নিউজ ডেস্ক, ঢাকা: যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে সরাসরি ‘ভারতকে অস্থিতিশীল’ করার চেষ্টার অভিযোগ করেছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দল ‘ভারতীয় জনতা পার্টি’(বিজেপি)।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদীকেও নিশানা করতে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ছায়া রাষ্ট্র’ (ডিপ স্টেট) কাজ করছে এবং তাদের পেছনে মার্কিন পররাষ্ট্রদপ্তর রয়েছে বলে দাবি করেছে তারা।
বিজেপি’র অভিযোগ, মার্কিন পররাষ্ট্রদপ্তর মিডিয়া গ্রুপ ‘অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড কোরাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্ট’ (ওসিসিআরপি)-এ অর্থায়ন করে ভারতকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। এই ওসিসিআরপি যুক্তরাষ্ট্রের ‘ডিপ স্টেট’- এর কর্মসূচি পরিচালনার হাতিয়ার (মিডিয়া টুল) হিসাবে কাজ করে।
বিজেপি’র আরও অভিযোগ, হাঙ্গেরিয়ান-আমেরিকান ব্যবসায়ী ও সমাজসেবী জর্জ সরোস এবং ভারতের বিরোধী দলীয় নেতা রাহুল গান্ধীর মধ্যে অশুভ আঁতাত আছে।
এই জর্জ সরোস, মার্কিন ‘ডিপ স্টেট’,মিডিয়া গ্রুপ ও মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় একদল অনুসন্ধানী সাংবাদিক এবং রাহুল গান্ধীর সঙ্গে মিলে একযোগে কাজ করছে। যদিও মিডিয়া গ্রুপ ওসিসিআরপি বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র সরকার অর্থায়ন করলেও তারা আসলে স্বাধীন প্রতিষ্ঠান।
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সরাসরি বিজেপি’র এমন অভিযোগ বিস্ময়কর। কারণ, গত দুই দশকে নয়াদিল্লি ও ওয়াশিংটনের মধ্যে দৃঢ় সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। এমনকি কিছু মতপার্থক্য ও ভিন্ন অবস্থান থাকার পরও উভয়েই সম্পর্ক আরও জোরদার করার অঙ্গীকার করেছে।
বৃহস্পতিবার বিজেপি জানিয়েছে, রাহুল গান্ধীর কংগ্রেস পার্টি আদানি গ্রুপের ওপর ‘এককভাবে ফোকাস করে’ ওসিসিআরপি’র নিবন্ধ ব্যবহার করেছে এবং সরকারের সঙ্গে তাদের কথিত ঘনিষ্ঠতাকে কাজে লাগিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদীর ভাবমূর্তি ক্ষুন্নের চেষ্টা করছে।
৬২ বছর বয়সী ভারতীয় ধনকুবের গৌতম আদানিদের বিরুদ্ধে গত মাসে অভিযোগ আনা হয় নিউ ইয়র্কে। ভারতীয় সরকারি কর্মকর্তাদের ঘুষ দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। সরকারি কাজ পেতে গৌতম আদানি ২৫ কোটি ডলার ঘুষ দেওয়ার ঘটনায় জড়িত ছিলেন বলে ধারণা করা হয়।
২৬৫ বিলিয়ন ডলার প্রকল্পের অংশ হওয়ার জন্য আদানি গ্রুপের চেয়ারম্যান গৌতম আদানি ও আরও সাতজনকে ভারতীয় সরকারি কর্মকর্তাদেরকে ঘুষ দেওয়ার জন্য অভিযুক্ত করে যুক্তরাষ্ট্র। তবে এসব অভিযোগ ‘ভিত্তিহীন’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে আদানি গ্রুপ।
ওদিকে, ওসিসিআরপি-র নিবন্ধে ভারতের রাষ্ট্রীয় মদদপুষ্ট হ্যাকারদের বিরুদ্ধে সরকারের সমালোচকদের টার্গেট করতে ইসরায়েলের তৈরি পেগাসাস স্পাইওয়্যার ব্যবহার করার অভিযোগও করা হয়েছে। সরকার এর আগে দুটি অভিযোগই অস্বীকার করেছে।
বিজেপি এর আগে রাহুল, ওসিসিআরপি এবং জর্জ সোরোসের বিরুদ্ধে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদীকে আক্রমণ করার অভিযোগ করেছিল।
বৃহস্পতিবার বিজেপি একটি ফরাসি মিডিয়া রিপোর্টের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছে, ওসিসিআরপি-কে অর্থায়ন করে ইউএস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এবং সোরোসের মতো অন্যান্য ছায়া রাষ্ট্রীয় ব্যক্তিত্বরা।
‘এক্স’-এ একাধিক বার্তায় বিজেপি বলেছে, “প্রধানমন্ত্রী মোদীকে নিশানা করে ভারতকে অস্থিতিশীল করাই যে মার্কিন ছায়া রাষ্ট্রর (ডিপ স্টেট) উদ্দেশ্য ছিল সেটি স্পষ্ট। আর এটি সবসময়ই মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এজেন্ডা। ওসিসিআরপি এই এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য ‘মিডিয়া টুল’ হিসাবে কাজ করেছে।”
বিজেপি’র জাতীয় মুখপাত্র ও আইনপ্রণেতা সম্বিত পাত্র বৃহস্পতিবার দলের আনুষ্ঠানিক সাংবাদ সম্মেলনে পুনরায় এ অভিযোগ করেন। তিনি জানান, একটি ফরাসি অনুসন্ধানী মিডিয়া গ্রুপর তথ্য অনুযায়ী, ওসিসিআরপি’র তহবিলের ৫০ শতাংশই সরাসরি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় থেকে আসে।
মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ইউএস এইড, সোরোস এবং কংগ্রেস পার্টি এ বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে মন্তব্যের অনুরোধে কোনও সাড়া দেয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রদপ্তরের বিরুদ্ধে ভারতের ক্ষমতাসীন দলের অভিযোগের বিষয়ে মন্তব্য করার অনুরোধেও সাড়া দেয়নি ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়।
সূত্র: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Leave a Reply