নিউজ ডেস্ক, ঢাকা: সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবির সদর দপ্তরে এক অনুষ্ঠানে গিয়ে পুলিশের বিশেষায়িত ফোর্স র্যাবের বিলুপ্তি দাবি করলেন কবি ও রাষ্ট্র চিন্তক ফরহাদ মজহার।
তিনি যখন এই দাবি করেন তখন মঞ্চে ছিলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী যিনি ফরহাদ মজহারের দাবির বিষয়ে নিজে থেকে কিছু বলেননি, সাংবাদিকদের প্রশ্নেও এ বিষয়ে মুখ খোলেননি।
‘জুলাই বিপ্লবে’ আহত কয়েকজনকে সহায়তা দিতে রোববার ঢাকায় পিলখানায় এই ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল বিজিবি।
ফরহাদ মজহার বলেন, “আপনারা খেয়াল করুন, যারা মানবাধিকারের কথা বলে, তারা দীর্ঘদিন ধরে র্যাবকে বিলুপ্তির কথা বলেছে।
“প্রথম যখন র্যাব গঠিত হয় তখন আমি লিখেছিলাম এই র্যাবের কারণে বিএনপির পতন ঘটবে আজকে বা কালকে। মূল ‘সমালোচনা’ হচ্ছে, এখানে সেনাবাহিনীর একজন সদস্যকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিয়ে এসে আপনি এমন কিছু কাজ করাচ্ছেন যেটা সৈনিক কখনও করে না, সেটা হচ্ছে নিরস্ত্র মানুষকে ‘এক্সট্রা জুডিসিয়াল কিলিং’ করা, সেটা সৈনিক কখনো করে না।
“সৈনিক মাত্রই সে সবসময় আরেকজন অস্ত্রধারীর বিরুদ্ধে লড়াই করে। সে কখনও নিরস্ত্র মানুষের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরে না। কিন্তু এটা আমরা আমাদের সংস্কৃতিতে ঢুকিয়েছি। ফলে আজকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাকে আমি বলব, অতি দ্রুত র্যাবকে বিলুপ্ত করেন।”
অনুষ্ঠান শেষে ফরহাদ মজহারের দাবির বিষয়ে প্রশ্নে সাংবাদিকদের প্রশ্নে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর মন্তব্য ছিল, “এ বিষয়ে আমি এখন কিছুই বলব না।”
শেখ হাসিনার আমলে ‘জনগণকে সৈনিকদের বিপক্ষে’ আবার ‘সৈনিকদের জনগণের বিপক্ষে’ ব্যবহার করা হত বলেও দাবি করেন ফরহাদ মজহার। তিনি বলেন, “এই পুরনো পদ্ধতি, যেখানে ‘ফ্যাসিস্ট’ শক্তি ধনী ও লুটেরাদের ‘পাহারাদার’ হিসেবে সৈনিকদের ব্যবহার করে। এই ব্যবস্থা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।
“আমাদের সৈনিকদের বুঝতে হবে তারা জনগণের পাহারাদার আর জনগণকে বুঝতে হবে সৈনিকরা আমাদেরই ভাই। এই মৈত্রীর ভিত্তিতে যদি আমরা দাঁড়াতে পারি তাহলে আমাদের সামনে ‘অনেক বড় বিপদ’ ধেয়ে আসছে।”
এই ‘বিপদটা’ সামরিক বাহিনীর চেয়ে বিজিবিই বেশি বুঝবে বলেও মন্তব্য করেন ফরহাদ মজহার। বিজিবিকে অতি দ্রুত ‘ফার্স্ট লাইন অব ডিফেন্স ফোর্স’ আকারে গড়ে তোলার আহ্বানও জানান তিনি। বলেন, “তারা সৈনিক, তারাই আমাদের রক্ষা করবেন।”
জনগণের সামরিক প্রশিক্ষণ দাবি
‘বর্ডার গার্ড’ শব্দটা ফরহাদ মজহারের কাছে ‘মোটেও সম্মানজনক’ মনে হয় না। তিনি বলেন, “আমরা চিনি বিডিআর, আমাদের প্রথম ফ্রন্টলাইন ডিফেন্স যারা শত্রুর গুলির মুখোমুখি হবেন তারা হচ্ছেন আপনারা। ফলে তাদেরকে অবশ্যই আমাদের জাতীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে।
“তাদের কাজ নয় পুলিশের অভাবে পুলিশের ভূমিকা পালন করা। পৃথিবীর কোনো রাষ্ট্র কিন্তু সৈনিকদের এভাবে অপব্যবহার করে না।”
বিজিবির অনুষ্ঠানে গিয়ে জনগণকে সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়ার দাবিও জানান ফরহাদ মজহার।
বিজিবির অনুষ্ঠানে গিয়ে জনগণকে সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়ার দাবিও জানান ফরহাদ মজহার।
জনগণকে বাধ্যতামূলকভাবে সামরিক শিক্ষা দেওয়ার তাগিদও দেন ফরহাদ মজহার। বলেন, “জনগণ বনাম সৈনিকের যে ‘দ্বন্দ্বটা’ ছিল, সেটা আমরা ৫ অগাস্ট ফেলে এসেছি অতীতে। এখন একজন সৈনিকও যেমন নাগরিক, একজন নাগরিকও তেমন সৈনিক। এখন আমাদের দ্রুতবেগে বাধ্যতামূলক সামরিক শিক্ষা দরকার। এখানে আমরা ১৭ কোটি সৈনিক। আমাদের সৈনিকেরাই সেই প্রশিক্ষণ দেবেন তরুণদের, আমাদের দেশকে রক্ষা করার জন্য।“
ভারতে ‘বাংলাদেশবিরোধী’ অপপ্রচার চলছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, “আমি মনে করি আজকে ভারত যে ‘প্রপাগান্ডা’ করছে এটা এক রকমের ‘সামরিক প্রস্তুতি’।
“আমরা খুবই বিপদের মধ্যে রয়েছি, আমরা যারা একটু চিন্তা করতে পারি, আমরা দেখেছি ইতিহাসকে। যদি আমাদের কথাগুলো একটু মনে নেন তাহলে বুঝবেন এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমি যে কথা বলছি এটা শুধুমাত্র হুঁশিয়ারি জানানোর জন্য না, প্রস্তুতির জন্য এই ডাকটা আমি দিয়েছি। আগামী দিনে সকলের সঙ্গে রাস্তায় কিংবা সীমান্তে দেখা হবে।”
ফরহাদ মাজহার বলেন, “আমরা জয়ী হয়েছি আর এখন সমস্ত ‘খুনিরা’ আছে ভারতে। বাংলাদেশে যারা এখন নেতৃত্বে রয়েছেন তাদের এই ‘ন্যূনতম কাণ্ডজ্ঞানটুকু’ আমরা আশা করি যে- দিল্লি শেখ হাসিনাকে ‘পুনর্বাসন করার’ পরিকল্পনা নিয়েই তাদের ভারতে জায়গা দিয়েছে। এটা জানার পরে আমরা আমাদের সৈনিকদের কেন তৈরি করছি না, কেন প্রস্তুতি নিচ্ছি না?”
