মাহবুব জামান
আমার প্রথম ভোট দেয়ার সুযোগ হয়েছিল ১৯৭০ সালে, পূর্ব পাকিস্তানে।আমরা সৌভাগ্যবান প্রজন্ম। আমাদের ভোট শেষ পর্যন্ত স্বাধীনতা এনে দিয়েছিল।আমরা সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি।এটা ছিলো আমাদের দেশপ্রেমের অগ্নি পরীক্ষা এবং আমরা সফল হয়েছি।এটা আমাদের চির জীবনের গৌরব,চিরকালের প্রাপ্তি।
কিন্তু ,সবাই তো মুক্তিযুদ্ধ করে দেশপ্রেমের পরীক্ষা দিতে পারবে না, সেই সুযোগও নাই।
এখন তোমাদের সামনে দেশপ্রেমের পরীক্ষা দেয়ার আরো অনেক বড় সুযোগ।সম্পূর্ণ অন্যভাবে। সারা বিশ্ব আজ চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।সেই সুযোগ ব্যবহার করে তোমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাও-উন্নত দেশ গড়ে তোল।
আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছি,আজ তারা প্রায় সবাই সত্তরোর্ধ।পনেরো বিশ বছর পর আমরা কেউ থাকবো না।মুক্তিযুদ্ধের পতাকা তোমাদের হাতে দিয়ে যেতে চাই।
আমি যেহেতু তথ্য প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করি, তোমাদের সাথে আমার প্রতিদিনের যোগাযোগ। তোমরা জন সংখ্যার ৬২ শতাংশ ,ভোটারের ২৫ শতাংশই তোমরা।
তোমরা এখন এভারেস্ট জয় করছো, বিজ্ঞান-গণিত-রোবোটিকস-বিতর্কে তোমরা সম্মান নিয়ে আসছো, তোমরা ফ্রিল্যান্সার হিসাবে বিশ্বব্যাপী কাজ করে বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা এনে দিচ্ছ।তোমাদের উদ্যোগের ফলে শহর-বন্দর-গ্রামের অর্থনীতি বদলে গেছে,জীবন যাত্রা উন্নত হয়েছে। আমাদের দেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে।
আমরা জানি এ সব কিছু স্বত্বেও তোমাদের অনেকের মধ্যেই এবারের ভোটের ব্যাপারে অনীহা আছে।ভোট কাকে দেবো, দিয়ে কি লাভ, আদৌ দিতে পারবো কিনা- নানা প্রশ্ন।আমি জানি নৈতিকতার চরম অধ:পতন, শিক্ষা ব্যবস্থার ভঙ্গুর অবস্থা, অকল্পনীয় বৈষম্য, কয়েকজন ব্যবসায়ীর হাতে ব্যাংক,বীমা, সবধরনের ব্যবসায় কুক্ষিগত। এমনকি ইদানিং তোমাদের অংঙ্গনে অর্থাৎ তথ্য প্রযুক্তি খাতেও তারা হাত বাড়াচ্ছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ ও স্মার্ট বাংলাদেশের সৃজনশীল উদ্যোগে তারা ভাগ বসাতে চায়। যে সব কাজ তোমরা করছিলে এতদিন, এখন সেখানেও তারা ঢুকে পড়েছে।পারুক না পারুক কন্ট্রাক্ট সই করে ফেলছে দেদারসে।তারপর বদনাম হচ্ছে নব্য গড়ে ওঠা এই তথ্য প্রযুক্তি ইন্ডাস্ট্রির। সেজন্য সবাই ছুটে চলেছে বিদেশে। তোমাদের জন্য দেশে আরো কাজের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।
এত কিছুর পরও বলবো ভোটটা দিও প্লিজ। যাকে খুশি তাকে দাও। শুধু একটা অনুরোধ।মুক্তিযোদ্ধা অথবা মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে কাউকে দিয়ো।দূর্ভাগ্যবশতঃ একমাত্র আমাদের দেশেই স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করে অনেকেই বীরদর্পে রাজনীতি করে বেড়াচ্ছে।
তাদের সবারই জানা আছে, যেই পাকিস্তানের অংশ আমরা ছিলাম সেই পাকিস্তানে স্বাধীনতার ৭৫ বছরে একটি সরকারও আজ পর্যন্ত ৫ বছরের পূর্ণ মেয়াদ সম্পন্ন করতে পারেনি।সেটাই বাংলাদেশে করতে চেয়েছিল তারা।
কিন্তু,নানা ঝড়-ঝঞ্ঝা অতিক্রম করেও গত ত্রিশ বছরে অন্তত: ৬ টি সরকার পূর্ণ মেয়াদ সম্পন্ন করেছে।নানা সমস্যা স্বত্বেও গণতান্ত্রিক ধারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। একে আরো সংহত করতে হবে।
আমরা বুঝি, এবারের নির্বাচন নিয়ে নানা বিভ্রান্তি আছে।
অনেকে বয়কট করছে, কেউ কেউ নাশকতা করছে, অনেকে প্রতিহত করার আহবান জানাচ্ছে। কিন্তু,তোমরা যারা প্রথম বারের মত ভোটার হয়েছ,অবশ্যই ভোট দিতে যাবে।যাকে খুশি ভোট দাও, তবুও ভোটের অধিকার কাজে লাগাও।এটাই আনন্দ। তানাহলে পরে আফশোস করতে হবে।
আমাদের প্রথম ভোটের সময় অর্থাৎ ১৯৭০ সালের নির্বাচনের সময়ও এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানী শ্লোগান দিয়েছিলেন ” ভোটের বাক্সে লাথি মারো, বাংলাদেশ স্বাধীন কর “।
কিন্তু, নির্বাচন হোল, সারা পাকিস্তানে সংখ্যা গরিষ্ঠতা অর্জন করলো আওয়ামী লীগ।এর ফলেই আমাদের মুক্তিযুদ্ধ সারা বিশ্বের সমর্থন পেয়েছে।
আমার অনেক বন্ধু তখন ভোট বর্জন করেছিল।কিন্তু, তারাই আবার মুক্তিযুদ্ধ করেছে এবং সারা জীবন, এমনকি এখনও আফশোস করে।এখন বোঝে ভোটের গুরুত্ব, ভোটের আনন্দ।
তোমরাও জানোনা,এবার ভোট না দিলে পরে আফশোস করতে হবে কিনা।স্মার্ট বাংলাদেশের অভিযাত্রা হয়তো তোমাদের অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে যাবে।
তোমাদের উপর নির্ভর করছে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ। আমরা যুদ্ধ করে স্বাধীনতা এনে দিয়েছি-এখন তোমাদের হাতে পতাকা। গড়ে তোল এক উন্নত বাংলাদেশ।
জয় বাংলা !!!
Leave a Reply