1. editor1@japanbanglapress.com : editor1 :
  2. japanbanglapress@japanbanglapress.com : japanbanglapress :
  3. mdzahidulislam1000@gmail.com : zahid :

অতিথি পাখির আগমন: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পাখি মেলা

  • আপডেটের সময় : রবিবার, ২১ জানুয়ারী, ২০২৪
সচেতনতা বাড়াতেই পাখিমেলার আয়োজন।
অদিতি পাল, জাবি

শীত এলেই দূর-দূরান্ত থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে আমাদের দেশে হাজির হয় কিছু আগন্তুক পাখি, যাদের আমরা আদর করে বলি অতিথি পাখি। অনেক প্রজাতিই বছরের নির্দিষ্ট সময় অন্য দেশে চলে যায়। আমাদের দেশের বেশির ভাগ অতিথি পাখি হিমালয় কিংবা হিমালয়ের ওপাশ থেকে আসে। উত্তর গোলার্ধে তাপমাত্রা যখন শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে আসে, লোকালয়, বন-জঙ্গল, গাছপালা বরফে ঢেকে যায়, তখন ওসব জায়গায় পাখিরও বসবাস, খাবার সংগ্রহ কঠিন হয়ে পড়ে। তাই ওই সময়টায় ওরা অপেক্ষাকৃত কম শীতের এলাকায় চলে যায়।

পাখিগুলো ইউরোপের বিভিন্ন দেশ, মঙ্গোলিয়া, চীন ও হিমালয় পর্বতমালার আশপাশের কিছু এলাকা থেকে একটু উষ্ণতা ও খাবারের আশায় দলবেঁধে আমাদের দেশের মতো কম ঠান্ডাপ্রবণ অঞ্চলের দিকে আসতে থাকে। তবে শীতের দৌরাত্ম্য কমে গেলে তারা ঠিকই তাদের পুরোনো ঠিকানায় চলে যেতে সক্ষম হয়।

এসব পাখি বসবাস, খাদ্য আহরণ ও বংশবিস্তারের জন্য অনুকূল এলাকাকে বেছে নেয়। ফলে টাঙ্গুয়ার হাওর, মহেশখালী, নিঝুমদ্বীপ, চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর, ভোলাহাট থেকে শুরু করে সিরাজগঞ্জ, পঞ্চগড়, খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, সিলেট, সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, বরিশালের চরাঞ্চলসহ সারাদেশ পাখির কিচিরমিচির শব্দে নতুন এক প্রাণ ফিরে পায়।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়: পাখির অভয়ারণ্য

অতিথি পাখিগুলোর এরকম একটি প্রিয় গন্তব্যস্থল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি)। বিভিন্ন প্রজাতির দেশি-বিদেশি পাখির অবাধ বিচরণের কারণে এক সময় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়কে ঘোষণা করা হয়েছিল পাখির অভয়ারণ্য হিসেবে।

এই মৌসুমেও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আতিথ্য গ্রহণ করেছে অনেক পাখি। গত বছরের ১৩ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়াইল্ড লাইফ রেসকিউ সেন্টারে প্রথম পাখি আসে। তবে এবার পাখির সংখ্যা অন্যান্যবারের চেয়ে অনেক কম।

জাবির প্রাণিবিদ্যা বিভাগের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এ বছর এখন পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিন হাজারের মতো পাখি এসেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বর সংলগ্ন লেকে ৯৯০টি পাতি সরালি, ওয়াইল্ড লাইফ রেসকিউ সেন্টারের বাইরের লেকে ৩৫০টি শামুক খোল ও সেন্টারের ভেতরের লেকে দুই হাজার পাতি সরালি দেখা গেছে বলে জানানো হয়। তবে গত কয়েক বছরের তুলনায় এ সংখ্যা প্রায় অর্ধেক কম।

শীতের সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির ক্যাম্পাসের জলাশয়গুলোতে পানি কমে যায়। আর এ জলাশয়গুলোর কচিপাতা, শামুক, ঝিনুকসহ কিছু উপাদান এসব পাখির প্রিয় খাবার। মার্চের শেষে এসব পাখি আবার নিজেদের মূল আবাস্থলে ফিরে যাবে।

কত জাতের পাখি আসে জাহাঙ্গীরনগরে?

১৯৮৬ সালে প্রথম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পরিযায়ী পাখি আসে। এখন পর্যন্ত প্রায় ২০৬ প্রজাতির পরিযায়ী পাখি ক্যাম্পাসের লেকগুলোতে দেখতে পাওয়া গিয়েছে বলে জানিয়েছে প্রাণিবিদ্যা বিভাগ। এগুলোর ১২৬টি দেশি প্রজাতির। বাকিগুলো বিদেশি প্রজাতি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকে যেসব অতিথি পাখি আসে তাদের বেশিরভাগই আবার হাঁসজাতীয়। এর মধ্যে সরালি, পচার্ড, ফ্লাইফেচার গার্গেনি, ছোট জিরিয়া, পান্তামুখী, পাতারি, কোম্বডাক, পাতারি হাঁস, জলকুক্কুট, খয়রা ও কাম পাখি অন্যতম। এছাড়া মানিকজোড়, কলাই, ছোট নগ, জলপিপি, নাকতা, খঞ্জনা চিতা টুপি, লাল গুড়গুটি, বামুনিয়া হাঁস, নর্দার্নপিনটেল ও কাস্তে চাড়া প্রভৃতি পাখিই বেশি দেখা যায় এ ক্যাম্পাসে।

