1. editor1@japanbanglapress.com : editor1 :
  2. japanbanglapress@japanbanglapress.com : japanbanglapress :
  3. mdzahidulislam1000@gmail.com : zahid :
সাম্প্রতিক :
বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন: বিজেপির সুরে সরব কংগ্রেসও দেশের মানুষের জান-মাল এবং ইজ্জতের নিরাপত্তা নেই : জিএম কাদের অযৌক্তিক মন্তব্য না করে বাংলাদেশের উচিৎ হিন্দুদের অধিকার রক্ষা করা: দিল্লি নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতাকে না পেয়ে ছোট ভাইকে গ্রেপ্তার রাজধানীতে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের বিক্ষোভ মিছিল ক্ষমা ও ক্ষতিপূরণের বাংলাদেশের দাবির উল্লেখ নেই পাকিস্তানের ভাষ্যে একবার ডিসেম্বরে, একবার জুনে- ফাইজলামি বাদ দেন: দুদু জাপান সরকার যুক্তরাষ্ট্রের সাথে শুল্ক আলোচনাকে অগ্রাধিকার দেবে: প্রধানমন্ত্রী ইশিবা শিল্পী কামরুল হাসান লিপুর তুলিতে জাপানে প্রথম মঙ্গল শোভাযাত্রা চেকপোস্ট ব্যারাক থেকে পুলিশ কনস্টেবলের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

মহানায়িকা সুচিত্রা সেনের প্রয়াণের ১০ বছর: স্মৃতির শহর পাবনা

  • আপডেটের সময় : রবিবার, ২১ জানুয়ারী, ২০২৪
'দেবদাস' সিনেমায় সুচিত্রা সেন। ছবি: বিমল রয় প্রোডাকশনস ভিয়া উইকিমিডিয়া কমন্স

বিনোদন, ডেস্ক

সুচিত্রা সেন — চলচ্চিত্রের সাদাকালো সেলুলয়েডে জীবন্ত এক স্বপ্নচারিণী। চলচ্চিত্রের ‘পথ শেষ না হওয়ার’ যাত্রায় কখনো হয়েছেন সপ্তপদীর রিনা ব্রাউন, কখনো সুর হারিয়েছেন রমা ব্যানার্জি হয়ে, কখনো দীপ জ্বেলেছেন রাধা হিসেবে। আমাদের উত্তম-সুচিত্রা জুটি যেন বাংলা চলচ্চিত্রে জন্ম দিয়েছিলেন এক চিরন্তন বসন্তের, যার সুঘ্রাণ আজও বাঙালি মননে অম্লান। দীর্ঘ ২৬ বছরের অভিনয়জীবনে প্রেমে, বিষাদে, আনন্দে ও অশ্রুজলে তিনি যে দাগ বাঙালি হৃদয়ে কেটেছিলেন, তা যেন কিছুটা ক্ষত হিসেবেই দগদগে রেখে রহস্যের অন্তরালে হারিয়ে গেলেন আমাদের সুচিত্রা। ১৯৭৮ সালে স্বেচ্ছায় বেছে নেওয়া অন্তরালের কাছে ২০১৪ সালের ১৭ জানুয়ারিতে তার মৃত্যুও যেন কিছুটা হেরে গিয়েছিল।

১৯৭৮ সাল থেকে ২০১৪; দীর্ঘ ৩৬টি বছর সুচিত্রা নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলেন চলচ্চিত্র জগতের সকল মোহমায়া থেকে। উপস্থিত থেকে পুরস্কার নিতে হবে বলে অবলীলায় ফিরিয়ে দিয়েছিলেন ‘দাদাসাহেব ফালকে’র মতো সম্মাননা। তার এই অন্তরালে তিনি যেন চিররঙিন হয়ে চলচ্চিত্রে বেঁচে আছেন পুরোনো রূপকথার মতো। সেই রূপকথা ও অন্তরালের রহস্য আগ্রহ জাগায় ‘সুচিত্রা সেন’-এর আড়ালে বেঁচে থাকা রমা দাশগুপ্তকে ঘিরে; যে রমা বাংলাদেশের, যে রমা এদেশের বাড়ির মেয়ে।

