1. editor1@japanbanglapress.com : editor1 :
  2. japanbanglapress@japanbanglapress.com : japanbanglapress :
  3. mdzahidulislam1000@gmail.com : zahid :

পার্থ সারথি চৌধুরী : এক কালপুরুষের প্রতিকৃতি

  • আপডেটের সময় : সোমবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০২৩

সাইফুর রহমান কায়েস

কালপুরুষ
-কবি পৌলমী সেনগুপ্ত

লুব্ধক তারাটি হই, তোমার পায়ের কাছে শুয়ে
কুড়ে চোখ তুলে দেখি ধনুকে জুড়েছ ফের বাণ
ফালা ফালা করে দাও, চিরে দাও রাতের আকাশ
নক্ষত্রের টুকরো ভেঙ্গে চুড়ে দাও মফসসলি ছাদে
মাদুরে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকা মেয়েটির পিঠে
ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে সেই সব ভাঙ্গা টুকরোগুলো
বীজগণিতের বই খুলে বসা ছেলেটির চুলে
চাদের আলোর মতো নক্ষত্রেরা গুড়ো হয়ে যায়

পলাশ গাছের নীচে কখনও ওদের দেখা হলে
পায়ের নীচের আমিও গোপণে চলে যাব
কুণ্ডলী পাকিয়ে বসি, কুকুরের মতো শান্ত চোখ
কালপুরুষের দূত, আমাকে খুশির টুকরো ভেবো

পৌলমী সেনগুপ্ত কি ভেবে কবিতাখানি লিখেছিলেন সেটি আমি জানি না। কিন্তু ভাবের যে ব্যত্যয় ঘটে নি, কালের কলরবকে ধারণ করেছে সেটি আমার বোধিবৃক্ষকে নাড়িয়ে দিয়ে গেছে। আমার গুরুকবি পার্থ সারথি চৌধুরীর কথা মনে পড়ছে খুব। পচিশে ডিসেম্বর তার জন্মতিথি। ঘড়ির কাটার দ্রুতগামিতার জন্য সেটি বাহাত্তরে গিয়ে ঠেকেছে।তার জন্মোৎসব উপলক্ষে তোফাজ্জল সোহেলের সম্পাদনায় প্রকাশিত সংকলনে লেখা দেই দেই করেও আর দেয়া হয়ে উঠে নি।

পার্থদার সাথে আমার এক আত্মীয়ের মাধ্যমে সাপ্তাহিক হবিগঞ্জ সমাচার পত্রিকা অফিসে পরিচয় ১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দের কোন এক সময়। দিন তারিখ মনে নেই। আমি তখন কবি যশোপ্রার্থী। দিন নেই , রাত নেই শুধু কবিতা নিয়ে পড়ে থাকা। নয় বছর বয়স থেকে লিখতে শুরু করলেও সঠিক দেশনা না পাওয়াতে ঠিকমতো সাহিত্যচর্চার ক্ষেত্রে হালে পানি পাচ্ছিলাম না। সেই অর্থে পার্থদা আমার মেন্টরের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। আমি তার সংস্পর্শে এসে নিজের ভেতরটা দেখার অবারিত সুযোগ পেয়ে গেলাম। তারই তত্ত্বাবধানে যুগভেরী, শ্বেত পায়রা, হবিগঞ্জ সমাচারসহ বিভিন্ন কাগজে আমার লেখা প্রকাশিত হতে থাকলো। লিখতে থাকলাম গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ, উপন্যাস , কলাম ইত্যদি দুহাত ভরে। শ্রেণিকক্ষে কবিতা লিখে সোজা চলে গেলাম সমচার অফিসে তাকে দেখানোর জন্য। এরপর থেকে নিয়ম করে সপ্তাহের তিনদিন, চারদিন যেতে থাকলাম তার বগলা বাজারের বাসায়, আবার কখনো পত্রিকা অফিসে। বাসায় গেলেই অশীতিপর বৃদ্ধা মাতা- আমাদের পরম শ্রদ্ধেয় মাসিমা চা বিস্কুট খেতে দিতেন। কারণ বাসায় মাসিমা ছাড়া আর কোনো নারী ছিলেন না। পার্থদা চিরকুমার। আর উনার ছোট ভাই পিনাকীদাও তখন অবিবাহিত। একেবারে ছোটভাইটিও তখন বাসায় থাকতেন মাঝেমধ্যে। তার কাছে শুরু হলো আমার সন্ন্যাসজীবনের দীক্ষালাভ। পত্রিকায় প্রকাশিত আমার লেখা নিয়ে নানাভাবে ডিক্টেশন দিতেন, উৎসাহিত করতেন। প্রচুর পড়াশোনার জন্য তাগিদ দিতেন। বলতেন লিখার পরিমাণ কমিয়ে দিয়ে পড়ার পরিমাণ বাড়িয়ে দাও।
গুরুর বাসায় যাবার সময় মাঝেমধ্যে ট্রিপল ফাইভ সিগারেট নিয়ে যেতাম। তোফাজ্জল সোহেল বলতো দাদা সিগারেট পেলে খুশী হন। সে মোতাবেক তার ব্যত্যয় ঘটে নি। যতোবার দাদার কাছে গিয়েছি সিগারেট নিয়ে গিয়েছি। দুইচারবার ফুকতে যে আমাকেও দিতেন না এমন নয়। গুরুর সহবতে একটু ধূম্রায়ন মন্দ নয়। তিনি অতিরিক্ত আলো সইতে পারতেন না। তাই দরোজা পুরো না খুলে অর্ধেক ভেজানো রাখতে বলতেন। আমি তার কথা শুনতেই পছন্দ করতাম। তার কাছে গিয়ে শুনতাম বেশী, বলতাম একেবারেই কম।

