আন্তর্জাতিক ডেস্ক: সিরিয়ায় অনুপ্রবেশ করা ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী দামেস্কের প্রায় ২৫ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে পৌঁছে গেছে বলে মঙ্গলবার সিরিয়ার নিরাপত্তা সূত্রগুলো রয়টার্সকে জানিয়েছে।
এর আগে ইসরায়েলি বাহিনী সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে গোলান মালভূমি সংলগ্ন একটি বাফার জোন দখল করে নেওয়ার পর রাতভর দেশটির সেনা ও বিমান ঘাঁটিগুলোতে বিমান হামলা চালায়।
রোববার সিরিয়ার ইসলামপন্থি বিদ্রোহীদের জোটের বিদ্যুৎগতির আক্রমণে রাজধানী দামেস্ক ও প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পতন হয়। এর দুই দিন পরই দেশটিতে সামরিক অভিযান চালালো ইসরায়েল।
আল কায়েদার সাবেক শাখা জঙ্গি গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শামের (এইচটিএস) নেতৃত্বাধীন ইসলামপন্থি বিদ্রোহীদের হাতে দামেস্কের পতন হওয়ায় এরপর কী হতে যাচ্ছে তা নিয়ে বিচলিত সিরিয়ার বহু বাসিন্দা, ওই অঞ্চলের দেশগুলো ও বিশ্ব শক্তিগুলো।
সিরিয়ার এক নিরাপত্তা সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, ইসরায়েলি সেনারা কাতানা পৌঁছে গেছে।
এই এলাকাটি ইসরায়েল অধিকৃত গোলান মালভূমিকে সিরিয়া থেকে পৃথক করা অসামরিকৃত এলাকার পূর্ব দিকে সিরিয়ার ভূখণ্ডের ১০ কিলোমিটার ভেতরে। এ বিষয়ে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
ইসরায়েল বলেছে, তারা সিরিয়ার সংঘাতে জড়াবে না আর তাদের বাফার জোন দখল করা একটি প্রতিরক্ষামূলক পদক্ষেপ।
মিশর, কাতার ও সৌদি আরব সিরিয়ায় ইসরায়েলের অনুপ্রবেশের নিন্দা করেছে। সৌদি আরব সতর্ক করে বলেছে, “এই পদক্ষেপ সিরিয়ার নিরাপত্তা পুনরুদ্ধারের সুযোগগুলোকে নষ্ট করতে পারে।”
আঞ্চলিক নিরাপত্তা সূত্রগুলো এবং সিরিয়ার পতন হওয়া সেনাবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তারা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, সারারাত ধরে সিরিয়াজুড়ে সামরিক স্থাপনা ও বিমান ঘাঁটিগুলোতে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল, এতে বহু হেলিকপ্টার ও জঙ্গি বিমান ধ্বংস হয়েছে। এর পাশাপাশি দামেস্ক ও এর আশপাশে ইসরায়েলি বিমান হামলায় রিপাবলিকান গার্ডের সম্পদ ধ্বংস হয়েছে।
তারা জানিয়েছেন, প্রায় ২৫০ বার চালানো এসব বিমান হামলায় সিরিয়ার সেনাবাহিনীর আর কোনো সম্পদ অবশিষ্ট নেই।
ইসরায়েল জানিয়েছে, তাদের বিমান হামলা কয়েকদিন ধরে চলতে পারে। কিন্তু দেশটি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে বলেছে, তারা সিরিয়ার সংঘাতে হস্তক্ষেপ করছে না। ইসরায়েল দাবি করেছে, শুধুমাত্র নিজেদের নিরাপত্তার সুরক্ষায় তারা ‘সীমিত ও সাময়িক পদক্ষেপ’ গ্রহণ করেছে।
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ সোমবার রাতে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে সিরিয়ার পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছে। জাতিসংঘের কূটনীতিকরা বলেছেন, ১৩ বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধ কয়েক বছর ধরে স্থবির হয়ে থাকার পর বিদ্রোহীদের মাত্র ১২ দিনের অভিযানে আসাদের পতন হওয়ায় তারা এখনও স্তম্ভিত হয়ে আছে।
ওই বৈঠকের পর জাতিসংঘে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ভাসিলি নিভেনজিয়া সাংবাদিকদের বলেন, “সবাই আশ্চর্য হয়ে গেছে, সবাই, নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরাসহ। তাই আমাদের অপেক্ষা করতে, দেখতে ও নজর রাখতে হবে এবং পরিস্থিতি কোন দিকে গড়ায় তার মূল্যায়ন করতে হবে।”
Leave a Reply