নিউজ ডেস্ক, ঢাকা: গতকাল চটি সাংবাদিক শফিক রেহমান বলেছেন, শেখ হাসিনাই ১৫ই আগস্টে জাতির জনককে সপরিবারে হত্যা করেছে। তার কথা অবশ্যই ফেলে দেয়ার মতো নয়। শেখ হাসিনা যেহেতু ভ্যানিটি ব্যাগে গ্রেনেড ভরে নিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করতে পারে, দলের নেতাকর্মীদেরকে হত্যা করতে পারে, সেহেতু নিজের বাপ-মা, ভাইবোনসহ আত্মীয়-স্বজনকে খুন করার যুক্তি অবশ্যই অকাট্য। জোকস অ্যাসাইড, ওই আলোচনায়ই শফিক রেহমান একটি গুরুত্বপূর্ণ স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। সজীব ওয়াজেদ জয়কে হত্যাচেষ্টার পরিকল্পনার কথা তিনি মুখ ফসকে বলে ফেলেছেন। তার কথাবার্তায় মনে হলো, সজীব ওয়াজেদ কুকুর প্রেমী হওয়াই শফিকের মূল ক্ষোভ। হয়তো ছাগোলপ্রেমিক হলে শফিক সজীব ওয়াজেদকে গোলাপ ফুল দিতেন। শফিক রেহমান সে অভিযোগ অস্বীকার করেন নি; বরং তার বিচারের রায় দেয়ার প্রক্রিয়া নিয়ে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।
শেখ হাসিনাকে অনেক মানুষই যে কারণে পছন্দ করেন না, আমি ঠিক সেই কারণেই তাকে পছন্দ করি। তিনি সত্য কথা সোজাসাপটা বলে ফেলেন। অনেকেই সত্যটা সহজে নিতে পারেন না। তাই কেন কূটনৈতিক রাখঢাক বজায় রেখে কথাটা বলেন না, তিনি কেন এতো মুখরা, সেই অভিযোগেই তারা শেখ হাসিনাকে অপছন্দ করেন। অবশ্য অপছন্দের মূল কারণ ভিন্ন। আওয়ামী লীগ হেটাররা শেখ হাসিনা মুখে মধু বর্ষণ করলেও তার কথা পছন্দ করবে না। প্রত্যেকটি সংবাদ সম্মেলনেই শেখ হাসিনা সাংবাদিকদেরকে অনেকক্ষণ যাবত প্রশ্ন করার সুযোগ দিতেন। সে প্রশ্নগুলোর উত্তরও দিতেন তেমন রাখঢাক না করে। খালেদা জিয়ার মতো লিখিত বক্তব্য পাঠ করেই তার সংবাদ সম্মেলন শেষ হতো না। এ বিষয়টি আমার পছন্দের। রাষ্ট্রনেতা কূটনীতির ভাষায় কথা বলবেন বিদেশিদের সাথে, রাষ্ট্রের জনগণের সাথে তিনি মন খুলে কথা বলবেন। এজন্য বঙ্গবন্ধু তার জীবদ্দশায় ‘মুজিব ভাই’ হতে পেরেছিলেন, শেখ হাসিনা ‘আপা’ হতে পেরেছেন। খালেদা জিয়া সেই ম্যাডামই থেকে গিয়েছেন।
জুলাই আন্দোলনের সময় শেখ হাসিনা স্পষ্টভাবেই বলেছিলেন, এটি কোনো বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন নয়। কারণ, মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল সরকারই করেছিলো। আদালত সেটি ফিরিয়ে আনলে তার বিরুদ্ধে আপিলও করেছে সরকারই। সাধারণ লোকজন কেন যে এই সহজ বিষয়টি না বুঝে আন্দোলন আন্দোলন করছিলো, সেটি গবেষণার বিষয়। সরকারের অনেক কর্মকাণ্ডে তাদের বিরক্তি ছিলো; কিন্তু মিথ্যাকে সমর্থন করার ফল যে ভালো হয় না, এই ম্যাচুরিটি দেশের জনগণ তখন দেখাতে পারে নি। এরপর শেখ হাসিনা বলেছিলেন, এই আন্দোলন জামায়াত-হিজু তথা দেশবিরোধীদের আন্দোলন। দেশের লোকজন তখনো তাকে বিশ্বাস করে নি। এরা ৯ দফা দিলো। ৯ দফার ভিতরে কী আছে, তা না জেনেও লোকজন লাফাতেই থাকলো। সরকার পতনের এক দফা দেখেও তারা হাসিনার কথা বিশ্বাস করলো না যে এটি সরকার পতনেরই আন্দোলন। তারা তখন প্রফাইল লাল করে সরকারকে লালকার্ড দেখাতে থাকলো। হাসিনার পতন হলেই দেশের সব সমস্যা মিটে গিয়ে দেশটা আবার সুখে-শান্তিতে ভরে যাবে, সুজলা-সুফলা হবে বলে তারা ভেবেছিলো। অথচ হাসিনা বলেছিলেন, দেশটা জঙ্গীসাম্রাজ্য হবে। ৭ই জানুয়ারীর নির্বাচন প্রসঙ্গে ইন্ডিয়াও আমেরিকাকে একই বার্তা দিয়েছিলো। লাল প্রফাইলে ব্যস্ত থাকা স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখা লোকজন তখন হাসিনাকে বিশ্বাস করে নি।