প্রতিভাকে কাজে লাগানো, নতুনদের মাঝে সাহিত্যবোধ ছড়িয়ে দিতে তিনি আনন্দ পেতেন। হয়তো সে কারণেই আমাকে তার মনে ধরেছিলো। আমার জীবনের প্রতিটি সংকট ও সম্ভাবনাকে তিনি উস্কানি দিয়েছেন, আশকারা দিয়েছেন। বেকারত্ব ঘুচাতে তাগিদ দিতেন। আমার জন্য নানান জায়গায় চাকুরির তদবির করেছেন। কিন্তু অর্থ ঘুষ দিয়ে চাকরি নিতে নিরুৎসাহিত করতেন। তাই আর ঐ পথে যাই নি। শেষে চাচাতো ভাইয়ের প্রতিষ্ঠানেই থিতু হলাম।
বিরলপ্রজ প্রতিভার অধিকারী কবি পার্থ সারথি চৌধুরীর কাছে আমার অনেক ঋণ। তার সাহিত্যকর্মের উপর বিস্তারিত লিখার বাসনা পোষণ করি। একজন মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষক কবি পার্থ সারথি চৌধুরীর কথা বলে শেষ করা যাবে না।

একবার কবি শামীম আজাদ আপা এসেছিলেন দেউন্দি চা বাগানে। আমি তখন সদ্য নাইজেরিয়া থেকে ফিরেছি। ঘানা যাবার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। আপা আসবেন শুনে আমি পার্থ দা, হারুণ সিদ্দিকী , তোফাজ্জল সোহেলকেও দাওয়াত দিয়েছিলাম। শ্রীমঙ্গল থেকে দেশীয় কই, ইলিশ, শোল, কেচকি, দেশী মুরগী ইত্যাদির যোগাড় করেছিলাম। কিন্তু শামীম আজাদ আপা এলেন না। উনি দেউন্দিতেই থেকে গেলেন। পার্থদা, হারুণ, তোফাজ্জল সোহেল এরা ঠিকই এসেছিলেন। আমার পঞ্চমবর্ষীয়া কন্যা আঈদা তাদেরকে ফুল বরণ করেছিলো। বিকেলে একটি মাইক্রো ভাড়া করে দেউন্দিতে উনাদের নিয়ে শামীম আপার সাথে দেখা করতে চলে গেলাম। ফেরার পথে অনেক রাত হয়ে গিয়েছিলো। সেটি ছিলো বৈশাখ মাসে। আমির চান হোটেলে আপাকে রেখে পার্থদাকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে আমি বাড়ি চলে এলাম। বাড়ি এসে ঘটলো আরেক বিপত্তি। বউরাণী রাগে গজগজ করতে করতে দরোজায় খিল এটে শুয়ে পড়ায় সে রাতে আমাকে সোফায় ঘুমুতে হয়েছিলো। বাইরে তখন কালবোশেখি ঝড়। আর ভেতরে বউয়ের ঝড়।
মৃত্যুর কিছুদিন আগে ২০১২ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট মাসে ঈদের পরদিন রব ভাই, পার্থ দা, রুমা দি, অপু, হারুণ, শামীম, মোস্তুফা মঈন ভাই আমার বাড়িতে ঈদ পুনর্মিলনীর আয়োজনে যোগ দিয়েছিলেন। মনে পড়ে সেদিন আমাদের চাচাতো ভাই আবিদ ভাই মারা গিয়েছিলেন। নানা ঘটনা অনুঘটনার প্রভাবক হিসেবে তাকে পাই। আমার লেখক হয়ে উঠার পিছনে তার অবদান অনস্বীকার্য। জয়তু গুরুকবি পার্থ সারথি চৌধুরী। জন্মদিনের হৃদয়নিংড়ানো ভালোবাসা আপনাকে এবং তোমাকে নিবেদন করছি। অঞ্জলি লহ মোর শীতল বাতাসে

এক কালপুরুষের অবয়বে তিনি আমার শামসেত তাবরেজি। আমার মতো অনেকেরই আশ্রয়দাতা। মাথার উপর এখনো সেই ছায়া ও ছাতা।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটেগরিতে আরো খবর
Japan Bangla Press © 2023. All Rights Reserved.
Built with care by Pixel Suggest