জন্মদিনের কড়িকরচা
সাইফুর রহমান কায়েস
বয়ঃবৃদ্ধ বৃক্ষের শুষ্ক শাখা, আকাশে আকাশ খোঁজে, শুধুই শূন্যতা । বসন্তের বাতাসেও, নেই ডালে সেই সজীবতা । ছায়া চায় —
নীড়হীন নিরাশা, ছিন্ন ডানার প্রজাপতি ,
হায়! বটবৃক্ষ, তুমি বলো, সময়
রয়েছে বাকি ।
সময় থমকে, মহীরুহর ঝুরির আড়ালে
পাখিরা বাঁধেনা বাসা, ভাষা নেই কোকিলের
চন্ডিমন্ডপের পাঠশালে । স্হবির পায়ের নীচে,জীর্ণ নকশিকাঁথা, লক্ষ্যহীন সময়ের — শিয়রে ।
ধ্বংসের আভাসে যখন,
মাটির গভীরে ছোট-ছোটো
গাছ হাত ধরে । সবুজ পাতায় আজ
শব্দের সৌরভ, শরতেও কাশফুল ঝরে ।
সবুজ–ধূসর প্রাণ জ্বলে যদি তাপদাহে
নেভে না শিশিরের জলে, ধূসর বিদ্রোহে ।
কৃত্রিম দাবানল !
হৃদয়ে হৃদয় ছুঁয়ো
যদিও চারাগাছ, আজ হও মহীরুহ ।
– কবিতা;- দাবানলের আগে
কবি পার্থপ্রতীম চৌধুরী
মৃত্যু আমাদের নিশ্চিত। কিন্তু জীবন অনিশ্চয়তায় ভরা। তাই জীবনের যতো দেনাপাওনা দ্রুত মিটিয়ে ফেলাই উত্তম। যে জন্মদিনে আমরা উপচেপড়া আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে মোমবাতিগুলি নিভিয়ে দিচ্ছি সেটি যে পক্ষান্তরে নিজের জীবনপ্রদীপকেই নিস্প্রভ করে ফেলার শামিল। বিশাল হলরুম ভাড়া করে তেলামাথায় তেল আর ভূড়িওলা ভদ্দরনোকদের ভূড়িতুষ্টির যে মহাযজ্ঞ পরিচালিত হয় সেটিকেই তো রুচির দুর্ভিক্ষ বলতে চাই। যেখানে অশীতিপর বৃদ্ধা নিজের ক্ষিধের জন্য হাত পাতেন সেখানে ফসলের সুষম বন্টনকে আমাদের ধর্মের মর্যাদা দিতে ইচ্ছে হলেও স্মার্ট বাংলাদেশের তকমাটি কালিমালিপ্ত হয়ে পড়ে।বৃদ্ধ বয়সে যেখানে নিশ্চিত জীবন হাতছানি দিয়ে যাবার কথা সেখানে ক্ষিধার অন্ন যোগাড় করতেই জেরবার। এমন বাংলাদেশ আমরা চাই নি।
ফেসবুকীয় জন্মদিনের সাদর সম্ভাষণ, জিপিএ ফাইভের উল্লম্ফন আমাদের চোখকে ক্লান্ত করে তোলে। এসবই হচ্ছে রেসিস্ট দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রমোট করার অন্যতম অনুষঙ্গ। সমাজে শ্রেণিবৈষম্য সৃষ্টির অপকৌশল। সামাজিক ঘৃণা ছড়ানোর হাতিয়ার।
আমরা প্রতিযোগীতার ইদুর দৌড়ে নেমে জীবনবোধকে তেনাতেনা করে ফেলছি। জীবনকে বিষবৃক্ষে পরিণত করছি।
জীবনকে উপভোগ করতে কেনো শুধু জন্মদিনকেই বেছে নিতে হবে? আমাদের প্রতিটি মূহুর্তকেই তো উপভোগ্য করে তুলতে পারি। প্রাণ ও প্রাণীর সেবার মাধ্যমে, জীববৈচিত্র্যকে রক্ষার শপথের এবং তা পালনের মাধ্যমে জীবন এবং জীবনবোধকে জাগ্রত রেখে যদি জন্মদিন পালন করতে পারি তবেই সভ্যতার ইতিহাস পুনর্লিখিত হবে। আজকে যদি আমার জন্মদিন হতো তাহলে চাষনি পীরের বানরগুলোকে খাদ্যসেবা দিতে ছুটি নিয়ে চলে যেতাম।
দ্বিচারণ নীতির অন্ধ অনুসারী কোনো কবির নাকি আজ জন্মদিন। কেউ কেউ তাকে নেসেসারী ডেভিলস বলেও আখ্যা দিয়েছেন। এমন ব্যক্তি যদি কারো বন্ধু হয় তাহলে শত্রুর আর কোনো প্রয়োজন হয় না। এমন বন্ধুবেশী শত্রুর পাল্লায় পরে বন্ধুত্বের নান্দনিকতা শ্রীহীন হয়ে পড়েছে। বন্ধুত্বের শ্লীলতাহানি ঘটে গেছে। আমাদের বেদনার নিয়ামক হয়ে ধরা দিয়েছে। হৃদয়ের রক্তক্ষরণকে উস্কে দিয়েছে। জন্মদাগের মতো সেটিকে বয়ে বেড়াতে হচ্ছে।
জ্ঞানীকে কারো পদলেহন ব্রত পালন করতে হয় না ক্ষমতাবান হতে। জ্ঞানী নিজেই ক্ষমতাবান। কিন্তু এই ক্ষমতাবানদের মূল্যায়ন আমরা কতোটুকু করতে পেরেছি? রাজনৈতিক ক্ষমতাবানদের পিছনে ঘুরে ঘুরে কেউ কেউ নিজেদেরকে নপুংসকে রূপান্তরিত করেছেন। কিন্তু কোনো আত্মশ্লাঘা নেই। তাদের পাশে দাড়িয়ে তোলা ছবি বা নিজস্বী বলছে এদের আশোদ্ধা হয়ে যাবার কথা। নিজস্বীতে কি হয়? যদি নিজের কোনো সৃষ্টিশীল কর্মকুশলতা না থাকে, সৃজনশীলতার স্বাক্ষর রেখে যেতে না পারেন তবে তার বিলয় অনিবার্য।
কবিবন্ধুর জন্মদিনে আমি কি দিতে পারি? অভিনন্দন নাকি তিরস্কার? অথবা কোনোটাই না। সবচেয়ে ভালো উপহার নিরবতা। মৌনতাকে ব্রতজ্ঞান করে চাষণি পীরের বানরগুলোকে সেবা দেয়ার মানসে নিজেকে ব্যস্ত রাখাই শ্রেয়। বানর আর যাই হোক ভালো কাজকে ভন্ডুল করতে মুক্তিযোদ্ধার তকমা ব্যবহার করে না। কারো নামে কুৎসা রটায় না। বাকী জীবন প্রাণ ও প্রাণীর সেবাই করে যাবো ভাবছি। বন্ধুবেশী এসব বর্ণচোরা ভদ্দরনোকের সংস্রব থেকে দূরে থাকবো। বাতির কি প্রদীপের দরকার হয়?
আজকের দিনে যারা দুনিয়াতে আবির্ভূত হয়েছেন তাদের হখলরে আমার সালাম।
সাইফুর রহমান কায়েস
কবি, কথাসাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিক
প্রকাশিত গ্রন্থ সংখ্যা ৭।
saifurrahmankayes@gmail.com
Leave a Reply