পাবনার বাড়ি: সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংগ্রহশালা

স্মৃতিতে সময় থেমে থাকে, জীবন্ত থাকে। পাবনা যেন সযত্নে সে স্মৃতির ধুলো আঁকড়ে জড়িয়ে রেখেছে; সেখানে সুচিত্রা সেন বেঁচে আছেন রমা দাশগুপ্ত হিসেবে। ১৯৩১ সালের ৬ এপ্রিল করুণাময় দাশগুপ্ত ও ইন্দিরা দাশগুপ্ত দম্পতির কোল আলো করে আসে তাদের আদরের সন্তান রমা। বাড়ির ডাকনাম ছিল কৃষ্ণা। তিনি ছিলেন নয় ভাইবোনের মধ্যে পঞ্চম। সুচিত্রা সেনের জন্মস্থান নিয়ে রয়েছে নানা বিতর্ক। কেউ দাবি করেন পাবনা, কেউ সিরাজগঞ্জের বেলকুচির ভাঙাবাড়ি, কেউ বলেন পাটনায় মামাবাড়িতে। তবে রমার নিজের উদ্ধৃতি ও নানা মতের ভিত্তিতে পাটনায় মামাবাড়িতে জন্মস্থান হওয়াটাই যৌক্তিক মনে হয়। সে সময়ের সন্তান জন্মদানে মায়ের বাড়িতে যাওয়ার নিয়মও তা-ই বলে।

কিন্তু তাতে কী রমার ওপর পাবনার স্নেহের অধিকার ক্ষুণ্ণ হয়? ইছামতির হাওয়ায় শৈশব-কৈশোর পার করেছেন রমা। বাবা করুণাময় দাশগুপ্ত পৌরসভার স্বাস্থ্য পরিদর্শকের চাকরিটি পেয়ে যশোরের আদিনিবাস ছেড়ে ১৯২২ সালে পাবনার গোপালপুরের হেমসাগর লেনে একতলা বাড়ি তৈরি করেন। হেমসাগর দীঘির গা ঘেষে সেই বাড়িটি নানা ঘাত-প্রতিঘাতের পরও আজ স্মৃতির বাতিঘর হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংগ্রহশালা।

মূল ফটকে টিকিট কেটে ভেতরে প্রবেশ করলেই রমাদের সেই একতলা বাড়ি। বাড়ির আঙিনায় প্রবেশপথে ‘মহানায়িকা সুচিত্রা সেন’ লেখা ফলক, আরেকটু সামনে গেলে শিল্পীর হাতে সুচিত্রা সেনের ম্যুরাল। বাড়ির মূল ফটকের সামনে লেখা ‘কিংবদন্তী মহানায়িকা সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংগ্রহশালা’। ভেতরে প্রবেশ করলে ঘরগুলোতে মহানায়িকার স্মৃতির স্মরণে তাদের বিভিন্ন পুরোনো ছবি, পোস্টার, স্মৃতিকথা। সুচিত্রার চলচ্চিত্রের নানা গানের সুরে ভেতরের উঠোনে প্রবেশ করলে বোঝা যায়, হয়ত কিছুই আগের মতো নেই। একসময় এ বাড়ি ঘিরেই ছিল রমাদের চাঁদের হাট। এ বাড়ির উঠোনের রোদেই খেলাধুলা করেছেন, শীতের দুপুরে হয়তো রোদ পোহাতেন এই মাটিতেই। একসময় বাড়ির আঙিনাজুড়ে ফুলের বাগান, পেয়ারা, আম, সুপারি গাছে ঘেরা ছিল। উঠোনের তুলসীতলায় সন্ধ্যায় মায়ের সঙ্গে প্রদীপ জ্বালাতেন রমা। বাড়ির সামনের নিচু, ছড়ানো পেয়ারা গাছটায় বসে পা দুলিয়ে দুলিয়ে পেয়ারা খেতেন। আজ না আছে রমা, না আছে সে গাছ।

সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংগ্রহশালা।

১৯৪৭ সালে আদিনাথ সেনের ছেলে দিবানাথ সেনের সঙ্গে বিয়ের পর এ বাড়ি ছেড়ে কলকাতা চলে যান রমা। ১৯৬০ সালে সুচিত্রার বাবা পাবনার বাড়িটি জেলা প্রশাসনের কাছে ভাড়া দিয়ে সপরিবারে কলকাতায় চলে যান। এ বাড়ির ইতিহাস নিয়ে ১৩৩ বছর পুরোনো অন্নদা গোবিন্দ লাইব্রেরির মহাসচিব আব্দুল মতীন খান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, ‘বলা যেতে পারে, তৎকালীন রাজনৈতিক পরিস্থিতিও হয়তো এক্ষেত্রে কিছুটা দায়ী। ১৯৬৫ সালে সুচিত্রা সেনদের বাড়িটি শত্রু সম্পত্তির অন্তর্ভুক্ত হয়। এরপর বাড়িটি প্রথমে প্রশাসন একজন ম্যাজিস্ট্রেটকে থাকার জন্য দিয়েছিল। পরবর্তীকালে বাড়িটি পরিত্যক্ত সম্পত্তি হয়ে পড়ে।’

একাত্তর পরবর্তীসময়ে দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের পাবনায় জামায়াত বা মৌলবাদী রাজনীতি বরাবর বেশ প্রভাবশালী ছিল। তাদেরই একজন বড় নেতা মওলানা আব্দুস সোবহান ছিলেন ইমাম গাজ্জালী ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা। ১৯৮৭ সালে জামায়াতে ইসলামি নিয়ন্ত্রিত ইমাম গাজ্জালী ট্রাস্ট বাড়িটি ইজারা নেয়। ১৯৯০ সালের দিকে বাড়িটি পুরোপুরি দখল হয়ে যায় এবং দখল টিকিয়ে রাখতে সেখানে একটি স্কুল গড়ে ওঠে।’

সুচিত্রার প্রতিবেশী মঞ্জুশ্রী চাকির বাড়ি।

২০০৯ সালে বাড়িটি দখল মুক্ত করতে ঐক্যবদ্ধ হন জেলার সাংস্কৃতিক কর্মী ও সুধীজনেরা। গঠিত হয় ‘সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদ’। বাড়িটি জামায়াতের কবল থেকে উদ্ধার করে সুচিত্রা সেনের নামে একটি স্মৃতি সংগ্রহশালার করার দাবিতে আন্দোলনে নামেন পরিষদের সদস্যরা। এ সময় সভা, সমাবেশ, মানববন্ধন ও চলচ্চিত্র উৎসবসহ বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে বৃহৎ আন্দোলন গড়ে তোলা হয়। ফলে বাধ্য হয়ে জেলা প্রশাসন ইমাম গাজ্জালী ট্রাষ্টের ইজারা বাতিল করে।

কিন্তু তাতেও দখল ছাড়তে রাজি হয়নি ট্রাস্ট কর্তৃপক্ষ। উচ্চ আদালতে বাড়িটির ওপর স্থিতিঅবস্থা চেয়ে রিট করে ট্রাষ্ট। এরপর দীর্ঘ আইনি জটিলতা শেষে ২০১৪ সালে জুলাই মাসে আদালত বাড়িটি দখলমুক্তির রায় দেন। ২০১৪ সালের ১৬ জুলাই দখলমুক্ত করে জেলা প্রশাসন বাড়িটি নিয়ন্ত্রণে নেয়। পরবর্তীকালে সেখানে স্বল্প পরিসরে সংগ্রহশালাটি তৈরি করা হয়।

অলিগলিতে মেয়েবেলা

পাবনার অলিগলিতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে সুচিত্রা সেনের স্মৃতির ঋণ। কখনও ইছামতির জলে ঝাঁপাঝাঁপি তো কখনো পদ্মার কাশবনে কাটানো সোনালী শৈশব — পুরো পাবনা শহর তার পদচারণায় মুখরিত ছিল। সুচিত্রা সেনের লেখাপড়ার হাতেখড়ি তার পিসি ও পাবনা গার্লস স্কুলের শিক্ষিকা বাণী দাশগুপ্তের কাছে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু ১৯৩৮ সালে মহাকালী পাঠশালায় (বর্তমান পাবনা টাউন গার্লস হাই স্কুল)। প্রাথমিক বিদ্যার পর ভর্তি হন পাবনা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে। নাচ-গানে ছিল অগাধ উৎসাহ, করতেন গ্লাস পেইন্টিংও।

