নিউজ ডেস্ক, ঢাকা: বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে ‘অচলাবস্থা’ কাটিয়ে ওঠার ক্ষেত্রে দুই দেশের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকে ফলপ্রসু আলোচনা হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।
তিনি বলেন, “অচলাবস্থা কাটিয়ে ওঠার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে পারস্পরিক যোগাযোগ স্থাপন, দেখা সাক্ষাৎ। এটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।”
‘ফরেন অফিস কনসালটেশন’ (এফওসি) নামে পরিচিত বৈঠক হবে সোমবার। পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের এ বৈঠকে যোগ দিতে ঢাকায় আসছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্র।
রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবে সার্ক জার্নালিস্ট ফোরাম (বাংলাদেশ চ্যাপ্টার) আয়োজিত ‘দ্য সার্ক- পিপল অব সাউথ এশিয়া ক্রেইভ ফর’ শীর্ষক সেমিনারে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা সাম্প্রতিক সময়ের বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নিয়ে কথা বলেন।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কে ‘গুণগত পরিবর্তন’ হয়েছে বলে মন্তব্য করে তৌহিদ হোসেন বলেন, সেই পরিবর্তন মেনে নিয়েই সম্পর্ক এগিয়ে নিতে হবে।
তিনি বলেন, “ভারতের উচ্চ পর্যায়েও যখন দেখা সাক্ষাৎ হয়েছে, আমি বলেছি যে, কোনো সমস্যার সমাধান করতে হলে প্রথমে স্বীকার করতে হবে যে, সমস্যাটা আছে।
“এবং আমাদের একইভাবে প্রথমে স্বীকার করতে হবে যে, ৫ অগাস্টের আগে এবং পরে ভারতের সাথে সম্পর্কে নিশ্চয়ই একটা গুণগত পরিবর্তন হয়েছে। এটা মেনে নিয়ে আমাদেরকে চেষ্টা করতে হবে সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যেতে।”
আলোচনার সূত্রপাত ঘটানোর জন্য ফরেন অফিস কনসালটেশন আয়োজনের প্রস্তাব করার কথা বলেন তিনি।
তৌহিদ হোসেন বলেন, “আপনারা জানেন যে, আগামীকাল ভারতের পররাষ্ট্র সচিব আসছেন, আমাদের পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে আলাপ করবেন। এটা একটা স্ট্যান্ডিং ম্যাকানিজম, অস্বাভাবিক কিছু না। প্রতিবছর একজন যান একদেশে, পরের বছর অন্য জন আসেন আরেক দেশে। আমি আশা করব যে, তারা একটা ফলপ্রসূ আলোচনা করবেন।”
গত কয়েক মাসে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে ‘মন্দার’ ফলে উভয়দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “ব্যবসা বাণিজ্যের যে ব্যাপার, আমরা জানি, ঠিক আছে ভারতের অর্থনীতি অনেক বড়। কিন্তু এই যে গত ২-৩ মাস যাবৎ যে মন্দা যাচ্ছে দ্বিপাক্ষিক, সেটা কি শুধু বাংলাদেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে?
“সেটা কিন্তু শুধু বাংলাদেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে না, এত বড় অর্থনীতির দেশ, তাকেও কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত করছে। আনুপাতিক হিসাব করলে হয়ত অত বেশি না। ক্ষতিগ্রস্ত কিন্তু হচ্ছে। কলকাতার, পশ্চিমবঙ্গে অর্থনীতি যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এটার কারণে। আমরা আশা করব, এই অচলাবস্থা আমরা কাটিয়ে উঠতে পারব।”
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, সার্ক শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস ‘অত্যন্ত পজিটিভ’। বাংলাদেশ আঞ্চলিকভাবে একটি স্বাভাবিক সম্পর্কে ফিরে যেতে চায়।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকার অস্থায়ী হতে পারে কিন্তু দেশ ও স্বার্থ স্থায়ী। আমি নিশ্চিত যে স্বাভাবিকভাবে সার্ক নিয়ে একটি পজিটিভ অ্যাটিচিউট মানুষের মধ্যে আছে।
“রাজনৈতিক নেতৃত্বের দায়িত্ব হচ্ছে এটিকে এগিয়ে নেওয়া। সচিব পর্যায়ের একটি বৈঠক শুরু হোক যেটি গত ১০ বছরে হয়নি, তারপর আমরা চেষ্টা করব কীভাবে একটি সামিটে রূপান্তরিত করা যায়।”
দ্বিপক্ষীয় বড় সমস্যার সমাধান না হলেও সার্ক শীর্ষ সম্মেলনের সময় সাইডলাইন বৈঠকগুলোতে সেগুলো নিয়ে আলোচনার সুযোগ তৈরি হয় বলে উল্লেখ করেন তৌহিদ হোসেন।
তৌহিদ বলেন, দ্বিপক্ষীয় সমস্যা আছে, সেটা দ্বিপক্ষীয়ভাবে হয়ত বসা হয় না। এখানে বসা হতো। এখানে বসলে হয়ত সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে না। কিন্তু সমস্যাটা যাতে বেড়ে না যায়, সেজন্য ভূমিকা রাখতে পারে।
“১০ বছরে আমাদের বড় ক্ষতি হয়েছে ওইটাই, দেখাসাক্ষাৎ একেবারে হচ্ছে না। দেখা হলে পরে এক ধরনের বন্ধুত্বের বাতাবরণের সৃষ্টি হয়। এই জিনিসটা থেকে আমরা বঞ্চিত হয়েছি।”
সার্ক জার্নালিস্ট ফোরামের (বাংলাদেশ চ্যাপ্টার) সভাপতি নাসির আল মামুনের সভাপতিত্বে সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নিউ নেশন পত্রিকার সাবেক সম্পাদক মোস্তাফা কামাল মজুমদার।
Leave a Reply