নিউজ ডেস্ক, ঢাকা: খুচরা বাজারে ভোজ্য তেল ছাড়া কিছু পণ্যের দাম স্থির রয়েছে আবার কমেছেও কয়েকটির। সপ্তাহের ব্যবধানে চাল, চিনি ও সবজির দাম কমতে শুরু করছে। এ ছাড়া ডিম, মুরগি ও গরুর মাংস আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে। গতকাল কারওয়ান বাজারসহ কয়েকটি বাজার ঘুরে এ চিত্র মিলেছে।
তেল নিয়ে ব্যবসায়ীদের তেলেসমাতি কাণ্ডে সরকারের আমদানি শুল্কছাড় কোনো কাজেই আসছে না। এতে দিন দিনই ভোজ্য তেলের বাজার নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে উঠছে। গত মাসের প্রথম সপ্তাহে ভোজ্য তেল আমদানিতে মূল্য সংযোজন কর ১০ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। এতে করে বাজারে তেলের সরবরাহ স্বাভাবিক ও দাম কমার কথা থাকলেও সেই চিত্র কোথাও নেই। ভোজ্য তেল প্রক্রিয়াজাতকারী করপোরেট কোম্পানিগুলো খুচরা বিক্রেতাদের সংশ্লিষ্ট কোম্পানির কম চাহিদাসম্পন্ন পণ্য নিতে বাধ্য করছে। অর্থাৎ কোনো কোম্পানির ভোজ্য তেল ছাড়াও যদি আটা, ময়দা, সুজি বা চিনি থাকে, তাহলে সংশ্লিষ্ট দোকানদারদের এর মধ্যে কম চাহিদাসম্পন্ন পণ্যটি কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে। আর দোকানদার তা নিতে অপারগতা প্রকাশ করলে কোম্পানির তেল তাদের দেওয়া হচ্ছে না। একই প্রক্রিয়ায় দোকানদার খুচরা ক্রেতাদের তেল কোম্পানির অন্য যেকোনো একটি পণ্য নিতে বাধ্য করছেন। ক্রেতা সেসব পণ্য নিতে অপারগতা প্রকাশ করলে তাদের লিটারপ্রতি ১০ টাকা বেশি দিতে হচ্ছে।
কারওয়ান বাজারের ইউসুফ স্টোরের স্বত্বাধিকারী ইউসুফ দেশ রূপান্তরকে জানান, ‘শর্ত দিয়ে তেল বিক্রি করতে গেলে কাস্টমারের সঙ্গে আমাদের বাগ্মিতায় জড়াতে হয়। এতে করে ব্যবসায়িক পরিবেশ নষ্ট হয়। তবে শর্তপূরণ না করলে কোম্পানিগুলো আমাদের তেল দিচ্ছে না। এতে বাজারে একধরনের সংকট তৈরি হয়েছে।’
কারা আপনাদের এসব শর্তে জড়াচ্ছে জানতে চাইলে ইউসুফ বলেন, ‘ফ্রেশ, পুষ্টি, তীরসহ প্রায় সব কোম্পানিই শর্ত দিয়ে তেল সাপ্লাই দিচ্ছে। তাতে এক কার্টন তেলের সঙ্গে এক বস্তা আটা, সুজি ও চিনি আমাদের কিনতে বাধ্য করছে। কিন্তু আমরা তো ক্রেতাদের কাছে এভাবে বিক্রি করতে পারছি না। তখন আমরা ক্রেতাদের কাছ থেকে লিটারপ্রতি ১০ টাকা বেশি নিচ্ছি।’
এদিকে চিনিতে শুল্কছাড়ের সুফল পেতে শুরু করেছেন ভোক্তারা। প্রতি কেজি প্যাকেট চিনি ১২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সপ্তাহখানেক আগে প্যাকেট চিনি ছিল ১৩৫ টাকা। সে হিসেবে কেজিতে কমেছে ১০ টাকা।
এদিকে আমনের সিজন শুরু হওয়ায় চালের চড়াভাব কমতে শুরু করেছে। এক সপ্তাহ ধরে স্বর্ণা ও পাইজাম (মোটা) জাতের চাল কেজিতে কমেছে ৩ থেকে ৪ টাকা। এসব চাল প্রতি কেজি ৫০ থেকে ৫৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সপ্তাহ দু-এক আগেও এসব চাল বিক্রি হতো ৫৪ থেকে ৫৫ টাকা। বাজারে সবচেয়ে বেশি বেচাকেনা হয় বিআর-২৮ ও পাইজাম চাল। এ জাতের চাল ৫৯ থেকে ৬২ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এই মানের চালের দর গত সপ্তাহে ছিল ৬০ থেকে ৬৫ টাকা। সে হিসেবে কেজিতে কমেছে সর্বোচ্চ ৩ টাকা। তবে চিকন চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ১ থেকে ২ টাকা।
বাজার এখন শীতের সবজিতে ভরপুর। পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকায় সব ধরনের সবজির দাম ১০ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত কমেছে। সরেজমিনে গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিভিন্ন সবজির বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি কাতলা শিম বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ৯০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। প্রতি কেজি মুলা বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা, করলা ৭০ থেকে ৮০, পটোল ৪০, দেশি পাকা টমেটো ৯০ থেকে ১০০, কাঁচা টমেটো ৪০, প্রতি পিস ফুলকপি ৩৫ থেকে ৪০, বাঁধাকপি ৩০ থেকে ৪০, প্রতি কেজি বেগুন ৬০ এবং ৮০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে কাঁচা মরিচ।
শান্তিনগর কাঁচাবাজারের সবজি ব্যবসায়ী কাইয়ুম দেশ রূপান্তরকে বলেন, সবজির বাজার ওঠানামার মধ্যে থাকে। যখন সরবরাহ ভালো থাকে, তখন বাজারে সব ধরনের সবজির দাম কম থাকে। তবে এবার একটু দেরি করেই সবজির দাম কমেছে।
অন্যদিকে বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে ডিম ও মুরগি। ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৭০ থেকে ১৮০ এবং সোনালি জাতের মুরগি ২৮০ থেকে ২৯০ টাকা। ফার্মের ডিমের ডজন বড় আকারের বাজারে ১৪৫ টাকায় বিক্রি হলেও মহল্লার দোকানিরা রাখছেন ১৫০ টাকা। এ ছাড়া গরুর মাংস কেজিপ্রতি ৭৩০ থেকে ৭৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
Leave a Reply