বাংলাদেশে আসা বিভিন্ন প্রজাতির পাখির মধ্যে শুধু জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জলাশয়েই ২০–২৫ প্রজাতির পরিযায়ী পাখি চোখে পড়ে শীতের সময়ে।

যে কারণে ক্যাম্পাসে পাখি কমে যাচ্ছে

ক্যাম্পাসের জীববৈচিত্র্যের অন্যতম নিদর্শন হলো বিভিন্ন জাতের পাখি। পাখি প্রকৃতি ও পরিবেশের বন্ধু। পাখিরা শুধু জলাশয়ের সৌন্দর্যই বৃদ্ধি করে না বরং মানুষের মনের খোরাক বৃদ্ধি ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায়ও অবদান রাখে। তবে এ বছর বিশ্ববিদ্যালয়ে আগত পাখির সংখ্যা অনেক কম।

তার জন্য মূল কারণ হিসেবে অতিরিক্ত কোলাহলকেই দায়ী করেছেন পাখি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মো. কামরুল হাসান। তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় প্রতিদিন প্রচুর লোকজন আসছে। বিশেষ করে ছুটির দিনগুলোতে লোকজনের সংখ্যা কয়েক গুণ বেড়ে যায়। আর এই কোলাহলের মধ্যে পাখিরা লেকে বসবে না, সেটাই স্বাভাবিক।’

ক্যাম্পাসের ভেতর অতিরিক্ত জনসমাগম, লেক পাড়ে মানুষের বিশৃঙ্খলা, তাদের ব্যবহৃত খাবার মোড়ক, ঠোঙা ও পলিথিন জলাশয়ের পানিতে ফেলায় এসব জলাশয় পরিযায়ী পাখির বিচরণের অনুপযোগী হয়ে উঠছে। পানি দূষণ, লেকগুলোর নিয়মিত সংস্কার না হওয়ার ফলে পাখিরা তাদের অনুকূল আবাসস্থল না পেয়ে বিরক্ত হয়ে চলে যাচ্ছে।

এছাড়া জলাশয় সংকুচিত হওয়ায় পাখির খাবার শামুক-মাছও কমে যাচ্ছে। পাশাপাশি আলোক দূষণ, জলবায়ুর নেতিবাচক প্রভাবও পাখির সংখ্যা কমানোর জন্য দায়ী।

পাখি রক্ষায় পাখি মেলার আয়োজন

দেশে আইন আছে বটে, তবে অতিথি পাখির অভিবাসন নির্বিঘ্ন করতে তার চেয়েও দরকার জনসচেতনতা। সে লক্ষ্যেই পাখি সংরক্ষণ ও জনসচেতনতা বাড়াতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবারও ‘পাখ পাখালি দেশের রত্ন, আসুন সবাই করি যত্ন’ এই প্রতিপাদ্যকে ধারণ করে ২৩তম পাখি মেলার আয়োজন করেছে। এ মেলার উদ্দেশ্য পাখি সম্পর্কে দর্শনার্থীদের আরও আগ্রহী ও সচেতন করে তোলা।

২০০২ সাল থেকেই এ ধরনের মেলা আয়োজন করে আসছে পাখি নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলো। মেলায় পাখি দেখা প্রতিযোগিতা, পাখি বিষয়ক আলোকচিত্র প্রদর্শনী, শিশু-কিশোরদের জন্য পাখির ছবি আঁকা প্রতিযোগিতা, টেলিস্কোপ ও বাইনোকুলারস দিয়ে শিশু-কিশোরদের পাখি পর্যবেক্ষণ, পাখি বিষয়ক আলোকচিত্র প্রদর্শনী, আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় পাখি চেনা প্রতিযোগিতা এবং সকলের জন্য উন্মুক্ত পাখি বিষয়ক কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করে পাখির গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়।

এবারের মেলার উদ্বোধনী বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলম‌ বলেন, ‘ক্যাম্পাসে জনসমাগম কমাতে পারছি না। পাখিরা নিরিবিলি পরিবেশে থাকতে পছন্দ করে। আমরা সেই পরিবেশ তৈরি করতে পারছি না। আমরা একা চেষ্টা করলে হবে না।’

এজন্য সবাইকে সচেতন হবার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনারা সচেতন হোন, তাহলে পাখি আবারও বৃদ্ধি পাবে ক্যাম্পাসে। পাখি দেখতে আসবেন, তবে পাখিদের বিরক্ত করবেন না। সেই সঙ্গে আপনাদের সন্তানদেরকেও শেখাবেন পাখির গুরুত্ব সম্পর্কে।’

সকাল থেকেই দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে মেলাপ্রাঙ্গণ। মেলা দেখতে আসা এক দর্শনার্থী অনেকটা আক্ষেপের সুরে বলেন, ‘আমাদের কৌতুহল পাখিদের মধ্যে ভীতি ছড়িয়েছে। আমরা পাখিদের বিরক্ত করি, তাদের আবাস ধ্বংস করি। এতে প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। তাই আমাদের একটু সচেতনতাই পারে পাখিদের নিরাপদ আবাস নিশ্চিত করতে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী জানান, প্রথম বর্ষে ক্যাম্পাসের লেকগুলোতে অনেক পাখি আসতো। পাখিদের কিচিরমিচির শব্দে ঘুম ভাঙত। আর কয়েক বছরের ব্যবধানে এখন পরিবেশ পাল্টেছে। ‘পাখির তুলনায় দর্শনার্থীর সংখ্যাই বেশি দেখি এখন,’ বলেন তিনি।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটেগরিতে আরো খবর
Japan Bangla Press © 2023. All Rights Reserved.
Built with care by Pixel Suggest