শেখ হাসিনা সরাসরি বলেন নি কোটাবিরোধী আন্দোলনটি রাজাকার শাবকদের আন্দোলন। কিন্তু ওই শব্দটি উচ্চারণ করে তিনি বুঝিয়ে দিয়েছিলেন এর পেছনে কারা আছে। তখন জামায়াত-শিবিরকে ঘৃণা করা লোকজনও হাসিনাকে বিশ্বাস করে নি। তারা এটিকে তাদেরই আন্দোলন ভেবেছিলো। তারা তাই সমন্বয়ক নামক শিবিরের সাথে গলা মিলিয়ে নিজেদেরকে রাজাকার বলতে দ্বিধা করে নি। তারা তখনও বুঝে নি, যে কোনো পরিস্থিতিতে নিজেদেরকে সুস্থ মস্তিষ্কে রাজাকার বলে শুধু রাজাকাররাই।
৫ই আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর এরা প্রথমেই ধাক্কা খায় ওয়াকার-উজ্জামানের কথায়, যিনি প্রথমেই জামায়াতে ইসলামীর নাম স্মরণ করেন। এরপর একে একে “সমন্বয়কের ঝোলার ভিতর হইতে শিবির বাহির হইতে থাকিলো”। গতকাল সারজিস আলম আরেকটু বিস্তারিতভাবেই বলে দিলেন, পুরো আন্দোলনেই মাঠে, পিছনে, অর্থায়নে, সমন্বয়ে শিবিরই লিড দিয়েছিলো।
শেখ হাসিনা গত ১৫ বছরে আরেকজন ব্যক্তি সম্পর্কে বারবার “বিষোদ্গার” করেছেন, তিনি হলেন ড. ইউনূস। “সুদখোর” ইউনূস যে মার্কিন এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করতে চান, শেখ হাসিনা বহুবার সে কথা বলেছেন। কেউ বিশ্বাস করে নি। সবাই ভেবেছে “অরাজনৈতিক” ইউনূস খুবই সজ্জন লোক। সে নোবেল পাওয়ায় শেখ হাসিনা ঈর্ষা থেকেই এসব আবোল-তাবোল বলছেন। ৫ই আগস্টের সময় মিশন সাকসেসফুল না হলে বিপদ হতে পারে ভেবে জঙ্গীনেতা ইউনূস ফ্রান্সে পাড়ি জমান। এরপর ২/৩ দিন সময় নেন পরিস্থিতি কোন দিকে গড়ায় তা দেখতে। এরপর অল ক্লিয়ার হওয়ার পরে দেশে এসে মসনদে বসে যান।
আপনি যদি বাহ্যিকভাবে দেখেন, তাহলে মনে হবে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ইউনূসের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তিনি সজ্জন নোবেল লরিয়েট, সম্পদের কোনো মালিকানা নেই। যা আয় করেন, সবই চ্যারিটিতে দিয়ে দেন (ট্যাক্স দেয়া লাগে না), এরপর চ্যারিটি থেকে টাকা নিয়ে জীবন নির্বাহ করেন। তিনি রাজনীতির সাতেপাঁচে নেই। কিন্তু তিনি নিজেই প্রকাশ করলেন মেটিকুলাস ডিজাইনের কথা। বছরের পর বছর ধরে সরকার পতনের ষড়যন্ত্রের কথা। শেখ হাসিনা যে ইউনূস সম্পর্কে সত্য কথা বলতেন, এখন কি সেটি বুঝা যাচ্ছে?
আমাদের সমস্যা হলো সোজাসাপটা সত্য কথা আমাদের ভালো লাগে না। আতর-খুশবু মিশিয়ে সুন্দরভাবে থালাভর্তি শিট সার্ভ করলে আমরা সেটিকেই আহ মধু মধু বলে খেয়ে নিই। আজ যে জঙ্গী-দখলে বাংলাদেশ এ দায় আমার আপনার আমাদের। আমাদের নির্বুদ্ধিতার কারণে যে গাড্ডায় আমরা পড়েছি, সেখান থেকে সহসা উত্তোরণের কোনো আশা নেই। আশা বলতে এখনো সেই ৭৭ বছরের বৃদ্ধা শেখ হাসিনা। যার কথা আমরা বিশ্বাস করি নি, যাকে নির্বাসনে পাঠিয়ে আমরা উল্লাস করেছি। আমরা কি এখনো বুঝতে পারছি, শেখ হাসিনা কোনো কথাই মিথ্যা বলেন নি? সরকার পরিচালনায় সাফল্য আছে, ব্যর্থতা আছে। দল পরিচালনায়ও। কিন্তু আন্তরিকতায় শেখের বেটির ঘাটতি ছিলো না, আমরা কি সেটি বুঝতে পারছি? আমাদের চোখের সামনেই দেখতে পাচ্ছি শেখ হাসিনার প্রতিটি কথাই সত্য। ইউনূস-শফিক-সার্জিস নিজেরাই এসে বলে যাচ্ছেন। আমরা তখন বিশ্বাস করি নি।
আমরা সেই বাংলাদেশটিকে আর কখনো ফিরে পাবো না। কিন্তু আত্মশুদ্ধির সুযোগ কখনো শেষ হয় না। ভাবুন, পাপমুক্তির জন্য কাজ করুন।
Leave a Reply