‘সীমান্তে বড় উত্তেজনা নেই’
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, “দুই একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া জুলাই আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সারাদেশে বিজিবি অত্যন্ত সহনশীল, মানবিক ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেছে।”
আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, “সীমান্তে বড় ধরনের কোনো উত্তেজনা নেই। ছোটো-খাটো যে উত্তেজনা আছে সেজন্য বিজিবি প্রস্তুত আছে। বিজিবিকে বলা হয়েছে তারা প্রস্তুত থাকবে, কোন ধরনের উসকানি এলে তা প্রতিহত করবেন।”
বিজিবির আয়োজনে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
বিজিবির আয়োজনে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
সীমান্তবর্তী বাংলাদেশিদের ‘অনেকেই উদ্বেগের কথা’ সংবাদ মাধ্যমে আসছে- এই মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় উপদেষ্টা বলেন, “আপনারা তাদের বলবেন উদ্বেগের কোনো কারণ নেই। আমরা সব রকম নিরাপত্তার প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি।”
ভারত যদি উত্তেজনা ছড়ায় তাহলে নির্দেশনা কী- এই প্রশ্নে তিনি বলেন, “ভারতের জনগণ সেখানে বিক্ষোভ করেছে, সেখানে তো বিজিবি বিক্ষোভ করবে না, করবেন আপনারা মানে জনগণ। বিএসএফ এর থেকে কোনো রকম উসকানি থাকলে তার প্রতিকার করবে বিজিবি।”
ভারতে ‘সেইফ এক্সিট’ করে দিল কারা?
অভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগ নেতা ও তাদের সহযোগীদেরকে কারা ভারতে যেতে সহায়তা করল সেই প্রশ্ন তুলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, “যে ৬২৬ জন ক্যান্টনমেন্টের মধ্যে বন্দি ছিল, তাদেরকে কীভাবে ভারতে পালিয়ে যেতে সহায়তা করা হয়েছে এবং তাদের পেছনে কারা রয়েছে।
“আপনারা নিশ্চিত করবেন এই ৬২৬ জন ফ্যাসিবাদের পৃষ্ঠপোষককে কারা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে ‘সেইফ এক্সিট’ করে দিল? ভারতে যারা গেছেন তাদের টাকা পয়সার কোনো ‘কমতি নেই’। এই মুহূর্তে শেখ হাসিনা ভারতে বসে জনসভায় বক্তব্য দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।”
২০০৯ সালে বিডিআর বিদ্রোহে পিলখানায় হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করে হাসনাত বলেন, “আমরা চাই আপনারা এই দাবি বেশি করে তোলেন। যারা পিলখানা হত্যায় জড়িত ছিল, নিরপরাধ যারা কারাগারে রয়েছেন, ‘ট্রায়াল অ্যান্ড এররের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন’, দ্রুততম সময়ের মধ্যে যেন এই বিচারটিকে নিষ্পত্তি করা হয়।”
বিজিবির আয়োজনে আন্দোলনে আহতদের বেশ কয়েকজনকে আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি ব্যাটারিচালিত রিকশা তুলে দেওয়া হয়।
বিজিবির আয়োজনে আন্দোলনে আহতদের বেশ কয়েকজনকে আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি ব্যাটারিচালিত রিকশা তুলে দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠান শুরুতেই বিজিবি মহাপরিচালক আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বলেন, “জুলাই বিপ্লবের শুরু থেকেই বিজিবি স্ব-উদ্যোগে বর্ডার গার্ড হাসপাতালে আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ৫০ জন আহত ছাত্র-জনতাকে বিভিন্ন মেয়াদে বর্ডার গার্ড হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।”
‘সহযোদ্ধা হিসেবে’ আহত ছাত্র-জনতার পাশে দাঁড়াবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি বলেন, “বিজিবি সারাদেশে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহত ১০৭ জন ছাত্র-জনতাকে পুনর্বাসন করার উদ্যোগ নিয়েছে।”
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতারও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
Leave a Reply