সুচিত্রা সেনের এই নাচ-গানের উৎসাহের পেছনে ছিল আরেকটি বাড়ির অবদান। এবাড়ির পাশেই ছিল আরেকটি সংস্কৃতিমনা বাড়ি — যার বাসিন্দা ছিলেন মঞ্জুশ্রী চাকি; যিনি পরবর্তীকালে প্রখ্যাত নৃত্যশিল্পী হয়ে ওঠেন। মঞ্জুশ্রী ও সুচিত্রা ছিলেন সই। মঞ্জুশ্রীদের বাড়ির মস্ত বারান্দায় নাচের সঙ্গে চলত পাড়ার নাটকের মহড়া। তাদের কেশবতী রাজকন্যার নাট্যরূপ বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল। রাজকন্যার ভূমিকায় সুচিত্রা সেন, রাজপুত্র মঞ্জুশ্রী চাকি। স্কুলের যেকোনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেও ছিল সুচিত্রার সরব উপস্থিতি। স্কুলের বান্ধবীদের সঙ্গে মঞ্চস্থ করেছিলেন রবীন্দ্রনাথের পেটে খেলে পিঠে সয় এবং বসন্ত নাটক। বাংলা ইংরেজি উভয় ভাষায় আবৃত্তিতে ছিলেন পারদর্শী, স্কুলে আবৃত্তি করেছিলেন টমাস হুডের দ্য সং অফ শার্ট। একবার বাংলার লাটসাহেবের স্ত্রী আসায় তার সম্মানার্থে ঋতুরঙ্গ নাটকটি মঞ্চস্থ হয়; সেখানেও অভিনয় করেন সুচিত্রা।

পাবনার সংস্কৃতিচর্চার কেন্দ্রবিন্দু বনমালী ইনস্টিটিউটেও ছিল তার পদচারণা। বিভিন্ন নাটকে সু্যোগ পেলেই অভিনয় করতেন। বাবার হাত ধরে যেতেন অন্নদা-গোবিন্দ পাঠাগারে, পড়তেন নানান সিরিজের বই। সুচিত্রার বন্ধুদের বিভিন্ন স্মৃতিচারণায় তার ডানপিটে কিন্তু বন্ধুপ্রতীম স্বভাব সম্পর্কে জানা যায়। সেই যুগের পাবনায় সাইকেল চালিয়ে স্কুলে যেতেন, সুযোগ পেলেই সিনেমা দেখতে যেতেন অরোরা টকিজে (বীনাবাণী হল)। সময়ের সাথে আজ অরোরা টকিজও হারিয়ে গেছে, কিন্তু পাবনা আজও যেন সযত্নে ধারণ করে আছে তার বাড়ির মেয়ের স্মৃতি।

আক্ষেপ ও প্রত্যাশা

সুচিত্রা সেনের প্রতি তার শহর পাবনার কিছু দায়িত্বের জায়গাও রয়েছে, আবার রয়েছে যেন কিছু অভিমানও। অন্নদা গোবিন্দ লাইব্রেরির মহাসচিব আব্দুল মতীন খান বলেন, ‘আমাদের কিছু নিজস্ব দুঃখ রয়েছে। দুঃখ বলতে, আমাদের এখানে সুচিত্রা সেনের বাড়িটিকে ঘিরে মেগাপ্রকল্প এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। আমরা চাই এর দ্রুত বাস্তবায়ন হোক। আর কিছুটা অভিমানের সুরেই বলতে হয়, সুচিত্রা সেনের এই পাবনার বাড়িটি দখলমুক্ত করতে তার পরিবারের সহায়তা আমরা পাইনি। আর আমাদের পাবনা তো তার নিজের শৈশবের শহর, কিন্তু একাত্তরের সময়ও আলাদা করে পাবনার প্রতি কোন সহায়তা আমরা পাইনি।’

বনমালী শিল্পকলা কেন্দ্র। ছবি: সংগৃহীত

সুচিত্রা সেনের বাড়িটি দখলমুক্তির আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের তরফ থেকে সাধারণ সম্পাদক নরেশ মধু বলেন, ‘সুচিত্রা সেন একটি আইকন, একটি আন্দোলন, একটি চলচ্চিত্রের ইতিহাস। পাবনার সকল সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বের সক্রিয় অংশগ্রহণ, মিটিং, মিছিল, চলচ্চিত্র উৎসবের মাধ্যমে ও আইনি প্রক্রিয়ায় আমাদের দখলমুক্তির আন্দোলন সফল হয়। শিল্পকলা অ্যাকাডেমি ৭–৮ বছর আগে একটি মেগাপ্রকল্প প্রস্তাবনা দিয়েছিল; কিন্তু তা আজও বাস্তবায়ন হয়নি। আমরা চাই সুচিত্রা সেনকে ঘিরে পাবনায় একটি সাংস্কৃতিক চর্চার কেন্দ্র গড়ে উঠুক। আমরা চাই পাবনায় ‘সুচিত্রা সেন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব’ আয়োজন করতে, বড় করে তার জন্মোৎসব উদযাপন করতে।’

