নিউজ ডেস্ক, ঢাকা: বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনকে হেয় করতে সমাজে একটি শক্তি মাথাচাড়া দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক।
তিনি বলেছেন, “অনেক রকমভাবে আমরা দেখছি যে নারীদের নিগৃহ এবং সেখানে রোকেয়াকে হেয় করার জন্যও সমাজে একটা শক্তি মাথাচাড়া দিচ্ছে। সেইখানে নারীশক্তির উদ্বোধন, যেটা রোকেয়ার কাম্য ছিল- এ স্বপ্নটা নারী-পুরুষের সম্মিলিত অভিযাত্রাতেই এগিয়ে যাবে।”
বৃহস্পতিবার মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে আয়োজিত ‘ফ্ল্যাগ ইন সেরিমনি: উইমেনস উইন্টার এক্সপিডিশন’ শীর্ষক এক প্রেস মিটে কথা বলছিলেন মফিদুল হক।
গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বেগম রোকেয়ার ছবিতে কালি মাখানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গত মে মাসে ইউনেস্কোর মেমরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড রিজিওনাল রেজিস্ট্রার ফর এশিয়া প্যাসিফিক তালিকায় স্থান পায় বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের লেখা নারীর মুক্তিপ্রত্যাশী কাহিনী ‘সুলতানাস ড্রিম’।
এই সাহিত্যকর্ম থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ‘সুলতানাস ড্রিম আনবাউন্ড’ বা ‘সুলতানার স্বপ্ন অবারিত’ স্লোগানে একটি পর্বত অভিযানের আয়োজন করা হয়।
দেশের পাঁচজন নারী ২১ ডিসেম্বর থেকে ১৪ জানুয়ারি পর্যন্ত নেপালের লাংটাং হিমালয়ে শীতকালীন এ অভিযানে ছিলেন।
মফিদুল হক বলেন, প্রতি বছরের ডিসেম্বর মাসে ‘উইমেনস উইন্টার এক্সপিডিশন’ বা ‘নারীদের শীতকালীন অভিযান’ হবে, যেটি পরিচালনা করবে পর্বতারোহীদের সংগঠন ‘অভিযাত্রী’। আর এর সঙ্গে নেপালের নারীরাও যুক্ত থাকবেন।
“আমার মনে হয় আমরা কাজের পরিকল্পনাটা এখন থেকে শুরু করতে পারি। সুলতানার স্বপ্ন নিয়ে বাংলাদেশ নানাভাবে কাজ করবে এবং এটাকে দেশের বাইরেও নিয়ে যাবে।
“রোকেয়া কূপমণ্ডূকের হিমালয় দর্শন বইতে বলেছিলেন, বাংলাদেশের শিয়রে হিমালয় কিন্তু কম বাঙালি হিমালয় দেখতে যায়। হিমালয় দর্শনটাই তখন হচ্ছিল না, আর নারীর প্রশ্নটাও তখন ছিল না। এখন পঞ্চকণ্যা হিমালয় বিজয় করেছে, সুলতানার স্বপ্ন পল্লবিত হচ্ছে।”
শীতকালীন অভিযানের নেতৃত্ব ছিলেন পর্বতারোহী নিশাত মজুমদার। সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে তিনি মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর, ইউনেস্কো ও মাস্টারকার্ড প্রতিনিধির হাতে পতাকা তুলে দেন।
পরে নিশাত মজুমদার শীতের সময়ে অভিযানে গিয়ে নানা ধরনের সঙ্কটে পরার বিষয়টি তুলে ধরেন তার বক্তব্যে।
তিনি বলেন, “ইয়ালাপিতে আমরা যেদিন গেলাম আমাদের কাছে কোনো পানি ছিল না। চারদিকে পানি কিন্তু আমার কাছে খাওয়ার মত কোনো পানি নেই। সব বরফ হয়ে ছিল। আমাদের কাছে যত গ্যাস ছিল, সব গ্যাস দিয়ে চেষ্টা করেছিলাম বরফগুলোকে পানি করে খাওয়ার।
“অনেক মেয়ে আমাদেরকে বলছে, আমিওতো এখানে থাকতে পারতাম; আমিওতো একজন সুলতানা হতে পারতাম। এই মেসেজটাই জরুরি।”
দলের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য অর্পিতা দেবনাথ বলেন, এই অভিযানের আগে তিনি তার সব লক্ষ্য একটা সীমানার মধ্যে ঠিক করতেন।
“আমি এটার বাইরে কোনোভাবে যেতে পারব না, এমন মনে হত। আমার মনে হয়েছে, এবার আমি আমার লিমিটেশনটা অতিক্রম করতে পারছি।”
দলের আরেক সদস্য মৌসুমি আক্তার এপি বলেন, “আজকে এখানে দাঁড়িয়ে আমি স্বপ্ন দেখছি; পাঁচজন সুলতানার জায়গায় একদিন ৫ হাজার বা ৫ লাখ এরকম সামিট করে আসবে এবং আমরা উল্লাস করব।”
তাদের ছাড়াও এ দলে ছিলেন পর্বতারোহী ইয়াসমিন লিসা ও তহুরা সুলতানা রেখা।
সুলতানার স্বপ্ন সংক্রান্ত দলিলপত্র ও তথ্যের সংরক্ষক হিসেবে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের রচনার স্বীকৃতির জন্য ইউনেস্কোর কাছে আবেদন করেছিল বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়।
মাস্টারকার্ডের সহযোগিতায় ‘উইমেনস উইন্টার এক্সপিডিশন’ বা ‘নারীদের শীতকালীন অভিযান’ পরিচালনা করা হয়, এতে সহযোগী হিসেবে ছিল মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর।
ইয়ালা পিক (৫ হাজার ৫০০ মিটার), সুরিয়া পিক (৫ হাজার ১৪৫ মিটার), গোঁসাইকুন্ড পিক (৪ হাজার ৭৪৭মিটার) ল্যাংটাং অঞ্চলের এই তিনটি চূড়ায় আরোহণ করেছে ‘সুলতানাস ড্রিম আনবাউন্ড’ দল।
Leave a Reply