসিন্দারাও

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সিটি করপোরেশনের মেয়রদের অপসারণ করা হলেও কাউন্সিলররা দায়িত্বেই ছিলেন। পরে তাদেরকেও সরিয়ে দেওয়া হয়।

রংপুর সিটি করপোরেশনের ৩৩টি ওয়ার্ডে সরকারি কর্মকর্তাদের কাউন্সিলের দায়িত্ব পালন করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু এর সুফল মেলেনি।

এ নগরীর ২১ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা কাজল মিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার ছেলের জাতীয়তার সনদপত্রে সইয়ের জন্য আমাকে একমাস অপেক্ষা করতে হয়েছে। তাহলে আমরা কত ভোগান্তিতে পড়েছি বোঝেন।”

অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় এসে দেশের সব সিটি করপোরেশন ভেঙে দিয়েছে। তবে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফলাফলের বিরুদ্ধে মামলা জিতে এখন মেয়র হয়েছেন বিএনপি নেতা শাহাদাত হোসেন।

‘একটু ভোগান্তি হবেই’

স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “একটু ভোগান্তি তো হবেই। সারাদেশেই লোক পালিয়ে গেছে। বিকল্প দিয়ে যেহেতু করা হচ্ছে একটু হবেই।”

পৌরসভাতে যাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তারা কাজ করলে কোনো কাজ আটকে থাকার কথা না বলেও মনে করেন তিনি।

কিন্তু ভোগান্তি তো হচ্ছে, মানুষের কী হবে- এই প্রশ্নে তিনি বলেন, “স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন গঠন হয়েছে। তারা কাজ শুরু করেছে। প্রতিবেদন দিলে সরকার পদক্ষেপ নেবে। এরপর একটা পরিবর্তন আসবে।”

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটেগরিতে আরো খবর
Japan Bangla Press © 2025. All Rights Reserved.
Built with care by Pixel Suggest