পাবনার স্মৃতিচারণ

সুচিত্রা সেনের মৃত্যুকালীন একটি ঘটনা জানা যায়। এক মধ্যবয়স্কা নারী দড়ি টপকে হাসপাতালের ভেতরে ঢোকার খুব চেষ্টা করছেন। কয়েকজন পুলিশকর্মী তাকে আটকাতে গেলে তিনি চিৎকার করে বলেন: ‘আমাকে আটকাচ্ছেন? জানেন আমি কে? বাংলাদেশে পাবনা গার্লস স্কুলে আমার মা এবং সুচিত্রা সেন একসঙ্গে পড়তেন। খুব ভালো বন্ধু ছিলেন দুজন। মা অসুস্থ বলে আসতে পারেননি। কিন্তু ওর [সুচিত্রা] জন্য একটা চিঠি পাঠিয়েছেন। বাংলাদেশ থেকে কাল রাতে এখানে এসেছি। মায়ের চিঠিটা ওর কাছে পৌঁছে দিতেই হবে।’

বোঝা গেল, উনি তখনও জানেন না যে, তার মায়ের বন্ধু আর নেই। খবরটি তাঁকে দিতেই ভীষণ ভেঙে পড়েন তিনি। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজন সাংবাদিক তাকে ছেঁকে ধরেন, সেই চিঠিটি দেখার জন্য। ‘এই চিঠি শুধু ওর জন্য। আমি আমার মায়ের চিঠি নিয়ে পাবলিসিটি চাই না,’ বলে ভিড়ে মিশে যান সেই নারী।

পাবনার মানুষ খুব নিভৃতে ভালোবেসে গেছেন সুচিত্রা সেনকে। যার প্রমাণ মেলে এখানে-সেখানে সুচিত্রা সেনের স্মৃতিচারণে। সুচিত্রা সেনের পৈত্রিকবাড়ির দখলমুক্তি আন্দোলনের ফসল আজকের স্মৃতি সংগ্রহশালা। পাবনার রূপকথার রাজকন্যার স্মরণে শহরের রূপকথা রোডে ২০১৬ সালে গড়ে উঠেছে ‘রূপকথার কাব্য’ রেস্টুরেন্ট। সেখানে রয়েছে সুচিত্রা সেনের পোর্ট্রেইট, সংগ্রহে রয়েছে তাকে ঘিরে নানা বই। পাবনা এডওয়ার্ড কলেজে রয়েছে ‘সুচিত্রা সেন ছাত্রীনিবাস’ নামক ছাত্রীহল। অন্নদা গোবিন্দ লাইব্রেরিতে পরম যত্নে সংগ্রহে আছে তাকে নিয়ে লেখা নানা বই, আর্টিকেল।

আমৃত্যু অন্তরাল বেছে নেওয়া আমাদের সুচিত্রা সেন যেন ঠিক চিরদিনের জন্য অন্তরাল বেছে নেওয়া হলিউড অভিনেত্রী গ্রেটা গার্বোর মতোই; তা-ই হয়তো তাকে বলা হয়ে থাকে ‘প্রাচ্যের গ্রেটা’। মৃত্যুশয্যায় নাকি শুনতে চেয়েছিলেন ‘খন্ডণ ভব বন্ধন’ গানটি। জাগতিক বন্ধন থেকে মুক্তি চাওয়া এই গানটি শুনেই আজকের দিনে চিরন্তন অন্তরালে হারিয়েছিলেন সুচিত্রা সেন। কিন্তু মানুষের ভেতরে তিনি চিরন্তন বেঁচে রইবেন সুচিত্রা সেন বা রমা হয়ে, স্মৃতিতে অম্লান হয়ে।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটেগরিতে আরো খবর
Japan Bangla Press © 2025. All Rights Reserved.
Built with care by Pixel Suggest